নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
এক ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া পূজো যা আজও স্বগর্বে আড়ম্বর ভাবে বজায় রেখেছে নায়েক পরিবার।এক আসনে বসে দক্ষিণা কালীর পুজো দেখতে নায়েক বাড়িয়ে ভিড় জমান পাড়ার লোকেরা।ব্রিটিশ আমলের শুরু হওয়া সেই পুজো প্রায় 151 বছরে পদার্পণ করল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিপ্লবী শহর নামে পরিচিত শুধু তা নয় দেব দেবীর মাহাত্ম্য নিয়েও পরিচিত এই জেলা। আর কালীপুজো রয়েছে বেশ কিছু পুরানো এই জেলাতে। এরকমই এক ব্রিটিশ আমলের কালী পূজো হলো নায়েক পরিবারের পুজো।মেদিনীপুর পৌরসভার 14 নং ওয়ার্ড প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বেশ্বর নায়েক।তিনি তার পূর্বপুরুষ ধরে চলে আসা পুজো আজও আড়ম্বর ভাবেই পালন করছেন।এই পুজোর বিশেষত্ব হলো এক আসনে বসে পূজো করা।যা দেখতে রীতিমতো ভিড় জমান পরিবারের সদস্য,সদস্যা ছাড়াও এলাকার মানুষজন।কথিত আছে ব্রিটিশদের সময় যাতে বাংলার বিপ্লবী মানুষজন এক জায়গায় জড়ো না হতে না পারে তার জন্য কালীপুজো নিষিদ্ধ করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।সেই সময় এই নায়েক পরিবারে প্রমিলা বালা নায়েক এই পুজোর সূচনা করেন।সেই সময় কোন পুরোহিত মশাই ব্রিটিশদের ভয়ে বাড়িতে পুজো করতে না আসায় তিনি নিজেও হাতে কালী মূর্তি গড়ে এই দক্ষিণা কালী পুজোর শুরু করেছিলেন।
সেই পুজো দেখতে দেখতে তার ছেলে,ছেলের ছেলে এভাবেই প্রায় চার পুরুষ ধরে চলে আসছে।যদিও বর্তমানে সেই পুজো করেন পুরোহিতরা।এই পুজোতে পশু বলি না হলেও চাল কুমড়া বলি হয়,হয় সন্ধি পুজো।108 টা প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো চলে গোটা রাত ধরে।যদিও পরিবারে কালী প্রতিমার উচ্চতা 5 থেকে 6 ফুটের মধ্যেই নির্ধারিত থাকে।পরের দিন কালিপুজো অমাবস্যা শেষ হলেই এই প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় পরিবারে সদস্যদের দ্বারা।পরিবার সূত্রে এও কথিত আছে যে মা স্বয়ং পুজো শেষে পুরোহিত এবং পরিবারের হাতে ফুল ছুঁড়ে দেন।আর যা নিয়ে সন্তুষ্টি মনে গোটা বছর মায়ের আগমনের অপেক্ষায় এই নায়েক পরিবারের সদস্যরা।শোনা যায় ওই আসনে বসলে মনের সিদ্ধি ঘটে,পূরণ হয় দীর্ঘদিনের চাওয়া পাওয়া মনস্কামনা।
এই বিষয়ে বিশ্বেশ্বর নায়েক বলেন,”আমাদের পুজোতে যতক্ষণ না মা ফুল ছুঁড়ে দেন ততক্ষণ আমরা উঠি না।
আমাদের এই পুজো প্রপিতামহের হাত ধরে চলে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে।তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশরা কালীপুজো করতে দিতেন না।আর তার ভয়ে ব্রাহ্মণরা পুজো করতে আসতো না আমাদের বাড়িতে।তাই সেই সময় আমাদের পূর্বপুরুষ নিজ হাতে এই দক্ষিণা কালীর সূচনা করেন।তখন কারের যাবতীয় নিয়ম রীতিনীতি এখনো আমরা বজায় রেখেছি।
বিশ্বেশ্বর নায়েকের স্ত্রী তথা এলাকার কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েক বলেন,”এই পুজো আমাদের বংশ পরম্পরায়।পুজোর পরের দিন আমাদের অন্নকুটের ব্যবস্থা করা হয়।এছাড়া গোটা রাত ধরেই পুজোতে অংশগ্রহণ করে আমাদের পরিবারের সদস্যরা”।