নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুরে :
অষ্টম সদ্যজাত কন্যা হাত বদলের অভিযোগ উঠল খইরুল্লা চকে।বাচ্চার মা স্বীকার করে নেন তিনি বাচ্চাকে তারা পরিচিত দাদার কাছে দিয়ে এসেছেন। যা নিয়েই চাঞ্চল্য জেলা শহরে।যদিও সদ্যোজাত শিশুকে কেন অন্যের কাছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ সহ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং পঞ্চায়েত সদস্য। অন্যদিকে স্বাস্থ্য আধিকারিক এর মতে এভাবে বাচ্চা দেওয়া নেওয়া বেআইনি।যদি কেউ বাচ্চা নিতে চায় তার জন্য সরকারি পোর্টাল রয়েছে তাতে আবেদন করতে হয়।এভাবে অনৈতিকভাবে বাচ্চা নেওয়া যায় না।
ঘটনা ক্রমে জানা যায় মেদিনীপুর শহর থেকে কিছু দূরেই বর্তমানে ফুলপাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা শিবানী সিং ও অমর দাস।অমর দাস পেশায় মজুর এবং শিবানী সিং পরিচারিকার কাজ করে।অমর দাস মাস দুয়েক আগে সদর ব্লকের ফুলপাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়ায় আসেন।আর তারপরেই জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে একটি শিশু কন্যার জন্ম দেয় শিবানী সিং।শিবানী সিং ও অমরনাথের এটা অষ্টম শিশু।যার জন্ম হয়েছে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে।বাড়িতেই বাচ্চার জন্ম হয় বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী।সম্প্রতি গত দু-তিন দিন ধরেই বাচ্চা কোন খোঁজ খবর না পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা বাচ্চার মা কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানতে পারে বাচ্চা ঠিক হাত বদল হয়ে গিয়েছে।পাড়া প্রতিবেশীদের দাবি বাচ্চাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অন্যত্র।
যদিও বাচ্চার মায়ের দাবি কোন বাচ্চাকেই সে বিক্রি করেনি।বাচ্চাকে মানুষ করতে পারবে না বলেই পরিচিত দাদাকে দিয়ে দিয়েছে।এই ঘটনায় চাঞ্চল্য এলাকা জুড়ে।মেদিনীপুর সদর ব্লকের ফুলপাহাড়ি এলাকায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রত্যেকেই জানেন যে বাচ্চা যার বাড়িতে হয়েছিল সেই বাড়িতে নেই।বাচ্চা,হাত বদল হয়েছে।কিন্তু সবাই সব জেনেও কোনও উদ্যোগ নেয়নি বাচ্চা উদ্ধারের,উঠছে প্রশ্ন!স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রত্যেকটি দাবি পুরো বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত।স্থানীয় প্রশাসনকে সবকিছু জানিয়ে পুরো বিষয়টির তদন্ত চাইছেন স্থানীয় মানুষজনও।
এ বিষয়ে বাচ্চার মা শিবানী সিং কে জিজ্ঞাসাবাদ করালে তিনি বলেন কারো কাছে সাহায্য চাইনি বরং অষ্টম শিশু কন্যা হওয়ার পর আরামবাগের এক পাতানো দাদার কাছে দিয়ে এসেছি।যদিও তিনি বকলমে স্বীকার করেন দাদা তার নিজের না। বরং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ।তবে সদ্যোজাত ও বাচ্চাকে কেন দেওয়া হলো সে নিয়ে এড়িয়েছে শিবানী।যদিও কটাক্ষের সুরে শিবানী বলে এখানে প্রচুর বাচ্চা বেচাকেনা হয়।অনেকে বাচ্চা জঙ্গলে ফেলে দেয় সেগুলো নজর দেয় না প্রশাসন।
যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় রবি নন্দী বলেন ওই মহিলা এখানকার না ও অন্য কোথা থেকে এসে ভাড়ায় থাকে।ওর যখন বাচ্চা হয় আমরা সবাই দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু তার পর কয়েক দিনের মধ্যেই আর ওই বাচ্চাকে দেখতে পাইনি।ওর সদ্যজাত শিশুকে অন্য কোথাও বিক্রি করে দিয়েছে বলেই আমাদের মত।এ বিষয়ে প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত।স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য দীপালি রায় আচ্ছা যখন হয়েছিল তখন আমরা দেখে এসেছি এবং ছবিও তুলে এনেছি কিন্তু সম্প্রতি আর বাচ্চাটাকে দেখতে পাচ্ছি না। ওই মহিলা এখানকার না,ওর আধার কার্ড ভোটার কার্ড কিছুই নেই।আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনে জানাবো।অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মৌসুমী দত্ত বলেন আমরা বাচ্চাটিকে জন্ম হওয়ার সময় দেখে এসেছিলাম এবং ওই মহিলাকে বলেছিলাম বাচ্চাকে কোনভাবে কাউকে না দিতে।এখন কয়েকদিন বাচ্চাকে দেখতে পাচ্ছি না।ওই মহিলা পরিষ্কারভাবে কিছু বলছে না আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
যদিও এ বিষয়ে জেলা মুখ স্বাস্থ্য আধিকারিককে জিজ্ঞেস করা হলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য শংকর সড়ঙ্গী বলেন এইভাবে সদ্যোজাত শিশু কাউকে দেওয়া যায় না,এটা ক্রিমিনাল অফেন্স। বাচ্চা কাউকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি পোর্টাল রয়েছে সেখানে গিয়ে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে কিছু ফর্মালিটি রয়েছে সেগুলো পূরণ করে সরকারি হিসাবেই বাচ্চা দত্তক নেওয়া যায়।যদি ওই মহিলা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে পুলিশকে বলব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার।
সূত্র অনুযায়ী শেষ পাওয়া খবরে বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানা যায়।