নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :
কংসাবতী নদীতে ভেসে উঠল এক যুবকের দেহ।ঘটনা ক্রমে জানা যায় সদ্য আইটিআই পাস করে চেন্নাইতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও পেয়ে ছিল বছর ২০-র যুবক উদয়। সঙ্গে চলছিল স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও।কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মকরামপুরের কোতাইগড়ে নিজের বাড়িতে এসেছিল পিতৃ-হীন উদয়। ছুটির মধ্যেই বুধবার খড়্গপুর গ্রামীণের গোকুলপুরে মামা বাড়িতে এসেছিল সে।সেখান থেকেই গিয়েছিল নিজের স্কুল গোকুলপুর বিধানচন্দ্র বিদ্যাভবনে।মামা বাড়িতে থেকে পঞ্চম-দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছিল উদয় দাস।
প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি পাওয়ার খবর দেওয়া এবং তাঁদের আশীর্বাদ নেওয়াই ছিল তারপ্রিয়’ প্রাক্তন ছাত্রকে কাছে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাত করে,
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ স্কুল থেকে বেরিয়ে ছিল হাসিখুশি, মিশুকে এই মেধাবী যুবক। তারপর থেকেই ‘নিখোঁজ’ ছিল উদয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার নারায়ণগড় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। ‘বেশিক্ষণ’ অবশ্য খোঁজাখুঁজি করতে হয়নি।
রাত্রি ৮টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের উদূরে আমতলা ঘাটে যুবকের নিথর দেহ ভেসে ওঠে। স্থানীয়রা খবর দেওয়ার পর, কোতোয়ালি থানার তরফে দেহ উদ্ধার করে রাত্রি ১১টা নাগাদ পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
গভীর রাতেই খবর পেয়ে মেদিনীপুর শহরে পৌঁছন উদয়ের আত্মীয়-পরিজন সহ গোকুলপুর স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। ওই স্কুলেরই শিক্ষক তথা মেদিনীপুর শহরের একজন সুপরিচিত সমাজকর্মী সম্বরন সামন্ত জানান, “অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছিল উদয়। তাই গোকুলপুরে, নিজের মামা বাড়িতেই মানুষ হয়েছে। বাড়িতে মা আর বছর ১৬-র বোন আছে। আমাদের স্কুলের সকলের প্রিয় ছাত্র ছিল উদয়। আইটিআই পাস করে, প্রথম ক্যাম্পাসিংয়েই চাকরি পেয়েছিল ও। চেন্নাই যাওয়ার পর থেকে নিয়মিত ফোনেও কথা হতো। বাড়িতে পৌঁছেই ছুটে এসেছিল স্কুলে, আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। খুশি মনে স্কুল থেকে বেরোয়। তারপর আর ভাবতে পারছিনা, কোথা থেকে কি হয়ে গেল! ওর মানিপার্স আর পকেটে থাকা কিছু জিনিসপত্র দেখে ওকে সনাক্ত করি আমরাই
পরিবার, বন্ধুবান্ধব সহ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, গোকুলপুর গ্রামেরই এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর সঙ্গে উদয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি বছর ১৯’র ওই তরুণীর পরিবারের তরফে নাকি তার বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করা হয়েছিল। এনিয়েই কোনও অশান্তির কারণে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার নাকি ওই তরুণী আত্মহত্যা করে! বুধবার দুপুরে সেই খবর পাওয়ার পরই উদয় কংসাবতী নদীতে ঝাঁপ দেয় বলে বিভিন্ন সূত্রের অনুমান। তবে, ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে পুলিশের তরফে। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে জেলা জুড়ে। শোকে কাতর উদয়ের পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে তার ‘প্রিয়’ গোকুলপুর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা!