নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম:
বেলিয়াবেড়ার প্রহরাজ রাজবাড়ীর ইতিহাস নিয়ে প্রথম কোনও তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তথ্যচিত্র লেখক নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ও খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা পরিচালক সুনীল বিশ্বাস। স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রে অভিনয় করেছেন মেদিনীপুরের মানুষজন।এই তথ্য চিত্র প্রকাশ হওয়ায় খুশি রাজবাড়ীর পরিবারসহ জেলার বিশিষ্ট মানুষজনেরা।
একসময় এই রাজবাড়ী থেকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের খাজনা আদায় হতো।কয়েকশো বছর ধরে রাজত্ব করেছিলেন এই বংশের জমিদারেরা।তখনকার দিনে জমিদারদের রাজা বলা হতো।শিক্ষা,সাহিত্য, বাক স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রহরাজ বাড়ির ভূমিকা অনস্বীকার্য।বৃহত্তর এই জমিদার পরিবার ‘রাজ পরিবার’ নামেই পরিচিত হয়েছিলেন। রাজবাড়ীর ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে বর্তমান রাজবাড়ীর আনাচে কানাচে।এক প্রহরে ঘোড়া ছুটিয়ে যতটা এলাকা দখল করা যাবে,ততটা এলাকার খাজনা আদায় ও তদারকির দায়িত্ব পাবে এই পরিবার।সেই থেকে ‘প্রহরাজ’ উপাধি লাভ।প্রতিষ্ঠাতা নিমাই চাঁদ মহাপাত্র প্রথম দিকে মাটির বাড়িতে থেকেই শাসন করেছিলেন।রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রহরাজ মহাপাত্রের সময়কালে শিক্ষার বিকাশ ঘটে ছিল। পার্শ্ববর্তী ডুলুং নদীর তীরে অবস্থিত ব্যাঘ্রেশ্বর মন্দির এই পরিবারের রাজত্ব কালে নির্মাণ করা হয়েছিল।রাজ পরিবারের অন্দরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের মন্দির।বর্তমানে শাসন না থাকলেও,পরিবারের থেকে প্রতিবছর জন্মাষ্টমী , রাধাষ্টমী,রাস পূর্ণিমা, রথযাত্রা, দুর্গোৎসবের মতো নানান সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত বেলিয়া বেড়া বাজারেই রয়েছে এই প্রহরাজ রাজবাড়ী।
প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে সিংহদ্বার,চুনসুরকির তৈরি প্রাসাদোপম রাজপ্রাসাদ,মন্দির,দুর্গা দালান,রথ ও তৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত রাজার অস্ত্র,আসবাবপত্র,গান বাজনার নানান সরঞ্জাম এখনও রয়েছে।আর এই রাজবাড়ীর ইতিহাস নিয়ে প্রথম কোনও তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তথ্যচিত্র লেখক নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ও খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা পরিচালক সুনীল বিশ্বাস।তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন বেলিয়াবেড়া কৃষ্ণচন্দ্র মেমোরিয়াল হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ‘শিক্ষারত্ন’ সুব্রত মহাপাত্র।এই তথ্যচিত্রে অভিনয় করেছেন প্রহরাজ পরিবারের সদস্য সদস্যা- রণজিৎ নারায়ণ দাস প্রহরাজ মহাপাত্র, সুরজিৎ নারায়ণ দাস প্রহরাজ মহাপাত্র,সোমা আচার্য,বিশ্বজিৎ দাস প্রহরাজ মহাপাত্র,রাজবাড়ির পুরোহিত বিদ্যুৎ ঘোষাল। এছাড়াও অভিনয় করেছেন শিক্ষক সুব্রত মহাপাত্র, নরসিংহ দাস,বিউটিশিয়ান রঞ্জিতা বিশ্বাস।স্ক্রিপ্ট লিখেছেন নিসর্গ নির্যাস মাহাতো।স্বল্প দৈর্ঘ্যর এই তথ্যচিত্রে রাজপরিবারের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।সম্প্রতি রাজ পরিবারের বৈঠকখানায় এই তথ্যচিত্রটি আনুষ্ঠানিক ভাবে মুক্তি লাভ করে।আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গোপীবল্লভ পুর-২ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক নীলোৎপল চক্রবর্তী, যুগ্ম- সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক রাজীব মুর্মু, আধিকারিক করুণা সিন্ধু মান্না।
এই তথ্যচিত্র মুক্তির জন্য শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন বেলিয়াবেড়া থানার ওসি সুদীপ পালোধী।রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে এমন তথ্যচিত্রের মুক্তির জন্য যারপরনাই খুশি হয়েছেন রাজপরিবারের সদস্য সদস্যাবৃন্দ ও আধিকারিকগণ।
এই বিষয়ে নীলোৎপল চক্রবর্তী বলেন,”ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ী নিয়ে এই তথ্যচিত্র জনমানসে এই রাজবাড়ীর গুরুত্ব ও ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করবে।এই রাজবাড়ীকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে আগামী দিনে।’নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ও সঞ্জীব বিশ্বাস বলেন,’প্রহরাজ রাজবাড়ী গড়ে ওঠার প্রাথমিক ইতিহাস প্রথম পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।আগামী দিনে আরও দু’টি পর্বে এই রাজবাড়ীর ইতিহাস তুলে ধরা হবে।’ সুব্রত মহাপাত্র বলেন,”প্রহরাজ রাজবাড়ীর সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক।এই রাজবাড়ীর গুরুত্ব ও মর্যাদা বিচার করে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা খুবই প্রয়োজন।এই বিষয়ে সমস্ত দিক থেকে আমি সহায়তা করবো’।এদিনের অনুষ্ঠানে সুব্রত,নরসিংহ, সুনীল ও নিসর্গকে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে সম্বর্ধিত করা হয়।