নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
নিজের পা নেই প্রতিবন্ধী 75% অথচ সেই প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে মানুষকে আইনি সাহায্যে সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে,বছর 41 এর অনির্বাণ।দিনে রাতে ঝড় জলে এই এই অভিযোগ লেখার বিনিময়ে জুটেছে দশ টাকা কুড়ি টাকা কখনো বা ধন্যবাদ।মেদিনীপুরের এ এক অন্য প্রতিবন্ধীর গল্প।
ঘটনা ক্রমে জানা যায় মেদিনীপুর শহরের বাড়মানিক পুরে মাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকে বছর 41এর এই অনির্বাণ বাসু।গত 2019 সালে বাবাকে হারিয়েছি অনির্বাণ।মা মনামী বাসু বর্তমানে হার্ট ও সুগারের রোগী।মায়ের ভাতার আর পেনশনের টাকায় চলছে কোনরকমে সংসার। মাধ্যমিক পাস এই অনির্বাণের কাজই হল দিনে ও রাতে থানায় উপস্থিত থেকে আইনি সাহায্য করা।এ আইনি সাহায্য কেমন?আসলে যারা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে নিজের অভিযোগ নিয়ে এই মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে অভিযোগ পত্র লিখব বা কাকে লিখব।তারা থানার বাইরে চক্কর কাটতে থাকে।আর তাই সেই অভিযোগ লেখাতে সাহায্য করছে এ অনির্বাণ।যখনই কাউকে দেখে বিপদে পড়েছে তখনই সে দৌড়ে গেছে।এখন এতটাই পরিচিত মুখ যে লোক রাতে ভিতে তাকে ফোন করে অভিযোগ লিখে দেওয়ার জন্য।আর তার বিনিময়ে জোটে কারো কাছে দশ টাকা তো কারো কাছে কুড়ি টাকা।কখনো কখনো বিনা মূল্যেই সে অভিযোগ পত্র লিখে দেয়।
এই ভাবেই বছর পর বছর ধরে বিনামূল্যে আইনি পরিষেবা দিয়ে আসছে এই প্রতিবন্ধী অনির্বাণ।যদিও একটা পা নেই এবং ওই পা না থাকায় একটি ক্যাম্প থেকে তাকে বিনামূল্যে একটি প্লাস্টিকের ফলস পা দেওয়া হয়।আর সেই প্লাস্টিক পায়ে ভর করেই নিজের সমস্যাকে দূরে ঠেলেই থানার পথে এই অনির্বাণ।তবে অনির্বাণের আক্ষেপ বহুবার আবেদন নিবেদন জানিয়েছি বিভিন্ন জন কে,জানানো হয়েছে পৌরসভা কে তবুও মানবিকতার খাতিরে একটা কাজ জুটেনি তার।যদিও এর আগে সে গ্রুপ ডি র একটি কাজ পেয়েছিল শিক্ষা দপ্তরে কিন্তু অভিযোগ কয়েকজন মুষ্টিমেয় নেতার চক্করে পড়ে তাকে সেই কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাতারাতি।তবে এইখানেই জীবন থেমে থাকেনি। লড়াই চলেছে দীর্ঘ আট বছর ধরে।এই ঝড় জলের রাতেও দিচ্ছে সে আইনি পরিষেবা।এরই সঙ্গে থানার পুলিশ আধিকারিকদের গাড়ি থানায় ঢোকানো বের করানোর ক্ষেত্রে সে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার। সেই গাড়িগুলোকে পাস করিয়ে দেওয়ার বদলে জুটেছে এই থানায় থাকার অনুমতি এবং সঙ্গে আইনি সহযোগিতার পথ।
এদিন অনির্বাণ বাসু এক সাক্ষাৎকারে জানায়,”বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারটা ভেসে যেতে বসেছিল।সেই সময় এই কাজের তাগিদে দৌড়ে আসা।মানুষ যা দেয় তাতেই সন্তুষ্টি।তবে অনেক গরীব দুঃখী মানুষ আছে যারা লিখতে পড়তে জানে না জানে না অভিযোগ জানানোর উপায়। তাদের সাহায্য করতে পেরে বেশ ভালই লাগে।এরই সঙ্গে পৌরসভা হাসপাতাল সহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষ অভিযোগ লিখতে না পারলে আমায় ফোন করে এবং আমি রাতে ভিতে দৌড়ে যায় তাদের অভিযোগ লেখার জন্য”।তবে জীবনের একটাই আক্ষেপ সরকার আমাকে একটা ছোট খাটো কাজের ব্যবস্থা করে দিল না।