নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
কলকাতার গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ৯ জন।এই বেআইনি-নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন থেকে রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে।অন্যদিকে,এই ঘটনার পরই মেদিনীপুর পৌরসভার একমাত্র কংগ্রেস কাউন্সিলর মহঃ সাইফুল ফেসবুকে বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন।সাইফুল তাতে লিখেছেন,যেভাবে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে মেদিনীপুরে,একদিন গার্ডেনরিচ হতে বাধ্য!যা পৌর পিতার সৌমেন খানের বদান্যতায়।
“যেভাবে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে মেদিনীপুরে,তাতে একদিন গার্ডেনরিচ হতে বাধ্য”এই ধরনের বিস্ফোরক মন্তব্য সোস্যাল মাধ্যমে পোস্ট করে প্রতিবাদ করলেন মেদিনীপুর পৌরসভারই এক কাউন্সিলর আর তাতে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মেদিনীপুর শহর ও জেলা জুড়ে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,সম্প্রতি গার্ডেনরিচে বহু তল ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অনেক জনের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু মানুষ।ভোটের মুখে সেই ঘটনায় মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।তবে এই ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার সঙ্গে এ বিষয়ে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে কারণ এবং এর পেছনে খোঁজা হচ্ছে অভিযুক্তদের। অন্যদিকে এই ঘটনার কয়েকদিন আগে মেদিনীপুর সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলা শহর মেদিনীপুরে বহুতল-নির্মাণ সম্পর্কে ‘কড়া’ পর্যবেক্ষণ রেখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বিধান নগর মাঠে নামার পরেই মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দিনের পর দিন বহুতল নির্মাণে।গত ৪ মার্চ সার্কিট হাউসের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানকে ডেকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন।
নির্দেশ দেন মেদিনীপুরে বহুতল নির্মানে লাগাম টানতে।সূত্র অনুযায়ী তিনি নাকি বলেছিলেন কোনোভাবেই মেদিনীপুর শহরে যেন ৬-৭ তলার বেশি বহুতলের অনুমতি না দেওয়া হয়। যদিও সেই ঘটনারই পরে নড়ে চড়ে বসে মেদিনীপুর পৌরসভা।তারা মৌখিক ভাবে একটি নির্দেশিকাও জারি করে বহুতল নির্মাণের মালিকদের।সেই নির্দেশিকার কয়েকদিন পরেই গার্ডেনরিচের ঘটনার পর ফের একবার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরে বেআইনি-নির্মাণের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এলো।খোদ মেদিনীপুর পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এজন্য দায়ী করলেন মেদিনীপুর পৌরপ্রধানকে।আর তিনি তার ফেসবুক পোস্টে রীতিমত পোস্ট করে দায়ী করে প্রতিবাদ জানালেন।
এ বিষয়ে এই মেদিনীপুর পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহম্মদ সাইফুল বলেন মেদিনীপুরে এক ও একাধিক বহুতল নির্মাণ হচ্ছে অবৈধভাবে।এরপর যখন অভিযোগ হয় তখন চেয়ারম্যান ডেকে পাঠান এবং তাদেরকে একটা পৌরসভার ফান্ডে টাকা দিয়ে বিষয়টা মিটিয়ে দেন।বহু সময় যে ওয়ার্ডে বহুতল নির্মাণ হচ্ছে সে ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা প্রতিবাদ করেন কিন্তু বন্ধ করার ক্ষমতা নেই।বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে কেবলমাত্র পৌরসভার চেয়ারম্যানের।ফলে তিনি কাউন্সিলারকে তোয়াক্কা না করেই সেইসব পারমিশন দেন এবং পৌরসভার ফান্ডের নামে টাকা তুলে সেগুলো পার্টি ফান্ডে খরচা করেন।এর জন্য পুরোপুরি দায়ী মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান।আমরা এই নিয়ে সদর মহকুমা শাসক কেও অভিযোগ করেছি।
অন্যদিকে গার্ডেনরিচের ঘটনার পরই মেদিনীপুরের পৌরপ্রধান সৌমেন খান জানিয়েছেন, মেদিনীপুরে যে সকল হাইরাইস বহুতল রয়েছে তাদের আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি।সমস্ত কিছু যদি ঠিকঠাক না থাকে,ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আমরা নোটিশের একটি কপি SDO পাঠিয়েছি।”
এবিষয়ে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেছেন, “এসব শুধু আই-ওয়াশ।আজ নয়, বহুদিন আগেই মেদিনীপুর শহরে বহুতল নির্মাণ নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি।শহরবাসীর সামনে বিষয়টি তুলে ধরেছি।এজন্য পুরসভা থেকে শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা সকলেই দায়ী।আসলে এই বহুতল নির্মাণের কাটমানি হয়তো পৌরপিতা,বিধায়ক হয়ে তৃণমূলের একেবারে শীর্ষ স্তরে বা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পৌঁছে যায়।তাই কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।মেদিনীপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক দেওয়াও ছিল শুধুমাত্র আই-ওয়াশ।