B.Tech Tea shop : চা বিক্রি যে ছোট কাজ নয়,বোঝাতে B.Tech ওয়ালার বিটেক চা! বিভিন্ন ফ্লেভার চা বিক্রিতে মজেছে গৃহবধূ

Share

নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :

এক বিটেক ডিগ্রিধারীর বিটেক চা। “আড্ডা আর অনেকখানি মন খারাপের আলতো ভালো লাগার জায়গা মানে বিটেক চায়েওয়ালা” এই কোড ব্যাবহার করে চা দোকান খুলে ফেলেছেন এক গৃহবধূ। বিভিন্ন ভ্যারাইটি বিভিন্ন ধরনের চা সহ কচুরি ডালপুরি ও বিভিন্ন ধরনের স্নাক্স তিনি বিক্রি করছেন রমরমিয়ে।

সুদেষ্ণা রক্ষিত

মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজারে এবার চা দোকান খুলেছে খোদ B.Tech ডিগ্রিধারী এক গৃহবধূ। তার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে লেমন টি,দুধ চা,মিল্ক মেড চা সহ বিভিন্ন ফ্লেভারের চা,যা খেতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রসঙ্গত এই বিটেক করা গৃহবধুর মতে মূলত সমাজে চা বিক্রি যারা করে তাদেরকে ছোট চোখে দেখা হয়। সমাজ ভাবে যারা পড়াশোনা করেনি,কম বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে তারাই একমাত্র চা দোকান দিতে পারে।তাই এই ছোট চোখ দেখাকেই তার না পসন্দ।দীর্ঘদিন বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে বাড়িতে থেকে অবশেষে নিজের সুপ্ত বাসনাকে রূপ দিতে তিনি রাতারাতি খুলে ফেলেছেন একটি চা দোকান। সেই দোকানের নাম দিয়েছেন তিনি বিটেক চা ওয়ালা।আসুন জেনে নিয় কে এই সুদেষ্ণা রক্ষিত! মেদিনীপুরের বাসিন্দা তিনি মেধাবী অধ্যবসায় বিটেক কমপ্লিট করেন। এরপর তিনি MBA পড়াশোনা করেন এবং তা কমপ্লিট করেন।এরপর তিনি গোদরেজ নামক একটি কোম্পানিতে কাজও করেছিলেন।কিন্তু ভালো লাগে নি।এরপর একটি বেসরকারি স্কুলে করেছিলেন কিছুদিন কাজ কিন্তু মন পোষায় নি। স্বামী চন্দ্রজিৎ সাহা যিনি নিজেও বিটেক করে একটি কোম্পানিতে কর্মরত কলকাতায়।তাই কর্মসূত্রে কলকাতাতে থাকেন এই স্বামী স্ত্রী।

এরই মধ্যে তাদের কোলে আলো করে এসেছে একটি ফুটফুটে মেয়ে।তার বয়স ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ বছর। সন্তান ধারণের পরেই এই সুদেষ্ণা রায় ঠিক করেন নিজে স্বাবলম্বী হবেন এবং অপরকে সাবলম্বী করবেন।তিনি সমস্ত চাকরি ছেড়ে দেন এবং সন্তান মানুষের চেষ্টা করেন।এই ঘটনায় কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর।বাড়িতে থেকে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।কারণ মমতার দেওয়া লক্ষ্মী ভান্ডারের ৫০০ টাকা তার চলে না।তাই ছোট বেলার নিজের রকমারি ডিশের রান্না এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভারের কাজ কে গুরুত্ব দিয়ে তিনি ভাবলেন একটি দোকান খোলার।কিন্তু কি দোকান খোলা যাবে তাই নিয়েও দ্বিধায় ছিলেন তিনি।এরপর ঠিক করলেন একটি চা দোকান দিয়ে শুরু করবেন ব্যবসা।তাই চা দোকান খুললেন কিন্তু নাম কি দেওয়া যায়।এরপর সমাজে মেসেজ ও সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি বিটেক চায়েওয়ালা নাম দিয়ে চা দোকান শুরু করলেন।এই কাজে তাকে স্বামী ননদ এবং শশুর সাহায্য করছে।তবে চা এর সঙ্গে বিক্রি করছেন স্নাক্স এবং মুখরোচক বিভিন্ন ফাস্ট ফুড। বিটেক নাম কেন সেই পরিপ্রেক্ষিতেও জানালেন তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বললেন সমাজে যারা চা বিক্রি করে তাদেরকে মূলত ছোট চোখে দেখা হয়। তবে তিনি সেই দোকান খুললে তাকে সবাইকে একই রকম কথা বলতে হবে।কেন তিনি চা দোকান খুলেছেন বা বিটেক কেন তাই প্রথম থেকে চা দোকানের নাম দিয়ে ফেললেন বিটেক চা ওয়ালা।যাতে প্রথমে নাম পড়ে সকলে বুঝতে পারে যে ডিগ্রিধারীরাও এই চা দোকান করতে পারে।এই দোকানের বয়স মাত্র কুড়ি দিন।এরই মধ্যে তিনি রীতিমত ব্যবসা করে যাচ্ছেন পাশে থেকেছেন স্বামী ননদ শ্বশুর।ইচ্ছে আছে বড় ধরনের ক্যাফেটেরিয়া করার।

এদিন এক সাক্ষাৎকার সুদেষ্ণা রক্ষিত বলেন বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে দেখেছি পরের কাছে কাজ করা মানে পরাধীনতা।তাই স্বাধীনভাবে কাজ করার উদ্দেশ্যেই এই চা দোকান করা। সঙ্গে সমাজে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছি।কারণ অনেকেই চা দোকান মানেই ছোট কাজ ভাবে।তাই প্রথম থেকেই নাম দেওয়া হয়েছে বিটেক চা ওয়ালা।যাতে সকলে ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে দোকানে আসে। ইচ্ছে রয়েছে বড় ধরনের একটি ক্যাফেটেরিয়া করার।

যদিও এই দোকান ও ব্যবসার পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বামী চন্দ্রজিত সাহা।তিনি বলেন স্ত্রীর এই উদ্যোগে তিনি স্বাগত জানান।কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকি তাই যতটা পারি সাহায্য করে যাব।তবে মানুষ চাইলেই যে সবকিছু করতে পারে এবং পড়াশোনা বা ডিগ্রী টাই সব বড় কথা নয় সেটা দেখিয়ে দিয়েছে তার স্ত্রী সুদেষ্ণা।


Share

dnews.in