নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম:
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিনে দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশেষ করে ঝাড়গ্রাম জেলায় এবং সুবর্ণরেখার উভয় তীরেপালিত হয়”আভড়াপুণেই” বা অব্যূঢ়া পূর্ণিমা(অব্যুঢ়া ব্রত)।শুধু তাই নয় কর্মসূত্রে এই এলাকার যে সমস্ত মানুষ অন্যত্র বসবাস করেন তাঁদের অনেকের বাড়িতেও পালিত হয় এই আভড়া পুণেই।
মূলত পূর্ণিমা এবারে দুদিন,তাই কোথাও বুধবার আবার কোথাও বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে এই আভড়াপুণেই।এই লিঙ্গ বৈষম্যহীন লৌকিক উৎসব অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের জন্য।উৎকল সংস্কৃতি বা ওড়িশার রীতি প্রভাব এই উৎসবে লক্ষ্য করা যায়।ওড়িশার”কুমার পূর্ণিমা”র প্রভাব এই “আভড়াপুণেই” উৎসবে পরিলক্ষিত হয়।এই উৎসবে মা,ঠাকুমা,দিদিমারা অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের মঙ্গল কামনা করেন।তাঁদের অবিবাহিত সন্তানরা যাতে ভবিষ্যৎ এ ভালো জীবনসঙ্গী বা জীবন সংগিনী পায় সেই কামনা করা হয়।এদিন বাড়িতে পিঠে, পায়েস, লুচি, সুজি, ক্ষীর থেকে শুরু করে নানা নিরামিশ পদ তৈরী হয়।এদিন সারাদিন অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের”ভুজা” বা মুড়ি খাওয়া বারণ।মুড়ি খেলে এই ব্রত “বুড়ি যাওয়া”র (ডুবে যাওয়ার)হওয়ার ভয় থাকে।এদিন স্নান করে নতুন পোশাক বা নিদেন পক্ষে নতুন রেশম(ঘুনশী) কোমরে পরতে হয়।স্নানের পরে মায়েরা অবিবাহিত সন্তানের মঙ্গল কামনায় কপালে চন্দনের মঙ্গল টিকা পরিরে দেন।অনেক অবিবাহিত ছেলে মেয়েরা,যাদের বয়স একটু বেশি তারা অনেক ক্ষেত্রে নিজের ভবিষ্যৎ জীবনে কার্তিকের মতো স্বামী বা লক্ষ্মী প্রতিমার মতো স্ত্রী পাওয়ার লক্ষ্যে সারাদিন উপবাস রেখে ব্রত করেন।আবার কারো কারো মতে চাঁদের মতো সুন্দর জীবন সঙ্গী বা জীবন সঙ্গীনি পাওয়া এই ব্রতর লক্ষ্য।পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হওয়ার পর এই ব্রত শেষ হয় তুলসী গাছে জল ঢেলে।
ছেলে মেয়েদের মঙ্গল কামনায় অনেক ক্ষেত্রে মা তুলসী গাছে জল ঢালেন।ব্রত শেষে আজকাল তুলসী গাছে জল ঢালার রীতি প্রায় হারিয়ে গেছে।এই উৎসবে ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে সমান।এই নিয়ে আগের দিনে মা-ঠাকুমারা অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের আশীর্বাদ করে বলতেন”পো মেনেকার নিশ বাঢ়ু”অর্থাৎ ছেলেদের গোঁফ বাড়ুক আর বলতেন “ঝি মেনেকার আইস বাঢ়ু”অর্থাৎ মেয়েদের আয়ু বাড়ুক।এই বিষয়ে শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়া বলেন,”আজকের আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায়”আভড়াপুণেই”এর জৌলুষ বা আচার অনেকটা ফিকে।এটাই দুঃখের হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির শেকড়ের সংঙ্গে যুক্ত এই উৎসব”।