নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
:মা-বাবা পরিত্যক্ত হোম এর ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী হলেন একদিনের বিচারক।শুনলেন sc,st protection সম্বলিত বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা। রায় দিলেন বিচারকের ভূমিকায়।মৌসুমী জানাল এই ধরনের অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে তবে পাশে থেকেছে স্যারেরা। ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটি (DLSA )কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এই ধরনের মানুষদের সমাজের সামনে আনায় আমাদের মূল লক্ষ্য।
পুরো নাম মৌসুমী মুর্মু,পাঁচ বছর থেকেই মা-বাবা পরিত্যক্ত এবং তখন থেকেই হোমেই জীবন যাপন কাটাচ্ছে বর্তমানে একুশ বছর বয়সী নার্সিং ফাস্ট ইয়ার ছাত্রী এই মৌসুমী।তবে যে নিজের মা-বাবার কখনো সঙ্গ পায়নি সে আজ বিচার করলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিচারক হিসেবে,এরকমই ঘটনা মেদিনীপুর জেলা আদালতে।ঘটনা ক্রমে জানা যায় এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা আদালতে DLSA এর তরফে বসেছিল দ্বিতীয় লোক আদালত।যে লোক আদালতে স্থানীয় মানুষজন যাদের যাদের টাকা দিয়ে মামলা চালানোর মত সামর্থ্য নেই সেসব মানুষ এসেছিলেন নিজের মামলা নিষ্পত্তি করতে। এই দিন প্রায় ১৪ হাজার মামলা মোকদ্দমা উপস্থাপিত হয় এই লোক আদালতে।আর তাতেই বিচারকের ভূমিকায় দেখা গেল এই হোম বালিকা মৌসুমী মূর্মুকে। কে এই মৌসুমী মুর্মু ?ঘটনাক্রমে বলতে গিয়ে বলা যায় যখন তার পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা-বাবা কৃষ্ণনগরের একটি পরিত্যাক্ত জায়গায় ফেলে দিয়ে আসে তাদের মৌসুমীকে।এরপর ওখানকার পুলিশ মারফত মৌসুমীর ঠাঁই হয় হোমে।দীর্ঘ সাত বছর হোমে থাকা এবং লড়াই করার পর ১২ বছর যখন তার বয়স তখন সে মেদিনীপুর হোমে চলে আসে বদলি হয়ে।
এরপর মেদিনীপুর হোমে পড়াশুনা পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের পর নার্সিং ফার্স্ট ইয়ারে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া।এরই মধ্যে এই অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত এই মৌসুমী মূর্মু হঠাৎ্ই লেটার পান মেদিনীপুর জেলা আদালত থেকে। যেখানে তার এই DLSA এর লোক আদালতে ডাক পড়ে বিচারক হিসেবে।প্রথমে চিঠিটি পেয়ে কিছুটা হতভম্ব এবং ভীত হয়ে পড়ে এই মৌসুমী।কিন্তু পরে আদালতের সাহেবদের তত্ত্বাবধানে মৌসুমী চলে আসে মেদিনীপুর কোর্টে।এদিন সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত শতাধিক কেস সে দেখল নিজের হাতে,শুনলো অভাব অভিযোগ এবং দিলেন পরামর্শ।এরই সঙ্গে সমাধান করলেন দীর্ঘদিন চলে আসা মামলা মোকদ্দমার।তবে এদিন মৌসুমী SC ST Atrocities Act এর অধীন special Court এ বসে গাড়ি দুর্ঘটনার বীমা সংক্রান্ত মামলা গুলো খতিয়ে দেখেন।তবে অবসর টাইমে মৌসুমী গান শুনতে ভালোবাসে,পড়তে ভালোবাসে যে কোন বই। তার বড় হয়ে ইচ্ছে নার্সিং স্টাফ হওয়া। যা নিয়ে মেদিনীপুর কোর্টে রীতিমতো উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে এইদিন একান্ত সাক্ষাৎকারে মৌসুমী বলে,”কোর্ট থেকে চিঠি আসার পর কিছুটা ভয় ভীত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু স্যারদের তত্ত্বাবধানে এবং আশ্বাসের শেষ পর্যন্ত আমি লোক আদালতের বিচারক হয়ে উঠেছি।যা নিজেকে বড়ই আনন্দ লাগছে।আমার যেমন অভাব অভিযোগ ছিল কিন্তু আজকের লোকেদের অভাব অভিযোগ শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি এবং বিচারও করেছি।এই পাওনা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওনা।অবসর টাইমে আমি গান শুনি।ভবিষ্যতে ইচ্ছে হয়েছে নার্সিং স্টাফ হওয়া।
অন্যদিকে ডিএলএসএস সেক্রেটারি দিব্যেন্দু নাথ বলেন আমাদের কাজই হলো পিছিয়ে পড়া দরিদ্র এবং বিভিন্নভাবে বঞ্চিত মানুষদের সামনে তুলে আনা।সেই প্রচেষ্টায় আজকে আমরা মৌসুমী মূর্মুকে বিচারকের আসনে বসিয়েছিলাম।সে বিভিন্ন মামলা শুনেছে এবং তার রায় দিয়েছে।এই ধরনের মানুষজন যত সমাজের কাজে এগিয়ে আসবে তত সমাজের পক্ষে মঙ্গল কর।আমাদের এই দিন মোট ১৪ হাজার মামলা উঠেছিল এই লোক আদালতে,যার বেশিরভাগটাই সমাধান হয়েছে।