আজ আর জমিদার বাড়ির কামান দাগা নেই কিন্তু বেহারাদের কাঁধে চড়ে পালকিতে করে মায়ের বিসর্জনের ট্রাডিশন বজায় মল্লিক বাড়ির পুজোর 300 বছরের পুজোর

Share

নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :

মেদিনীপুরের যতগুলি পুরানো পুজো রয়েছে তার মধ্যে এক ও অন্যতম হলো শহরের মধ্যস্থলে মল্লিক বাড়ির পুজো।আসলে এই জমিদার বাড়ির পুজো যে ট্রাডিশন অর্থাৎ ৩০ জন বেহারার কাঁধে চেপে পালকিতে করে বিসর্জন তা আজও বজায় রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম। বাকি সব ইতিহাসের সঙ্গে বিলুপ্ত হলেও এই ট্রাডিশন মেনে এখনো পূজিত হন মা এই মল্লিক বাড়িতে। কথিত আছে প্রায় ২৯০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো পূর্ব পুরুষ জন্মেঞ্জয় মল্লিকের হাত ধরে। তখন এত আধুনিকতার চকচকে ছিল না।রীতিমতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরে প্রতিপদ থেকেই মায়ের আরাধনায় মেতে উঠত এই জমিদার বাড়ির পরিবার পরিজনেরা।

শোনা যায় সেই সময় কামান দেগে এই পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘটাতেন মল্লিক বাড়ির সদস্যরা।এরপর চলত প্রতিদিন পুজোর রীতিনীতি মেনে আড়ম্বর ভাবে মায়ের আরাধনা। তৎকালীন গ্রাম্য প্রকৃতির সাবেকি প্রতিমাতেই মল্লিক বাড়ির পরিবার আর তুষ্ট হতেন।দিনভর হৈ হুল্লোড় যাগযজ্ঞ ঢাক ঢোল পিটিয়ে এই পুজো হতো।তবে বলি প্রথা হতো না এই মল্লিক বাড়ির জমিদারি পুজোর। অষ্টমী নবমীতে অন্নকুটের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সময়ে গ্রামবাসীদের খাওয়ানোর প্রথা ছিল।এছাড়াও বাড়ির লোকেরা সাজগোজ করে নানা রকম অনুষ্ঠানে উৎসবে অংশ নিতেন। সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের দিন ছিল বিসর্জনে।যেখানে বেহারা দিয়ে পালকিতে করে মা দুগ্গার বিসর্জন হত জলাশয়ে।আর তাতে রীতিমত পরিবারের সদস্যরা অংশ নিত এবং তা দেখতে ভিড় জমাতো হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুধারে। তবে সেই জৌলুস আজ আর নেই।একে একে জন্মেনজয় মল্লিকের চার ছেলে এবং তার ভাবি প্রজন্মরা সবাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রায় হাজারখানেক সদস্য এই মল্লিক বাড়ির।যা গোটা জেলা রাজ্যসহ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় রয়েছে।তবে এই পুজোর বিশেষ দিনে উপস্থিত হন একে একে সবাই।প্রতিবছর পালা করে একেকজনের ভাগে একেক বছরের পূজোর দায়িত্ব পড়ে।

আর এবারে দায়িত্ব পড়েছে প্রদীপ মল্লিক নামে এক মল্লিক পরিবারের সদস্যের। তিনি এবং তার পরিবার এবারের পূজো সাজিয়ে তুলেছেন।এখন চলছে এই মল্লিক বাড়ির বিভিন্ন পরিষ্কারের কাজ, রং করার কাজ,সেই সঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজ।এছাড়াও আনুষ্ঠানিক বিভিন্ন ধরনের রিহার্সাল সেরে ফেলছেন পরিবারের সদস্যসহ আর্টিস্টরা।পুজোর সময় তারা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানেও মেতে উঠবেন তারই প্রস্তুতি একপ্রকার সেরে ফেলছেন মল্লিক বাড়ির সদস্যরা।এখন অপেক্ষা দুর্গাপুজো।

এবছর পূজোর দায়িত্বে থাকা মল্লিক পরিবারের প্রদীপ মল্লিক বলেন আগের অনেক প্রথাই সময়ের সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে।আগের মত কামান দেগে জমিদার বাড়ির যে জৌলুস তা আর নেই।তবে পূজোর সময় পরিবারের সকল সদস্যদের একত্রিত হওয়ার নিয়ম বা প্রথা আজও বর্তমান।এখন পরিবারের হাজারেরও বেশি সদস্য এসে উপস্থিত হয় পুজোর এই কটা দিনে।পূজোর সূচনা হয় প্রতিপদ থেকেই। তিনটি ঘটে পুজো হয়।প্রতিমা সাবেকি রীতি মেনেই তৈরী হয়। মায়ের বিসর্জন হয় দশমীতেই। তবে এখনো পুরনো রীতিনীতি অনুযায়ী বেহারাদের কাঁধে চড়েই মায়ের বিসর্জন ঘটে পালকিতে।


Share

dnews.in