Preservation of old calendars : নেশা যখন পঞ্জিকা সংরক্ষণ!পিতার সংরক্ষণের নেশায় বুঁদ ছেলে,বলছে 119 বছরের কঠোর পরিশ্রম

Share

নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :

ডিজিটাল যুগেও পঞ্জিকা সংরক্ষণের নেশায় বুঁদ মেদিনীপুরের এক বৃদ্ধ। বাড়িতে গেলে স্বাধীনতার আগের সেই পঞ্জিকাও তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। মূলত বাবার নেশা ছিল এই পঞ্জিকা সংরক্ষণ,সেই নেশা ছেলের নেশায় পরিণত হয়েছে।তাই এখন তিনি পঞ্জিকা সংরক্ষণ করে চলছেন।তার পঞ্জিকা দেখতে ভিড় জমান অনেক পড়ুয়া সহ উৎসাহিত যুবক-যুবতী এবং পুরোহিতরা।

সংরক্ষণের নেশা অনেকেরই আছে। কারো টাকা জমানার তো কারো বই সংরক্ষণ।আবার কেউ কেউ ফুল সংরক্ষণ করতে ভালবাসে কারো কারো ক্ষেত্রে পুরানো নস্টালজিয়া কোন পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ। কিন্তু একটু অবাক হলেও এই মানুষটির সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে পঞ্জিকা। মূলত এই সমাজের শাস্ত্রমতে মানুষদের জন্ম মৃত্যু বিবাহ এবং কোন শুদ্ধ কাজ করতে গেলেই পঞ্জিকা এক এবং অনবদ্য। আজও যেখানে পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী যেমন ছেলের বিবাহ দেওয়া হয় নামকরণ করা হয় তেমনি মারা গেলে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানেও পঞ্জিকার গুরুত্ব অপরিসীম। শাস্ত্রমতে এই পঞ্জিকা দিয়েই বহু দোষ গুণ যেমন কাটানো যায় তেমনি পঞ্জিকা মতে সূর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণ পূর্ণিমা অমাবস্যা ও পালন করে আসে এই পৃথিবীর মানুষ। তাই এই পঞ্জিকা এখন ডিজিটাল যুগে কিছুটা নিস্তেজ হয়ে গেলেও ব্যবহার কমেনি। এই পঞ্জিকা শুধু পরিবারের লোকজন নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরোহিতরা ব্যবহার করে থাকেন।

যদিও ডিজিটাল যুগে এখন অনলাইনের মাধ্যমে পঞ্জিকা দেখা হয়।তবে হাতে-কলমে এই পঞ্জিকা এখনো কিছু রয়ে গেছে। আর সেই পঞ্জিকা সংরক্ষণের অদ্ভুত নেশায় মেদিনীপুর শহরের মির্জা বাজার গয়লাপাড়ার এলাকার ৬৯ বছরের তারা শংকর চক্রবর্তী। তারাশঙ্করবাবু পেশাগতভাবে একজন সংবাদ মাধ্যমে মানুষ। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতাই করে এসেছেন তিনি। কিন্তু তিনি ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছেন তার বাবা গণেশ চন্দ্র চক্রবর্তী তার বাড়িতে থরে থরে সাজানো পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকা শুধু দু’বছর পাঁচ বছর আগে না এই পঞ্জিকা স্বাধীনতার আগে প্রায় ১৯০৪ সাল থেকে রয়েছে। ১৯০৪-০৬-০৭- যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ১৯৪৭-৪৮ সহ স্বাধীনতার আগে এবং স্বাধীনতার পরবর্তী পঞ্জিকা। এখনো সংরক্ষণ রয়েছে সম্প্রতি বেরোনো ২০২২ সালের পঞ্জিকা। বাবার নেশা এখন ছেলের মধ্যে। তাই বয়সকে তোয়াক্কা না করেই তিনিও একই নেশায় সেই পঞ্জিকা সংরক্ষণ করে চলছেন। এবছরের পঞ্জিকা নিয়ে তার মোট ১১৯ টি পঞ্জিকা সংরক্ষণ রয়েছে। অনেকেই এই পুরানো পঞ্জিকা সংগ্রহ করতে এবং পড়তে আসেন এই তারাশঙ্কর চক্রবর্তী বাড়িতে। বহু পুরোহিত মশায় আসেন এই পুরানো দিনের পঞ্জিকা ঘেঁটে বিভিন্ন তথ্য নিতে এই চক্রবর্তী বাড়িতে।

এইদিন একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়া তারাশঙ্কর চক্রবর্তী বাবুর বক্তব্য ছোটবেলায় দেখেছি বাবাকে এই পঞ্জিকা সংরক্ষণ করতে। তখন ছিল তালপাতার এবং এখন থেকে কিছুটা বড় এবং হাতে লেখা।পরবর্তীকালে বাবার মৃত্যুর পর আমি সেই পঞ্জিকা সংরক্ষণ করে চলেছি।শুধু নেশা বলব না,তথ্য সংগ্রহ করাই মূল উদ্দেশ্য।আসলে হিন্দুসমাজে অন্যতম ঐতিহ্য হলো এই পাঁজি।তাই এই পঞ্জিকা পড়তে বহু জ্যোতিষী পুরোহিতরা যেমন আমার বাড়িতে আসেন তেমনি আসেন বিভিন্ন কলেজ ও ইউনিভারসিটির পড়ুয়ারা। যতদিন বেঁচে থাকবো এই পঞ্জিকা সংরক্ষণ করে যাব এই উদ্দেশ্যই আমার। এরই সঙ্গে নাতি-নাতনিদের পঞ্জিকা পড়াতে উৎসাহিত করব।


Share

dnews.in