
নিজস্ব প্রতিনিধি,শালবনি:
বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার আর তার উপার্জনে চলছে না সংসার অথচ মেয়ের মাধ্যমিকে অভাবনীয় সাফল্য সেই সঙ্গে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।এই অবস্থায় স্বপ্নকে সফল করতে পাশে এসে দাঁড়ালো জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার।ডাক্তার হওয়ার ক্ষেত্রে টিউশনি,বই পড়ার সঙ্গে যাবতীয় দায়িত্ব নিলেন কাঁধে।

এবার এক সাফল্য অর্জনকারী সিভিক কন্যার পাশে দাঁড়ালো পুলিশ সুপার,নিলেন টিউশনি এবং বই পড়ার সেই সঙ্গে ডাক্তার হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত দায়-দায়িত্ব। ঘটনাচক্রে জানা যায় প্রত্যন্ত জঙ্গলমহল মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের বহড়াবনি গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে লাবনী মাহাতো।বাবা কিনু মাহাতো একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার।অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই সংসার দিন যাপন হয় এই মাহাতো পরিবারে।
যদিও এ অভাব অনটনের মধ্যেই মাধ্যমিকে ভালো সাফল্য অর্জন করেছে লাবনী।এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৪৭ নাম্বার পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এলাকায়।সেই সঙ্গে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর লাবনী মাহাতো।কিন্তু এই ডাক্তার হওয়ার সবচেয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনটন ও দারিদ্রতা।কারণ বাবা কিনু মাহাতো সিভিক ভলেন্টিয়ার হিসেবে যতটুকু বেতন পান তার সংসার চালাতে হিমসিম খাই এই পরিবার।এই অবস্থায় কিভাবে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে সেই চিন্তায় দিন কাটছিল এ পরিবারের।

অবশেষে মুশকিল-আসান হয়ে দাঁড়ালো খোদ জেলার পুলিশ সুপার।তার সফলতা সেইসঙ্গে দারিদ্রতার খবর পৌঁছায় জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের কাছে। এরপরেই তিনি ছুটে আসেন পরিবারের কাছে।তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ও তার পাশাপাশি লাবনী মাহাতোর পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নেন।ইতিমধ্যেই বই কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে টিউশনির ব্যবস্থা তিনি করেছেন।পাশাপাশি তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আগামী দিনে পড়াশোনার যা যা দরকার সমস্ত দায়িত্ব তিনি পালন করবেন। আর এতেই খুশির হাওয়া লাবনীর পরিবারের।লাবনীর দেখা যে স্বপ্ন সে স্বপ্ন এবার পূরণ হবে বলে মনে করছেন লাবনী ও তার পরিবার।এই ঘটনায় ধন্যবাদ জানিয়েছে জেলা পুলিশ সুপারকে।

এ বিষয়ে পড়ুয়া লাবনী মাহাতো বলেন,”বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার যা টাকা রোজগার করে তারা সংসার চালাতেই শেষ হয়ে যায়।আমার ভবিষ্যতে ইচ্ছে রয়েছে ডাক্তার হওয়ায়।আমি ঠিক করে উঠতে পারতাম না পড়াশোনা চালিয়ে যাব কিভাবে।যদিও জেলা পুলিশ সুপার এসেছেন বাড়িতে,আশ্বাস দিয়েছেন,আর্থিক সাহায্য করেছেন এবং পড়ার ক্ষেত্রে সব রকম সাহায্য করার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন।আশা করছি এই পুলিশ সুপারের কাছে থাকায় আমি আমার স্বপ্নে সফল হতে পারব।

যদিও অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানান,”আমাদের সিভিক ভলেন্টিয়ায়ের মেয়ে এই জঙ্গলমহলে।পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা অভাবনীয় সাফল্য লাবনীর। এটা জেলার মান উন্নত করে। কিন্তু যখন দেখলাম তার আর্থিক অনটন রয়েছে এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তখন তার সঙ্গে কথা বলেছি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি।আমরাও চাই কোনভাবে যেন পড়াশোনার ক্ষেত্রে এই ধরনের পড়ুয়াদের সমস্যা না হয়। আগামী দিনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে এবং ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে আমরা তার পাশে রয়েছি।

অন্যদিকে লাবনীর বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার কিনু মাহাতো বলেন,”এমনিতেই আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে সংসার চলে।তারপর মেয়ের এই অভাবনীয় সাফল্য। অনেক চিন্তায় ছিলাম।এরপর ফাঁড়ির অফিসারের মাধ্যমে বড় সাহেব বিষয়টি জেনেছে এবং পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে সঙ্গে আর্থিক সাহায্য করেছে।খুবই ভালো লাগছে বড় সাহেব পাশে থাকার জন্য। মনে করছি এবার মেয়ের স্বপ্ন সফল হবে।