নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
ছোট থেকে দৌড়ে যাচ্ছেন মানুষের কাছে শুধু সহযোগিতা ও সাহায্যের জন্য।নিজের জন্মদিনেও ভুললেন না সেই সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে। ৫২ তম জন্মদিনেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন সঙ্গে ট্রাই সাইকেল বিতরণ।অতিথিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।শেষ পর্যন্ত রক্ত দিলেন মোট ৫৫ জন রক্তদাতা।
তিনি নিজে কোন বড় রাজনৈতিক দলের এমএলএ এমপি নন,নন কোন সাংসদ অথবা তিনি কোন বড় কোটিপতি ব্যবসাদার ও নন অথচ দিনের পর দিন মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন মেদিনীপুর শহরের কর্ণেরগোলার বছর বাহান্নর অনয় মাইতি।জন্মদিনেও রক্তদান শিবির এবং ট্রাই সাইকেল এর মাধ্যমে পালন করলেন তার বিশেষ দিনটি।প্রসঙ্গত এই অনয় মাইতি হলেন মেদিনীপুর শহরের কর্নেল গোলার একজন সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত।ছোট থেকেই দানধ্যান এবং মানুষের অসময়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।একসময় এই ৯ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড বাসীদের সমস্যা শুনেই দৌড়ে গেছেন পাশে থেকেছেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু ওয়ার্ডে নয় শহরের ও কোথাও থেকে কোন সমস্যা বা মানুষ বিপদে পড়ে তাকে ফোন করলে তিনি ছুটে যান। তিনি ছুটে গেছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এবং ভিন্ন জেলায়।কখনো রক্তের প্রয়োজনে,কখনো বা ট্রাই সাইকেল নিয়ে অথবা মানুষকে ত্রিপল ও ছাতা দিয়ে।
মহামারী কোভিডের সময় যখন সবাই ঘরে বন্ধ করে নিয়েছে তখন তিনি মুখে মাস্ক এবং পিপিই কিট পরে দৌড়ে গেছেন মহামারী রোগে আক্রান্ত মানুষকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্টের জন্য।এরই পাশাপাশি কোরোনার সময় রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ,ট্রাফিক সহ সমাজ কর্মীদের সেই সময়ের দুর্মূল্য স্যানিটাইজার পৌঁছে দিয়েছেন।এছাড়া বিগত দিনে ওয়ার্ডে যখন জলমগ্ন পরিস্থিতি হয় তখন তিনি ত্রিপল পৌঁছে দিয়ে মাথার ছাদের ব্যবস্থা করেছেন।কখনো আবার খিচুড়ি তরকারি রান্না করে ওয়ার্ড বাসীর মুখে অন্ন তুলে দিয়ে পাশে থেকেছেন।এহেন অনয় মাইতি নিজের রক্ত দিয়েছেন ৭৫-৮০ বার কিন্তু বছর তিনেক আগে হঠাৎ হার্টের রোগ ধরা পড়ে তার।নিশ্চিত মৃত্যু মুখে গিয়েও সবার আশীর্বাদে ফিরে আসেন আবার এই মানব কল্যাণে। তাই বুকে পেসমেকার থাকা অবস্থায় সচেতনতার বার্তা দিতে তিনি পিছুপা হননি।এই ৫২ তম রক্তদান শিবিরে অনয় মাইতি ফ্রেন্ডস এন্ড লাভার্স ফর লাইফ এর পক্ষ থেকে এদিন এক মেগা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় শহরের কর্নেল গোলা ভগবতী স্কুলে।
যেখানে ৫৫ জন রক্তদাতা রীতিমতো রক্ত দিলেন উৎসাহের সঙ্গে।এরই সঙ্গে কেশপুরের কলা গ্রামের এক অসহায় দুস্থ প্রতিবন্ধী মানুষকে ট্রাই সাইকেল তুলে দেওয়া হল।সম্বর্ধনা জানানো হলো অসময়ে রক্তদান করা বিশেষ রক্তদাতা চয়ন আচার এবং সুদীপ খাড়া কে।এইদিন এই রক্তদান শিবিরে বিশিষ্ট অতিথিদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।ছিলেন এই ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৌরভ বসু,ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী,পৌর প্রতিনিধি মিতালী ব্যানার্জি,বিশিষ্ট সমাজ সেবী দুলাল দত্ত,শান্তনু চক্রবর্তী,বিশিষ্ট আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত,শংকর মাঝি,বিপদতারণ ঘোষ,ডক্টর ডিপি দোলোই, ইমদাদুল ইসলাম,শান্তনু দে জেলা পরিষদের সদস্য,তাপস সিনহা,সহ বহু শিক্ষক,শিক্ষিকা, অধ্যাপক ও গুণীজনেরা।
এ বিষয়ে অনয় মাইতি বলেন যতদিন বাঁচবো মানুষের পাশে থাকবো।মানুষের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন।জন্মদিন পালন সবাই করে তবে মুমূর্ষ রোগীর পাশে থেকে রক্ত পৌঁছে দেওয়া মহৎ কাজ আর দশটা লোক করতে এগিয়ে আসুক এই বার্তা দিতেই এই কর্মসূচি।
অন্যদিকে এই অনয় মাইতি ফ্রেন্ডস ক্লাবের দায়িত্বে থাকা সুরজিৎ সরকার বলেন আমরা চেয়েছিলাম বড় জমজমাট জন্মদিন পালন করার তিনি কিন্তু তিনি বলেছেন রক্তদানের শিবিরের মাধ্যমে তা পালন করতে। তাই মুমূর্ষ রোগীর রক্তের চাহিদা পূরণ করতেই এই রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে জন্মদিন পালন করা হলো আজ।