Ramjibonpur Tantshilpo:হ্যান্ডলুম মেশিনের দাপটে কমেছে রামজীবনপুরের ঐতিহ্যবাহী মেসিনের খটাখট শব্দ!সরকারি সাহায্যর অভাবে

Share

রামজীবনপুর 10 ই সেপ্টেম্বর:

পুজোর মুখে মুখভার রামজীবনপুরের তাঁতশিল্পীদের।তাঁতের শাড়ীর অর্ডার কম ও মহাজনের থেকে মজুরিও কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।হ্যান্ডলুম মেশিনের দাপট বেড়েছে,সুতির তাঁত শাড়ীর কদর কমেছে,সুতোর জোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।পরিবর্তে রেশম বা সিল্কের শাড়ীর কদর বেড়েছে।সব মিলিয়ে বিলুপ্তির পথে রামজীবনপুরের তাঁতশিল্প।সারাবছর সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।আমাদের কাছে পুজোর আলাদা করে উদ্দীপনা আনন্দের কিছু নেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা।উপার্জন না থাকায় নতুন প্রজন্ম একাজে অনিহা,পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্য।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার রামজীবনপুর পৌরসভা।১১ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বহু পুরানো এই পুরসভা।তাঁত শিল্পের জন্য বিশেষ পরিচিতি রয়েছে এই রামজীবনপুরের।দশকের পর দশক ধরে বংশ পরম্পরায় রামজীবনপুরের তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন শতাধিক পরিবার।এর উপর ভর করেই এই শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির সদস্যদের চলতো জীবন জীবিকা।বর্তমানে রামজীবন পুরের এই ঐতিহ্যের শিল্পের করুন দশা,প্রায় বন্ধের মুখে।একেবারে বলা চলে ধুঁকছে রামজীবন পুরের বহু প্রাচীন ঐতিহ্যের তাঁত শিল্প।রামজীবনপুর পৌরসভার ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে ঘরে ঘরে হাতে তৈরি তাঁতের মেশিন ও শিল্পের রমরমা ছিল।সেই রমরমা আর নেই।বর্তমানে ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে রয়েছে বহু পুরানো ঐতিহ্যের তাঁত শিল্প তাও হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার একাজ চালিয়ে যাচ্ছে।আগে এই তাঁত শিল্পের সাথে অধিকাংশ পরিবারই যুক্ত ছিল।

কিন্তু তাঁত শিল্পে আগের মতো আর রুজি রোজগার না মেলায় অনেকেই তা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গিয়েছে।সেই সঙ্গে সরকারি বিশেষ নজর বা কোনও সাহায্য বা পরিকাঠামো উন্নয়নে কিছু না মেলায় বন্ধের মুখে ঐতিহ্যের এই তাঁত শিল্প।আগাগোড়া মহাজনের উপর ভরসা রেখেই মজুরি হিসাবে কাজ করতে হয় তাঁতিদের।ধৈর্য সময় ও পরিশ্রম ব্যায় করেও সঠিক উপার্জন না মেলায় এই শিল্পের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী নই পরিবারের নতুন প্রজন্ম।রুজি রোজগারের টানে সকলেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।কেউ ভিনরাজ্য গিয়ে সোনার কাজ তো আবার কেউ অন্য কাজে যুক্ত হয়েছে।যারা এই শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে তারাই বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে।তাঁত শিল্পীদের কথায়,আগে রামজীবন পুরের তাঁতিপাড়ায় ঢুকলে খালি মেশিনের খটাখট আওয়াজ শোনা যেতো যেই আওয়াজে কানপাতা যেত না।

সেটা উবে গেছে। তাছাড়া পুজোর সময় মহাজনের পাশাপাশি তাঁত শাড়ীর খোঁজে এখানে বহু মানুষের আনাগোনা ছিল।নাওয়া খাওয়া ছেড়ে তাঁত শাড়ী তৈরির কাজে মেতে থাকতো তাঁত শিল্পীরা।বর্তমানে ছবিটা একেবারেই পাল্টে গেছে।হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া নিস্তব্ধতা রামজীবন পুরের তাঁতিপাড়ায়।সুতির শাড়ীর কদর না থাকায় সুতোর জোগান বন্ধ করে দিয়েছে মহাজন।বর্তমানে রেশমের সিল্কের তাঁত শাড়ী তৈরির প্রচলন শুরু হয়েছে রামজীবন পুরের তাঁতি পাড়ায়।যারা ধৈর্য সময় ব্যায় করে ডিজাইনের উপর তাঁতের শাড়ী বানাতে পারছে তারা কিছু টাকা পাচ্ছে মহাজনের থেকে মজুরি হিসাবে।যারা নরমাল তাঁতের শাড়ী তৈরি করছে তাদের মজুরি কম।ফলে পুজোর আগে তাঁত শিল্পীদের চোখে মুখে আক্ষেপের সুর।এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা।কিন্তু বরাবরই এই শিল্প নিয়ে উদাসীন সকলেই।

এ বিষয়ে শিল্পী বংশী দাস বলেন এক সময় প্রায় ৪০০ শিল্পী পরিবার এই তাঁতের কাপড় তৈরি করতেন।সারাদিন রাত মেসিনের খটখট আওয়াজ শোনা যেত এই পাড়ায়।পুজোর সময় সময় থাকত না খাওয়া দাওয়ার।কিন্তু কোরোনার পর থেকে সব উধাও।বেশির ভাগ ব্যবসা ছেড়ে টোটো গাড়ি বা লেবারের কাজ করছে।কেউ কেউ বাইরে চলে গেছে পেটের তাগিদে।সরকার থেকে বহুবার ডকুমেন্টস নিয়ে গেছে কিন্তু সামান্য টুকু সাহায্য মেলেনি।অন্য দিকে আরেক শিল্পী রামপ্রসাদ দাস বলেন,”এত বছর কাজ করে এসেছি তখন আমাদের ব্যবসার সুবর্ণ যুগ ছিল কিন্তু বর্তমানে একেবারেই মরে গেছে ব্যবসা।বিশেষ করে মহামারী কাটার পর যেন শ্মশানে পরিণত হয়েছে।কিন্তু এই বয়সে আর কোথায় যাব আমরা তাই শেষ চেষ্টা করে দেখছি।

তাঁত শিল্পীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রামজীবনপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানও।এই শিল্পের করুণ দশা কি করে হল এবং তা পুনরুজ্জীবিত করতে হলে কি করনীয় তারও ব্যাখ্যা দিয়ে চেয়ারম্যান কল্যাণ তেওয়ারি জানান,”আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীকে এনে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলাম।সরকারকে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে অবগত করেছি।আগামী দিনে আমরা এনিয়ে সরকারকে ভাবাবো,সরকারের বিভিন্ন স্তরে কথা বলবো।”



Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

dnews.in