নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
চিরকাল নির্দল প্রার্থী হিসেবেই জয়ী হয়েছেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। কিন্তু টিকিট দেওয়ার পরও দ্বিতীয় তালিকায় তার নাম বাদ যাওয়ায় সেই ক্ষোভ সামলাতে পারেননি। আত্মসম্মান বজায় রাখতে দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্দল প্রার্থী হয়ে। অবশেষে শাসক দল,পুলিশের দাদাগিরি উপেক্ষা করে জয়ী হন মেদিনীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচনে। দু বছর পর তাকে দলে ফেরালেন মেদিনীপুরের বিধায়িকা জুন মালিয়া,দিলেন দায়িত্ব।
সালটা ২০২২,মেদিনীপুর পৌরসভা নির্বাচন। অন্যান্য পৌরসভার সঙ্গে মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫ টি ওয়ার্ডের নির্বাচন হয়। এই পৌরসভার এক অন্যতম ওয়ার্ড হলো ১৪ নং ওয়ার্ড যা আগে ১৩ নং ওয়ার্ড নামে পরিচিত ছিল।এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন দীর্ঘ দিনেরই নির্দল প্রার্থী কাউন্সিলর বিশ্বেশ্বর নায়েক। ২০২২ এর পৌরসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ড মহিলা হয়ে যাওয়ায় এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী হিসেবে তিনি দাঁড় করান তার স্ত্রী অর্পিতা রায় নায়ক কে। অর্পিতা রায় নায়েকের নাম প্রথম তালিকায় প্রকাশিত হলেও দ্বিতীয় তালিকায় তৃণমূলের একাংশের বিরোধের জেরে কেটে বাদ চলে যায়। তার জায়গায় তৃণমূলের আরেক গোষ্ঠীর প্রার্থীর নাম প্রকাশিত হয় এই ওয়ার্ড থেকে। এরই সঙ্গে তৎকালীন কাউন্সিলর তথা বিশ্বেশ্বর নায়েককে জানানো হয় যেন সেও তাকেই সমর্থন করে। কিন্তু নিজের মান সম্মান আভিজাত্য এবং ওয়ার্ড বাসীদের সম্মান রক্ষা করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও শাসক তালিকায় নিজের স্ত্রীর নাম তোলাতে পারেননি। অবশেষে ঠিক করেন তিনি তার স্ত্রী কে নির্দল প্রার্থী করে লড়াই করাবেন।
তবে মনোনয়ন করা মাত্রই একদিকে পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দল থেকে হুমকি অন্যদিকে ওয়ার্ডের নিজের আত্মীয়-স্বজন মানুষেরা তার বিরুদ্ধে চলে যায়। মনোনয়ন পত্র যাতে জোর করে,ভয় দেখিয়ে প্রত্যাহার না করতে পারে তাই বাড়িও ছেড়েছিলেন সস্ত্রীক।এরপর ভোটের দিন লড়াই আরও কঠিন হয়। একদিকে বুথ দখলের চেষ্টা,ইভিএম লুট করে নিয়ে যাবার চেষ্টা,অন্যদিকে ছাপ্পা বন্ধ করে মাথা উঁচিয়ে অপ্রতিরোধ্য নির্দল প্রার্থী কাউন্সিলর অর্পিতা রীতিমতো মার খেয়েও সেই ভোট যুদ্ধে এক চুল জায়গা ছাড়েননি বিরোধীপক্ষকে। পাশে সর্বদা দাঁড়িয়েছিল তার ওয়ার্ডের তাকে ভালোবাসার মানুষজন। অবশেষে ভোট গণনার দিন সবার সমীক্ষাকে পরাস্ত করে তিনি শাসক দলের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন ৪১৯ ভোটে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,এই ২৫টি ওয়ার্ডের তৃণমূল কুড়িটা তে দখল করলেও নির্দল কাউন্সিলরের ওয়ার্ড কিছুতেই দখলে আনতে পারেনি তারা। ফলে নিজেদের মান সম্মান বাঁচাতে তারা দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। এরই সঙ্গে অর্পিতা রায় নায়েকের স্বামীকে ছয় মাসের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। কিন্তু সেই অর্পিতা রায় নায়েক রীতিমত পৌরসভার নির্বাচনে জয়ী হয়ে পৌর কাউন্সিলর দায়িত্ব নিয়ে এলাকার মানুষের মন জয় করে ফেলে।
সেই ঘটনায় খুশি হয়ে অবশেষে তাকে ফের দলে টেনে নিল শাসক দল তৃণমূল। এদিন এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে বিধায়িকা জুন মালিয়া এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান সঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ চক্রবর্ত্তীর হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করেন নির্দল পৌর কাউন্সিলর এবং তার স্বামী বিশ্বেশ্বর নায়েক। এরই সঙ্গে যোগদান করেন ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থকেরা।
যদি ওই বিষয়ে কোনো রূপ মন্তব্য করতে চাননি নির্দল পৌর কাউন্সিলর। তিনি এইটুকুই বলেন,”যা করেছে সবই দলীয় নেতৃত্ব করেছে,আমি আগেই তৃণমূল কে সমর্থন করতাম,এখন অফিসিয়াল ভাবে তৃণমূলে এলাম।অন্যদিকে এই বিষয়ে মেদিনীপুর বিধায়িকা জুন মালিয়া বলেন,”আমাদের ভোটের সময় এক নির্দল কাউন্সিলার যোগদান করেছে এবং আমাদের সংখ্যা বেড়েছে পৌরসভায়।আমরা সবাইকে নিয়েই চলতে চাই”।