নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :
এক আসনে বসে দক্ষিণা কালীর পুজো দেখতে নায়েক বাড়িয়ে ভিড় জমান পাড়ার লোকেরা। ব্রিটিশ আমলের শুরু হওয়া সেই পুজো প্রায় দেড়শ বছরে পদার্পণ করল।মূলত সেই সময় মানুষকে এক জোট করতেই এই পুজো শুরু হয়েছিল নায়েক পরিবারে।
মেদিনীপুর পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ড নির্দল কাউন্সিলর বিশ্বেশ্বর নায়েক তার স্ত্রী কে নির্দল প্রার্থী করে জোর কনটেস্টে অবশেষে জয়ী হয়েছে তার স্ত্রী অর্পিতা রায় নায়েক।মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে শিক্ষিত একমাত্র নির্দল কাউন্সিলর যিনি কনটেস্ট করে জয়ী হয়েছেন।তার বাড়ির পুজো এ বছরে প্রায় দেড়শ বছরে পদার্পণ করল। প্রায় চার পুরুষ ধরে চলে আসা এই পুজোর বিশেষত্ব হলো শুরু থেকে সকাল পর্যন্ত এক আসনে বসে পূজো করা।যা দেখতে রীতিমতো ভিড় জমান পরিবারের সদস্য,সদস্যা ছাড়াও এলাকার মানুষজন।কথিত আছে ব্রিটিশদের সময় যাতে বাংলার বিপ্লবী এবং মানুষজন এক জায়গায় জড়ো না হতে না পারে তার জন্য কালীপুজো নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ কুখ্যাত নেতৃত্ব এবং সরকার।
সেই সময় এই নায়েক পরিবারে প্রমিলা বালা নায়েক এই পুজোর সূচনা করেন কোন পুরোহিত মশাই ব্রিটিশদের ভয়ে বাড়িতে পুজো করতে না আসায় তিনি নিজেও হাতে কালী মূর্তি গড়ে এই দক্ষিণা কালী পুজোর শুরুবাদ করেছিলেন। সেই পুজো দেখতে দেখতে তার ছেলে,তার ছেলে এভাবেই প্রায় চার পুরুষ ধরে চলে আসছে।যদিও বর্তমানে সেই পুজো করেন পুরোহিতরা।এই পুজোতে পশু বলি না হলেও চাল কুমড়া বলি হয়,হয় সন্ধি পুজো। ১০৮ টা প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো চলে গোটা রাত ধরে। যদিও এই কালীপুজোর কালী প্রতিমার উচ্চতা ৫ থেকে ৬ ফুটের মধ্যেই নির্ধারিত থাকে।পরের দিন কালিপুজো অমাবস্যা শেষ হলেই এই প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় পরিবারে সদস্যদের দ্বারা।পরিবার সূত্রে এও কথিত আছে যে মা স্বয়ং পুজো শেষে পুরোহিত এবং পরিবারের হাতে ফুল ছুঁড়ে দেন।আর যা নিয়ে সন্তুষ্টি মনে গোটা বছর মায়ের আগমনের অপেক্ষায় এই নায়েক পরিবারের সদস্যরা।শোনা যায় ওই আসনে বসলে মনের সিদ্ধি ঘটে,পূরণ হয় দীর্ঘদিনের চাওয়া পাওয়া মনস্কামনা।
নির্দল কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েকের স্বামী বিশ্বেশ্বর নায়েক বলেন আমাদের এই পুজো প্রপিতামহের হাত ধরে চলে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে।তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশরা কালীপুজো করতে দিতেন না।আর তার ভয়ে ব্রাহ্মণরা পুজো করতে আসতো না আমাদের বাড়িতে।তাই সেই সময় আমাদের পূর্বপুরুষ নিজ হাতে এই দক্ষিণা কালীর সূচনা করেন। সেই পুজো আজ প্রায় দেড়শ বছর ধরে চলে আসছে। আমাদের এক রাত্রির পূজো হয় এবং এক আসনে বসেই।যেখানে আসন থেকে ওঠার অবকাশ থাকে না। সারা বছরের সুখ শান্তি সমৃদ্ধি আমরা এক আসনে বসেই মায়ের কাছে চেয়ে ফেলি। বর্তমানে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার করেন এই নির্দল কাউন্সিলর।