নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
বর্তমান প্রজন্ম মোবাইলে আসক্ত তাই জেলার দেওয়ালি ঘর হারিয়েছে বাংলা আর বাঙালি।এই পরিস্থিতিতে হাতে তৈরি রেডিমেড দেওয়ালি ঘর তৈরি করে বিক্রি করে হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ মুছে দিয়েছে বছর 32 এর শেখ সমজান।একসময়ের বিলুপ্ত প্রাপ্ত এই দেওয়ালি ঘর থার্মোকলের তৈরি করে বিক্রি করছে দেদার।কিনতে রীতিমতো ভিড় জমিয়েছে ক্রেতারা।
বাঁকুড়া পুরুলিয়ার মত জঙ্গলমহল নামেই পরিচিত আর এই মেদিনীপুরে কালীপুজোর সময় বিশেষ বিখ্যাত হল মাটির তৈরি করার দেওয়ালি ঘর।মূলত কালীপুজোর সপ্তাহ আগে থেকেই মাটি এনে ইট দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ালি ঘর তৈরি করা করা হয়।সেই দোতলা,তিনতলা দেওয়ালি ঘর তৈরি করে তাতে রং দিয়ে ফুটিয়ে বর্ণময় গড়ে তোলা হয়। এরপর এই কালী পূজা এবং তার পরের দিন দেওয়ালি পুতুল সাজিয়ে রঙিন করে তোলা হওয়ায় এই মেদিনীপুর সহ এই রাজ্যে।এরকমই উৎসবে।দেওয়ালি পুতুলের সঙ্গে দেওয়ালি ঘরের চাহিদা রয়েছে এই মেদিনীপুর জুড়ে।কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সে দেওয়ালি ঘর ও দেওয়ালী পুতুলের রমরমা।যদিও এখনো দেওয়ালি পুতুল বেশ কিছু জায়গায় বিক্রি হয়।তবে দেওয়ালি ঘরের তৈরি করা সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। কারণ আগের মতন কেউ আর খাটতে চায় না। এখন কারের ছোট ও ইয়ং প্রজন্ম মোবাইলে আসক্ত। ফলে সেই হাতে তৈরি করা দেওয়ালি ঘর হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই নস্টালজিয়া দেওয়ালি ঘর বাঁচিয়ে রেখেছে মেদিনীপুরের সমজান।
মেদিনীপুর শহরের গোলকুয়া চকের বাসিন্দা শেখ সমজান পেশায় একজন আর্টিস্ট। বিভিন্ন সময় অংকনের পাশাপাশি থিমের মন্ডপ তৈরি করে সে।ছোট থেকে একসঙ্গে একই পাড়াতে বড় হয়ে ওঠা সমজান অনুভব করেছে এই নস্টালজিয়া দেওয়ালি ঘরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।তাই গত বছর 4 চারেক ধরে সে থার্মোকলের দেওয়ালি ঘর তৈরি করে তাতে রং করে বিক্রি করছে বাজারে।আর যার চাহিদাও প্রচুর রয়েছে গোটা মেদিনীপুর জুড়ে।আর এইভাবেই নস্টালজিয়া সেই দেওয়ালে ঘর বাঁচিয়ে রেখেছে বছর 32 মুসলিম যুবক সমজান।এবছর তার দেওয়ালি ঘর তুলনামূলক কম বিক্রি হলেও গত বছর ব্যাপক পরিমাণে বিক্রি হয়েছে।তার আগের বছরও বিক্রির পরিমাণ সংখ্যাটা ছিল বেশি। এবারে বিশেষ আকর্ষণ ছিল কেদারনাথ মন্দিরের আদলে দেওয়ালি ঘর।আর একদম হাতে তৈরি দেওয়ালি ঘর কিনতে এসে খুশি হয়েছে ক্রেতারা।এই দেওয়ালি ঘরের দাম রাখা হয়েছে 300 টাকা থেকে 900 টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে শেখ সমজান বলে,”ছোট থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি একই পাড়াতে।এখানে হিন্দু-মুসলিম বলে কোন ভেদাভেদ নেই।কিন্তু দিনের পর দিন দেখেছি ছোট থেকে গড়ে ওঠা সে দেওয়ালি ঘর বর্তমানে আর কেউ বানাচ্ছে না।তাই সেই হারিয়ে যাওয়া সেই নস্টালজিয়া দেওয়ালি ঘর কে তুলে ধরতেই বছর চারেক ধরে এই থার্মোকলের দেওয়ালি ঘর আমি তৈরি করি।মেদিনীপুরের মানুষ ব্যাপকভাবে পছন্দ করেছে সে দেওয়ালি ঘর।এ বছরও অনেকগুলি বানিয়েছি এবং বাজার ভালো।
দেওয়ালি ঘর কিনতে আসা অজয় ভকত নামে এক ক্রেতা বলেন শৈশবকালে এই দেওয়ালি ঘর বানাতাম কিন্তু এখনকারের প্রজন্ম আর এত বেশি পরিশ্রম করতে চাই না।তাই রেডিমেড দেওয়ালি কেনার ঝোঁক আমাদের মধ্যে বেড়েছে এবং হাতের কাছে পেয়ে কিনে ফেলেছি।