নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর: মেদিনীপুরেও এ যেন ঠিক উল্টো পুরান শুরু হয়েছে।একদিকে ফাইভ-জি দাপটে হাতের কাছে এসেছে পৃথিবী আর অন্যদিকে জঙ্গলমহলে হারাচ্ছে নতুন শিশুদের ভবিষ্যৎ।কারণ পরকীয়ায় ঝোঁক এবং মোবাইলে আসক্তির দরুন ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে মেদিনীপুরে।আর তাতেই চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে আইনজীবীদের।আগামী ভবিষ্যতে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করল মেদিনীপুরের আইনজীবীরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর তথা এই কিছুটা জঙ্গল মহল অধ্যুষিত মেদিনীপুরে এবার ডিভোর্স নিয়ে আতঙ্কিত আইনজীবীরা।প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় বর্তমানে মোট ১৫ টি বিধানসভা নিয়ে মেদিনীপুর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা।যার বেশ কিছু অংশ এখনো জঙ্গলমহল রয়েছে এবং বেশিরভাগ বিধানসভা যেমন শালবনি,গড়বেতা,এই পাশে কেশিয়াড়ী,দাঁতন, ডেবরা,পিংলা সহ সবং এ এই অনগ্রসর আদিবাসী,মাহাতো,কুড়মি,সাঁওতাল শ্রেণীর বসবাস।এই জেলায় সাতটি পৌরসভাও রয়েছে তবে তার মধ্য বেশিরভাগ বস্তি এলাকার মানুষজন।একসময় অবিভক্ত মেদিনীপুর যেমন পূর্ব মেদিনীপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম নিয়ে একটি জেলা ছিল।সেই সময় যার লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ৭১ লক্ষ। আজ থেকে বছর কুড়ি আগে বছরে মাত্র দেড়শ থেকে ২০০ টি ডিভোর্সের বা mat-Suit কেস হতো জেলা জর্জ কোর্টে।কিন্তু বর্তমানে তিনটে জেলা আলাদা আলাদা এবং তিনটে জেলার প্রায় তিনটে থেকে ছটি কোর্ট আলাদা হয়েছে।
কিন্তু এখন বর্তমানে বছরে দেখা যায় Mat-suit বা বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা প্রায় এক একটি কোর্টে ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার করে।ঝাড়গ্রামে প্রায় হাজার খানেক আর তাতেই চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে আইনজীবীদের মধ্যে।কেননা এই বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে বাবা-মায়ের থেকে সমস্যায় পড়ছে তার সন্তানেরা।তারা পাচ্ছে না তাদের একসঙ্গে থাকার শৈশব এবং স্নেহ ভালবাসা এবং নিজেদের মধ্যে দায়িত্ববোধ।আগামী দিনে সেই বাচ্চার ভবিষ্যৎ বাচ্চার মানসিকতা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।যদিও এই নিয়ে ভাবছে না কেউই।কারণ ডিভোর্স তথা এ বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা যদিও শিক্ষিতদের মধ্যে বেশি বলে দাবি আইনজীবীদের ।সেই তুলনায় গরিব সাঁওতাল,আদিবাসীদের মধ্যে ডিভোর্সের সংখ্যা কম।তারা শত ঝগড়া ঝাঁটির পরেও সংসারকে কেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।এরই সঙ্গে আরেকটি আতঙ্কের বিষয় সেটি হল এখন একবার ডিভোর্স হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে এবং দ্বিতীয়বার ডিভোর্স হওয়ার পর তৃতীয় বিয়ে,ফলে বাড়ছে শিশুদের বাবা-মার সংখ্যা।
একসময়ের জেনারেশন ছিল যখন যার শিশুর বাবা-মা একজন করে ছিল।কিন্তু আগামী প্রজন্ম হয়তো সেটা আর পাবে না।ফলে আগামী দিনে শিশুদের টাকা-পয়সা সবই থাকবে,থাকবে না-স্নেহ ভালোবাসা,দায়িত্ব এবং সংসারের প্রয়োজনীয়তা।সমাজ এক অন্ধকারে চলে যাবে বলে আশঙ্কা আইনজীবীদের।যদিও ওই বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হিসেবে দায় এবং দায়িত্ব তারা চাপিয়েছেন সম্পূর্ণরূপে মোবাইল এবং শিক্ষিত মানুষের ধৈর্যের উপর।এক হচ্ছে প্রত্যেকের হাতে নিজ নিজ মোবাইলে আলাদা আলাদা কথাবার্তা নিজেদের সময় না দেওয়া আর সেইসঙ্গে সামান্য খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়েও বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন।যার ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে বলেই মনে করছে তারা।তাদের আবেদন এও রয়েছে,”এই বিষয়ে যদি আগামী দিনের রাষ্ট্র অথবা সংবিধান অথবা এই ন্যায়ালয় থেকে নতুন নতুন ভাবনা চিন্তা করে সচেতনতা না গড়ে তোলা যায় তাহলে অকালে হারিয়ে যাবে এই শিশুদের ভবিষ্যৎ এবং সমাজ ব্যবস্থা।
এই বিষয়ে মেদিনীপুর জর্জকোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ২৫ বছরের অভিজ্ঞতায় গৌতম মল্লিক বলেন সাধারণত এই বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন গরিবদের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা বেশি।সামান্য ব্যাপার নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন আর তাতেই হারাচ্ছে বাচ্চার ভবিষ্যৎ।এরই সঙ্গে উঁকি পাড়ছে পরকীয়া এবং একটি বিচ্ছেদ থেকে দ্বিতীয় বিয়ে,দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিয়ে।এখনের প্রজন্ম বিয়ে কে ছেলে খেলা ভাবছে।যার ফলে একদিন হারিয়ে যাবে এই সুন্দর সমাজব্যবস্থায় এই “বিয়ে” নামক একটি প্রতিষ্ঠানের।এ বিষয়ে চিন্তার বিষয় হলো এই মোবাইল এবং মানুষের ধৈর্য শক্তি।রাষ্ট্রকে এই শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং বাবা-মাকে বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে দূরে রাখতে এখন থেকেই শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
এ বিষয়ে আরেক আইনজীবী রূপেশ রায় বলেন এই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল শেষ করে দিয়েছে গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে।কারণ এর ভালো দিকের সঙ্গে খারাপ দিকটাই বেশি।মানুষ হারাচ্ছে ধৈর্য সহ্য শক্তি।শিক্ষিত মানুষরা অল্প আঘাত পেতেই দৌড়ে আসছেন বিবাহ বিচ্ছেদ আবেদনে এবং মোটা টাকা নিয়ে আবার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় রেজিস্ট্রেশন করছেন,আবার বিবাহ বিচ্ছেদ করছেন।এর ফলে এই জঙ্গল মহল মেদিনীপুরে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানকে মান্যতা দেবার প্রয়োজনীয়তা কমেছে। ফলে বাড়ছে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতে এবং নষ্ট হচ্ছে বেঁচে থাকার সুন্দর পরিবেশ।