নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
সকাল সকাল হকার উচ্ছেদ নিয়ে ঝামেলায় জড়ালো পৌরসভা এবং প্রশাসন। মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ে বসে থাকা ইডলি,চাউমিন সহ ফাস্ট ফুডের হকারদের সঙ্গে গন্ডগোল বাঁধে পৌরসভার।যদিও পৌরসভার দাবি হকারদের উচ্ছেদ হচ্ছে না বরং পুনর্বাসন করে এক গলির মধ্যে তাদের দোকান করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।অন্যদিকে হকারদের দাবি এই গলির মধ্যে ঢুকে গেলে তাদের ব্যবসা চলবে না।তাদের না খেতে পেয়ে মরতে হবে।যদিও হকারদের এই অবরোধ শেষ পর্যন্ত মীমাংসা করেন সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি।
গোটা রাজ্যজুড়ে ব্যস্তবহুল রাস্তার ধারে বসা হকার সরানো নিয়ে চলছে গন্ডগোল।মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো এই হকার সরানোর কাজ করছে প্রশাসন।পশ্চিম মেদিনীপুরের খোদ মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ে এই হকার নিয়ে এক প্রস্থ গন্ডগোলের জেরে অবরোধে বসলেন হকাররা।ঘটনা ক্রমে জানা যায় মেদিনীপুর শহরের এই মেদিনীপুর কলেজ (অটোনোমাস)গেটের আশেপাশে রয়েছে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ টি ছোট বড় দোকান।ইডলি ধোসা,ফুচকা,চাউমিন থেকে শুরু করে মোবাইল পার্টস এবং আইসক্রিম লস্যির দোকান।সকাল থেকে শুরু হয়ে এই হকাররা ব্যবসা করেন গভীর রাত পর্যন্ত।আর এই নিয়ে জমজমাট থাকে কলেজ মোড় এলাকা।যদি ওই হকারদের দোকানে ফাস্টফুড খেতে ভিড় জমান শহর ও জেলার গ্রাহকরা।তাতেই যানজট হয়ে পড়ে এই ব্যস্তবহুল কলেজ মোড় এলাকা।যেখান দিয়ে প্রতিদিনই ভিভিআইপি সহ প্রশাসনে আধিকারিক বৃন্দের গাড়ি পাস হয়।তারা এই যানজটে আটকে পড়েন।তাই সেই সব হকারদেরকে সরাতে উদ্যোগী হয়েছে মেদিনীপুর পৌরসভা এবং মহকুমা প্রশাসন।গত সোমবার তাদের নিয়ে এক প্রস্থ বৈঠক সারেন এবং সেই বৈঠকে তাদেরকে উচ্ছেদ না করে বরং ডিআই অফিসের পাশে গলিতে সারি সারি ভাবে দোকান লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরই সঙ্গে তাদের জলের ব্যবস্থা এবং বাথরুমের ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দেন প্রশাসনে আধিকারিকরা।কিন্তু তাতে সায় মেলেনি হকারদের।এদিন সকাল হতেই তারা কলেজ মোড়ের ব্যস্ত বহুল এলাকা রাস্তা ঘিরে অবরোধ করে বসে পড়েন। তাদের অভিযোগ,”প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে তাদের ব্যবসা আর চলবে না।গলির মধ্যে কোন কাস্টমার আসবে না তাতে তারা না খেয়েই মরতে হবে”।এরই পাশাপাশি তারা অভিযোগ করেন এই গলিটা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তর রয়েছে।যেখানে বিভিন্ন সময় ছাত্র-ছাত্রীরা এবং শিক্ষক শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপস্থিত হন। পাশাপাশি এই কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী,মুখ্যমন্ত্রী সহ বড় বড় ভিভিআইপিদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।যদি এভাবে দোকান লাগানো হয় তাহলে পরবর্তীকালে প্রশাসনের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের আবার উঠিয়ে দেবে এই প্রশাসনের আধিকারিকরা।এই আতঙ্কে এবং ভয়ে তারা এইদিন অবরোধে সামিল হন এবং বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।যদিও সেই বিক্ষোভে প্রথমে পৌরসভা চেয়ারম্যানসহ পদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত হন তাদের বোঝান।পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত হয়েও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু তারা তাদের কথায় অনড় থাকেন।এরপর সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি উপস্থিত হয়ে তাদের এক প্রস্থ বোঝানোর চেষ্টা করেন।
যদিও এই নিয়ে পুতুল দাস,অসিত কুমার দাস, অষ্টু প্রামাণিকেরা,বলেন,”দীর্ঘ ১৫ থেকে কুড়ি বছর ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করছি যে ব্যবসার উপর নির্ভর করে আমাদের রুজি রোজগার এবং সংসার চলে।এতদিন প্রশাসন থেকে কিছু বলেনি এখন তারা হঠাৎ করে আমাদেরকে গলির ভিতর চলে যেতে বলছে”।সেখানেও শিক্ষা দপ্তরের অফিস রয়েছে।তারাও দুদিন পরে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেবে।এইভাবে আমাদের দোকান ভেঙে দিলে আমরা যাব কোথায়।অবিলম্বে আমাদের যথোপযুক্ত পুনর্বাসন দিয়ে তবেই আমাদেরকে সরাতে হবে।
অন্যদিকে সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখার্জি বলেন,”গোলকুয়া চক থেকে পঞ্চুরচক পর্যন্তই ব্যস্ত বহুল রাস্তা চিরদিনই যানজট হয়ে থাকে।শুধু ভিভিআইপি যাতায়াত নয়,সেই সঙ্গে পথ চলতি মানুষের যাতাযাতে সমস্যা হয়।এছাড়া শহরে যে সৌন্দর্যায়ন সেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত আমরা তাদের সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি।আমরা তাদের উচ্ছেদ করছি না।এই নিয়ে গত সোমবার আমাদের বৈঠক হয়েছে।তারা সম্মতিও জানিয়েছে কিন্তু তারপর কেন অবরোধ করছে তা বুঝতে পারছি না।আমরা তাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলব।যদিও শাসকদলের পতাকা নিয়ে বসা হকার নিয়ে প্রসঙ্গে মহকুমা শাসকের বক্তব্য এখানে রাজনৈতিক দলের রং দেখা হবে না।
যদিও এ বিষয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন,”গত সোমবার ওদের ওই হকারদের সঙ্গে এই বসা নিয়ে বৈঠক হয়েছে।যে বৈঠকে ওরা সম্মতি জানিয়েছিল যে ওরা গলির মধ্যে দোকান সরিয়ে নেবে কিন্তু আজকে কোন অজ্ঞাত কারণে ওরা আবার অবরোধ করেছে।আমরা বিষয়টি প্রথমে মহকুমা শাসক কে জানিয়েছিলাম উনি বিষয়টি দেখবেন।তবে পাশেই কলেজ মাঠ এবং সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী সভা হয় এই বিষয়ে নিরাপত্তা নিয়ে বলেন আমরা পুরো বিষয়টা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই করেছি।
যদিও ঘন্টা দুয়েক অবরোধ থাকার পর অবশেষে সদর মহকুমা শাসকের এক প্রস্থ আলোচনার পর অবরোধ তুলে নেন এই কলেজ মোড়ে বসে থাকা হকাররা।তারা মহকুমা শাসকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন এবং গলির মধ্যে দোকান নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন।