নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :
দামামা বেজে গিয়েছে২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের।এবারে ৩৪ নং কেন্দ্র মেদিনীপুর লোকসভার প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল থেকে মেদিনীপুরের বিধানসভার বিধায়িকা তথা টলিউড অভিনেত্রী জুন মালিয়া।আর তিনি এবার ভোটের বিতরণী পার হতে চাইছেন জেলার দুই সেনাপতি সুজয় হাজরা ও সৌমেন খানের উপর ভরসা করে,এরকমই চিত্র মেদিনীপুরে।
মূলত মেদিনীপুর লোকসভা আসনে বিগত দিনে তৃণমূল থেকে সন্ধ্যা রায় জিতলেও তার বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ ছিল মেদিনীপুরের মানুষের।এরপর ২০১৯ এর নির্বাচনে সন্ধ্যা রায় কে সরিয়ে তার জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছিল সবং এর ভূমিপুত্র মানস রঞ্জন ভুঁইয়া কে।কিন্তু ২০১৯ এ তাকে প্রায় লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ।এরপর ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের বিধানসভা থেকে প্রার্থী করা হয় টলিউড সাকসেসফুল অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে।যদিও অল্প দিনে জুন মালিয়া ভোটের প্রচারে এসে মন জয় করেন মেদিনীপুরের মানুষের।আর সেই ভরসায় বিজেপির প্রার্থী সমিত দাস কে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।এরপরে মেদিনীপুরের পৌরসভার নির্বাচনে কংগ্রেস থেকে আসা সৌমেন খানকে চেয়ারম্যান করে পৌরসভা সাজাতে উদ্যোগী হন এই মেদিনীপুরের বিধায়িকা।
উল্লেখ্য ১৯৭২ সালে পশ্চিম বাংলার দার্জিলিং এ জন্ম এই অভিনেত্রীর।তার জীবনের প্রথম ছবি ১৯৯৬ সালের লাঠি।সেটা সুপার হিট হওয়ার পর একের পর এক সিনেমা করে গেছেন এই টলিউড অভিনেত্রী।নীল নির্জনে,হঠাৎ বৃষ্টি,আমার মায়ের শপথ,বং কানেকশন,তিন ইয়ারি কথা,জুলফিকার এর মতন সুপার ডুপার হিট সিনেমা।সম্প্রতি আবার প্রলয় তে ছোট একটি দৃশ্যের মধ্য দিয়ে অভিনয় করেও দর্শকদের মন কেড়েছে এই সুন্দরী।যদিও তার মেয়ে শিভাঙ্গিনি মালিয়া রীতিমতো মডেলিং করছে। এই সাকসেসফুল অভিনেত্রী মেদিনীপুরের উন্নয়নে যোগ দেন। তিনি তার প্রধান সেনাপতি পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানের সহযোগিতায় একের পর এক যানজট মুক্ত,হকার উচ্ছেদ,মা ক্যান্টিন,রাস্তা ঘাট তৈরি,জলের লাইন পাতা,রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা,একাধিক শৌচালয়,স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ড্রেন মেরামত সঙ্গে মনীষীদের সৌন্দর্যায়ন শেষে গান্ধি ঘাটে সন্ধ্যা আরতি মুকুটে নতুন পালক যোগ করে বিধায়িকা জুনের।জুনের পজিটিভ দিক গুলি হল ভদ্র সভ্য রাজনৈতিক বক্তব্য,কুকথা বর্জন,প্রার্থী কে পার্সোনাল আক্রমণ না করা,এরই সঙ্গে উন্নয়নের চেষ্টা।
কিন্তু এই এত কাজের পরেও নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।একদিকে মেদিনীপুরের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব আর অন্যদিকে জুন মালিয়া সহ পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।এক্ষেত্রে মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০ টি জিতলেও দশটা দশটা কাউন্সিলার নিয়ে ভাগ হয়ে পড়ে এই দুই গোষ্ঠী।ফলে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিয় সুজয় হাজরা প্রার্থী হবে না মমতার একান্ত অনুগত জুন মালিয়া প্রার্থী হবে তা নিয়েই জল্পনা শুরু হয়।যদিও সেই ধোঁয়াশা কাটিয়ে অবশেষে মমতার প্রথম পছন্দের তালিকায় জুন মালিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মেদিনীপুর ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে।অন্যদিকে দলীয় দ্বন্দ্ব দূর করে এই লোকসভায় জুন মালিয়াকে জেতানোর জন্য তড়িঘড়ি বৈঠক করে সকলকে নির্দেশ দেন রাজ্য নেতৃত্ব।
সূত্রে খবর,সেই বৈঠকে এই নির্দেশ ও দেওয়া হয় যে,জুন মালিয়া যদি লোকসভার আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হন সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে মেদিনীপুর বিধানসভা নির্বাচনের বাই ইলেকশনে টিকিট দেওয়া হবে সুজয় হাজরাকে।কিন্তু শর্ত একটাই জুন মালিয়ার হয়ে প্রচারে নামা এবং বিপুল ভোটে জিতিয়ে আনা এরকমই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয় মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি কে।ফলে একদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা অন্যদিকে মেদিনীপুর পৌরসভার রূপকার সৌমেন খানের কাঁধের উপর ভর করে রীতিমতো প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন এই অভিনেত্রী।আর তাতে মেদিনীপুর থেকে দাঁতন,খড়গপুর থেকে কেশিয়াড়িতে সাড়া পাচ্ছেন যথেষ্ট।অন্যদিকে সাংবাদিকদের তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রশ্ন এড়িয়েছেন এই দুই নেতৃত্ব।গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করলে খোদ মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলছেন এই দ্বন্দ্ব তৈরি করছে সাংবাদিকরা, আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্বই নেই।
এইটা গেল একটা অংশ,অন্যদিকে এই মেদিনীপুর লোকসভার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের সঙ্গে এবারের লড়াই হবে জুনের।যদিও সূত্র অনুযায়ী জানা যায় এই লোকসভায় বিজেপির সাংসদ বিজেপি সর্বভারতীয় নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।তাকে দল টিকিট দেবে বলে ১০০% কনফার্ম হয়ে গিয়েছিল।আর দিলীপকে নিয়েই কিছুটা ব্যাক ফুটে ছিল তৃণমূল।কারণ দিলীপ ঘোষ ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরের ৭ টি বিধানসভা থেকেই ভোটের লিড দিয়ে জয়ী হয়েছে।পাশাপাশি নিজের কাজের ইসতেহার প্রকাশ করেছেন।সেই দিলীপ ঘোষের জনপ্রিয়তাও ভালো এই অনগ্রসর সম্প্রদায় এবং বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে।সেই কারণেই তৃণমূলের মাথার দুশ্চিন্তা ছিল এই দিলীপ ঘোষ।কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই চিন্তা দূর করে তার জায়গায় এবার প্রার্থী করা হয়েছে অগ্নিমিত্রা পলকে।অগ্নিমিত্রাকে আসানসোল থেকে তুলে আনা হল মেদিনীপুরে।ফলে তাতে তৃণমূলের সুবিধে হল বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক মহল।তাই ভরসা যোগ্য দুই সেনাপতির কাঁধে ভর করে প্রচারের মাত্রা বাড়িয়েছেন অভিনেত্রী জুন।এখন ভোটের মার্জিন কতটা হয় সেটাই দেখার।যদিও কেউ কেউ প্রকাশ করে ফেলেছে কয়েক লক্ষ ভোটে জিতে মেদিনীপুর লোকসভা আসনে দখল করবে তৃণমূল।জয়ী হবেন এই টলিউডের সাকসেসফুল অভিনেত্রী বছর ৫২ র জুন মালিয়া।