
নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
ডিমেনশিয়া রোগ শুধু পারিবারিক ইতিহাস থাকলেই হয় না, কে কী ভাবে জীবন কাটাচ্ছেন,সেই সমস্ত বিষয়ও এ রোগের কারণ হতে পারে!তবে গবেষকেরা বলছেন,সেটি বরং চিন্তার থেকেও বেশি আশার কথা!কারণ সে ক্ষেত্রে জীবনযাপনে বদল এনে রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

ভুলে যাওয়ার রোগ নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন? কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তাদের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানাচ্ছে, পৃথিবীতে প্রতি বছর যে সমস্ত রোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়, সেই তালিকায় ডিমেনশিয়া রয়েছে সপ্তম স্থানে। আর এ রোগে আক্রান্তের হারও নিতান্ত কম নয়। শুধু ২০২১ সালেই পৃথিবীতে ৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ নতুন করে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি বছর অন্তত এক কোটি মানুষ নতুন করে শিকার হন ডিমেনশিয়ার।সাধারণত পরিবারে কারও ডিমেনশিয়া হয়ে থাকলে ওই রোগের ঝুঁকি জিনবাহিত হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করা হয়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের ওই রিপোর্টে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ হিসাবে আরও ৯টি বিষয়ের উল্লেখ করেছে। যার অধিকাংশই জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করে বদলানো সম্ভব।

ঠিক কী কী কারণে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে?
কিছু কিছু কারণ বদলানো সম্ভব নয়, যেমন জিনগত সমস্যা বা বয়স। পরিবারের কেউ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে বা এপিওই-ই৪ নামের এক ধরনের জিন যদি শরীরে থাকে, তবে ভুলে যাওয়ার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া যে বিষয়গুলির পরিবর্তন করা সম্ভব তার একটি তালিকা দিয়েছে হু। সেগুলি হল:
· উচ্চ রক্তচাপ
· রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকা
· স্থূলত্ব বা ওজন বৃদ্ধি
· অতিরিক্ত ধূমপান
· অতিরিক্ত মদ্যপান
· শারীরিক ভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা
· মানুষের সঙ্গে মিশতে না পারা
· হতাশার রোগ
সাধারণত ৬০ বছর বয়সের পরে যে কোনও ব্যক্তিরই ভুলে যাওয়ার রোগের সমস্যা শুরু হতে পারে। তার উপর যদি উপরোক্ত কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে রোগের ঝুঁকি আরও বাড়ে।

ডিমেনশিয়া কেন হয়?
নানা শারীরিক কারণে স্নায়ুকোষ নষ্ট হলে তা মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে, যা ধীরে ধীরে মেধার ধার কমিয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়। এই রোগ বাড়লে, আশপাশে থাকা পরিবার-পরিজনকেও অনেক সময় চিনতে পারেন না মানুষ। প্রতি মুহূর্তে ভুলে যেতে পারেন আগের মুহূর্তের কথা। যা থেকে মেজাজ খারাপ হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ-সহ আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডিমেনশিয়ায় শুধু যিনি ভুগছেন, তিনি একা আক্রান্ত হন না। তাঁর পরিবার, যাঁরা তাঁর যত্ন নিচ্ছেন, তাঁদের জীবনও বদলে যায়।

কী ভাবে প্রতিরোধ?
ল্যানসেটের গত বছরের একটি সমীক্ষা বলছে, ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জীবনযাপনের ধরনে বদল এনে ডিমেনশিয়া রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়ছে। ওই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে যে, যাঁরা ডিমেনশিয়ার রোগীদের খেয়াল রাখেন, যত্ন নেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করে ওই রোগের বৃদ্ধিকে আটকাতে পারেন।ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি আমেরিকাতেও জীবনযাপনে বদল এনে ডিমেনশিয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় কি না, তা পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, খাওয়াদাওয়ার পরিবর্তন এনে, শারীরিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এনে এবং ধূমপানে রাশ টেনে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়েছে।এ ব্যাপারে ফিনল্যান্ডের একটি গবেষণার কথা ডিমেনশিয়ার চিকিৎসায় বহু আলোচিত। ইউনিভার্সিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় এবং হেলসিঙ্কির ফিনিশ ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ারের ওই মিলিত গবেষণায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তাতে দেখা যায়, জীবনযাপনে বদল এনে ডিমেনশিয়ার মতো রোগকে যেমন কোনও কোনও ক্ষেত্রে দূরে রাখা গিয়েছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। অর্থাৎ, রোগ প্রতিরোধে পদ্ধতিটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয়েছে।

কী করবেন?
যদি পরিবারের কারও ডিমেনশিয়ার সমস্যা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে তো বটেই, যদি না-ও থাকে তা হলেও ৬০ বছরের আগেই জীবনযাপনে বদল আনার চেষ্টা করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বেশি বয়সে রোগের আশঙ্কাকে দূরে রাখতে পারবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ডিমেনশিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখার উপায় হিসাবে শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা এবং মানুষের সঙ্গে মেশা, মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখায় গুরুত্ব দিতে বলছে।