নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :
বর্তমানে চলছে ক্যাশলেস ইন্ডিয়া যাকে বলে ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং এই ডিজিটাল যুগে পে টিএম কিউআরকোড,ফোন পে,গুগল পে,এমনকি এটিএম দিয়ে ক্ষান্ত হয়েছে গ্রাহকরা। আর তাতেই টাকা লেনদেন চলছে ব্যাংক থেকে আমানতকারী,আমানত থেকে গ্রাহক এবং দোকানদার,গ্রাহক ও মালিকদের । কিন্তু এই ক্যাশলেস ডিজিটাল ইন্ডিয়াতেও পুরানো দিনের স্মৃতি বিজড়িত সেই কয়েন,আধুলি,পয়সা, সিককা,আনা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মেদিনীপুরের তারা শংকর চক্রবর্তী। বছর সত্তরের এই তারাশঙ্কর চক্রবর্তীর বাড়ি মেদিনীপুর শহরের মেদিনীপুর পৌরসভার মির্জা বাজার গয়লা পাড়ায় এলাকায়। স্ত্রী এবং দাদা ও দাদার ছেলে মেয়ে নাতি পুতিদের নিয়েই তার সংসার। নিজে একটি প্রবাদপ্রতীম পত্রিকাও চালান নিজের নামে। কিন্তু এই কাজের ফাঁকেই তিনি মুদ্রা সংগ্রহ করে চলেছেন।
এই পুরানো দিনের মুদ্রা এবং কানা কড়ি সংগ্রহ করা তার নেশা।এই নেশা ছিল বাপ ঠাকুরদার।আর বাবা গণেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ১৯৯৯ সালে মরে যাবার পর সেই নেশাকে নিজের নেশাই করেছেন।বাবার সংগ্রহ করা সেই কয়েন সেই মুদ্রা এবং দু আনা চার আনা সংগ্রহ করে রাখছেন অতি সযত্নে। বর্তমানে তার কাছে ১৮৭২ সাল থেকেই যাবতীয় মুদ্রা হয়েছে তার সংগ্রহশালায়। কোনটা ১৮৭২, তো কোনোটা ১৮৭৩ তো কোনটা স্বাধীনতার আগের ১৯০১-০২,১২,২০, ৪০ এবং বর্তমান সময়ের মুদ্রা। মুদ্রায় তৎকালীন সময়ের রাজা রাজড়াদের যেমন ছবি রয়েছে তেমন রয়েছে বিভিন্ন মনীষীদের ছবি। কোন কোন মুদ্রায় আবার আরবি ভাষায় লেখা মুদ্রার পরিসংখ্যান। সম্প্রতি সেই জমানো মুদ্রার সঠিক বয়স জানতে তিনি রাসায়নিক ও তেঁতুল জলে ডুবিয়ে এক প্রস্থ পরিস্কার করে নিচ্ছেন।এরপর সেগুলোকে পরিষ্কার করার পর নির্দিষ্ট পলিথিনের মাধ্যমে তার গায়ে সাল লিখে তিনি সযত্নে গুছিয়ে রাখছেন নিজের আলমারিতে।অনেক পড়ুয়া এবং গবেষকরা অনেক সময় দৌড়ে আসেন তার বাড়িতে এসব মুদ্রা দেখার জন্য।সেগুলো হাতে নিয়ে তারা নাড়িয়ে চাড়িয়ে খতিয়ে দেখেন,তথ্য সংগ্রহ করেন এবং লেখেন তার গবেষণা পত্রে। তবে এই তারা বাবুর বক্তব্য যতদিন বাঁচবো এই মুদ্রা সংগ্রহ করে যাব এবং সযত্নে তুলে রাখবো আগামী প্রজন্মের জন্য।
এই বিষয়ে তারা শংকর চক্রবর্তী বলেন এখন চলছে ডিজিটাল ও ক্যাশ লেস যুগ। যেখানে রকমারি মুদ্রা কি এবং আগের দিনের ইতিহাসই বাকি,তা জানেনা এই তরুণ প্রজন্ম। এখন টাকা অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন চলছে।যেখানে হাতে নিয়ে অনুভব করার দিন ফুরিয়েছে।তাই বর্তমান পড়ুয়া ওর প্রজন্ম পুরানো দিনের রাজা রাজড়াদের সেই মুদ্রা সম্পর্কে জ্ঞান অজানা। তাই বাবার স্মৃতি ধরেই বেঁচে রয়েছি এবং সেগুলোকে সংগ্রহ করেছি।আগামী দিনেও সংগ্রহ করে যাব। তবে ভবিষ্যতে এই পুরনো ঐতিহ্যবাহী মুদ্রা যদি কোন সরকারি মিউজিয়ামে ঠাঁই পায় অবশ্যই খুশি হব।অথবা যদি কেউ গবেষণার জন্য নিয়ে যায় বা খতিয়ে দেখতে চায় অবশ্যই তাদের জন্য সদর দরজা খোলা থাকবে এই চক্রবর্তী পরিবারের।