নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম :
বাঁকুড়া জেলার হাড়মাসড়া গ্রামের বাসিন্দা হেরম্বনাথ চক্রবর্তী একজন মানবদরদী শিক্ষক।মানুষ গড়ার কারিগর এই মানুষটির মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি কোমল হৃদয়।অসহায় মানুষের সমস্যার কথা শুনলেই মন কেঁদে উঠে তাঁর। মানুষের বিপদের দিনে নিজের সামর্থ্য মতো তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন বহুবার।এবারে তিনি মারণ রোগে আক্রান্ত ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জেলার তিন ক্ষুদে শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা করে মোট ত্রিশ হাজার টাকার এককালীন আর্থিক অনুদান পাঠিয়ে দিলেন তাদের নিজের নিজের ব্যাংক একাউন্টে।
প্রসঙ্গত বাঁকুড়া জেলার রাজগ্রামের বাসিন্দা অসীম শীটের একমাত্র কন্যা পাঁচ বছরের অহনা শীট থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত।বাঁকুড়া জেলার লক্ষ্মীসাগর অঞ্চলের বাসিন্দা সদানন্দ মাঝির একমাত্র সন্তান চার বছরের বিট্টু মাঝি এবং ঝাড়গ্রাম জেলার পুখুরিয়ার বাসিন্দা মনোজিৎ মাহাত’র একমাত্র সন্তান চার বছরের নিশান মাহাত ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত।এরা প্রত্যেকেই শ্রমজীবি পরিবারের সদস্য।এই বয়সের অন্যান্য শিশুদের প্রান চঞ্চলতায় যখন মুখরিত থাকে গৃহাঙ্গন তখন এই শিশুরা কঠিন এবং কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার।কিন্তু এই স্বপ্নকে সফল করতে প্রয়োজন প্রচুর অর্থের।ইতিমধ্যে বেশ কিছু হৃদয়বান মানুষ এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিবার গুলির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।ঝাড়গ্রাম জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বাঁকুড়া জেলার কিছু হৃদয়বান মানুষের মাধ্যমে পরিবারগুলির সাথে যোগাযোগ হেরম্ববাবুর।
খবর পেয়ে নিজের সাধ্যমত পরিবারগুলির পাশে গিয়ে দাঁড়ান বাঁকুড়ার কদমা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এই মানবদরদী শিক্ষক।এভাবেই শিক্ষকতার পাশাপাশি বছরভর বিভিন্ন জনহিতকর সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখে আপন জীবন সৌরভে অগনিত মানুষকে সুরভিত করে চলেছেন বছর চুয়াল্লিশের এই শিক্ষক।শিক্ষকতা তাঁর কাছে এক মহান ব্রত।তাই কখনোই শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি।কখনো উচ্চশিক্ষার জন্য দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে দিয়েছেন আর্থিক অনুদান,কখনো উন্নত চিকিৎসার জন্য মাযণ রোগে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন আর্থিক সাহায্যের হাত,কখনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষদের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন আর্থিক সাহায্যের হাত।কখনো অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত পরিবারকে দিয়েছেন আর্থিক অনুদান,করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজের জীবন উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন পঠন উপযোগী বিভিন্ন উপকরন।
স্কুল ছুট শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠের এই প্রাক্তন শিক্ষক।মানবদরদী এই শিক্ষক তাঁর বেতনের সিংহ ভাগ অংশই খরচ করেন মানব সেবায়।এতেই তাঁর আনন্দ।আর আগামী দিনেও মানবসেবার কাজে নিজেকে এই ভাবেই নিযুক্ত রাখতে চান বলে জানান হেরম্বনাথ চক্রবর্তী।