
নিজস্ব প্রতিনিধি:
হৃদ্রোগ যে কেবল বড়দেরই হবে, এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে আছে। কিন্তু শিশুদেরও হার্টের সমস্যা দেখা যায়। জন্মগত ভাবে হার্টের সমস্যা অনেকেরই থাকে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল। রাজস্থানের আগে বেঙ্গালুরুতেও এমন ঘটনা ঘটেছে মাস কয়েক আগে। ক্লাসে বসেই আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বছর আটেকের এক শিশুকন্যার।

কিছুদিন আগে একটা ঘটনা নাড়া দিয়েছিল গোটা বিশ্বজুড়ে।রাজস্থানের সিকারের বাসিন্দা ৯ বছরের একটি মেয়ের মৃত্যু হয়েছে হৃদ্রোগে।মূলত স্কুলে টিফিনের সময়েই ঘটে অঘটন।ক্লাসে বসে খাবার খাওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা শুরু হয়।তার পরেই জ্ঞান হারায় মেয়েটি।হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েই আরও এক বার হার্ট অ্যাটাক হয়। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।এই ঘটনায় স্কুলে প্রিন্সিপাল নন্দকিশোর জানিয়ে ছিলেন প্রথমে মনে হয়েছিল,মাথা ঘুরে জ্ঞান হারিয়েছে মেয়েটি।কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেন,এক বার নয় বরং একাধিক বার হার্ট অ্যাটাক হয় তার।চিকিৎসার সময় টুকুও পাওয়া যায়নি।

বড়দের মত ছোটদের হৃদ্রোগ নিয়ে অনেক বেশি সাবধানে থাকতে হবে বলেই মত হার্ট চিকিৎসক দিলীপ কুমারের।তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন শিশুদের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা দু’প্রকারের হয়ে থাকে।প্রথমটি হল জন্মগত।আর দ্বিতীয়টি জন্মের পরে হওয়া সমস্যা। জন্মগত ভাবে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা অর্থাৎ কনজেনিটাল হার্ট ডিজ়িজ় হলে হৃদ্যন্ত্রটি আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছোট বা বড় হতে পারে।পরিশোধিত রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক ভাবে না হওয়া বা হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র থাকার মতো সমস্যা হতে পারে।পাশাপাশি,’পালমোনারি ভাল্ভ স্টেনোসিস’ নামে সমস্যাটিও দেখা দিতে পারে।হৃদ্যন্ত্রে ত্রুটি থাকলেও তা জন্মের সময় ধরা না-ও পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে জন্মের কিছু পর থেকে হৃদ্যন্ত্রে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। যেমন, শিশুর অল্পেই হাঁপ ধরবে। খেলাধূলার সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়বে,শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই সব ছোট ছোট লক্ষণ এড়িয়ে গেলে চলবে না।

শিশুর হার্টের রোগ যদি ধরা না পড়ে, তা হলে আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ হতে পারে। এই রোগ হলে জ্বর হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ হলে যেমন জ্বর হয়, এই শিশুদের অনেকটা সেই ধরনের জ্বর আসে। সঙ্গে গা ব্যথা হয়। এর পাশাপাশি, চোখ ও জিভ ভীষণ লাল হয়ে যায়।
রিউম্যাটিক হার্ট ডিজ়িজ়ও হতে পারে।চিকিৎসক জানাচ্ছেন,হৃদ্পিণ্ডের সমস্যার ফলে এই রোগ হয়।এই রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, গা ব্যথা,সঙ্গে হাঁপানি। এই রোগটিই বর্তমানে শিশুদের মধ্যে বেশি হচ্ছে।
চিকিৎসকের কথা মত শিশুর হার্টের রোগ যদি ধরা না পড়ে, তা হলে আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, কাওয়াসাকি ডিজ়িজ হতে পারে। এই রোগ হলে জ্বর হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ হলে যেমন জ্বর হয়, এই শিশুদের অনেকটা সেই ধরনের জ্বর আসে। সঙ্গে গা ব্যথা হয়। এর পাশাপাশি, চোখ ও জিভ ভীষণ লাল হয়ে যায়।রিউম্যাটিক হার্ট ডিজ়িজ়ও হতে পারে।

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, হৃদ্পিণ্ডের সমস্যার ফলে এই রোগ হয়। এই রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, গা ব্যথা। সঙ্গে হাঁপানি। এই রোগটিই বর্তমানে শিশুদের মধ্যে বেশি হচ্ছে।শিশুর হার্টের সমস্যা জন্মগত হলে ফেলে রাখা চলবে না। অস্ত্রোপচার অবশ্যই করাতে হবে। কী ধরনের অস্ত্রোপচার হবে, তা চিকিৎসকই ঠিক করবেন। প্রয়োজন মতো কখনও শিশুর মাইক্রো সার্জারি, কখনও আবার ওপেন সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা হয়। জন্মের এক মাসের মধ্যেই অস্ত্রোপচার করে নেওয়া উচিত। জন্মের পরের হার্টের সমস্যার ক্ষেত্রে অনেক সময় মাইক্রো সার্জারি করা হয়। তবে ওষুধেও কাজ হয়। শিশুর হার্টের রোগের সঠিক চিকিৎসা হলে ১০০ শতাংশ নিরাময় সম্ভব।

তবে এক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের শুধু খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর ওজন বাড়ছে কি না। তা হলে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ জরুরি। হার্টের রোগ থাকলে বেশি দৌড়োদৌড়ি, বাস্কেটবল, টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে, সময়ান্তরে চেকআপও করাতে হবে।অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা বাইরের খাবার, বেশি তৈলাক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত। দীর্ঘ দিন এমন খাবার খেলে তার প্রভাব পড়তে পারে হার্টের উপরে। ছোট থেকেই সুষম খাবার খাওয়াতে হবে শিশুকে, শরীরচর্চার অভ্যাস করাতে হবে। সঙ্গে কমাতে হবে স্ক্রিন টাইম। শিশুরা ধূমপান না করলেও অনেক সময়ে তারা ‘প্যাসিভ স্মোকার’ হয়ে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে, কৈশোর থেকেই তারা মদ্যপান বা ধূমপানের অভ্যেস করে। এরও প্রভাব পড়ে তাদের হার্টের উপরে।