
নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম :
হাতির হাত থেকে ধান জমি রক্ষা করতে গিয়ে হাতির হানায় পুকুরে ঢুকে মৃত্যু হল এক কৃষকের। মৃত কৃষকেরের নাম পরীক্ষিত মাহাতো (৪২)। বাড়ি ঝাড়গ্রাম থানার অন্তর্গত বড়চাঁদাবিলা গ্রামে। রাতের বেলায় ধান জমি দেখতে গিয়ে তিনি হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে নেমেছিলেন পুকুরে কিন্তু তারপরও তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় বনদপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা।

স্থানীয় ও বনদপ্তর জানা গিয়েছে,শনিবার সন্ধ্যা থেকে জামবনি ব্লকের ডুলুং নদী সংলগ্ন ধনিয়াপাল এলাকায় দু-তিন দিন থেকে অবস্থান করা প্রায় ৪০ টি হাতির দলকে ড্রাইভ করা হচ্ছিল।হাতির দলটি জামবনি ব্লকের দিক থেকে ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের পুকুরিয়া বিটের ধান জমিতে ঢুকে পড়ে।এলাকায় হাতির দল আসছে খবরটি চাউল হতেই এলাকার চাষীরা হাতে বড় টর্চ লাইট নিয়ে নিজের জমিকে বাঁচানোর জন্য জমির দিকে রওনা দেয়।পুকুরিয়া বিটের বড়চাঁদাবিলা গ্রাম সংলগ্ন ধান জমির কাছে হাতির দলটি ঢুকে পড়ে।সেই সময় হঠাৎ করে হাতির দলের সামনে পড়ে যায় পরীক্ষিত মাহাতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি,পরীক্ষিত হাতির হাত থেকে বাঁচার জন্য ধান জমি পাশেই থাকা একটি পুকুরে ঝাঁপ দেয়।পরীক্ষিতকে তাড়া করে কয়েকটা হাতি পুকুরের জলে নেমে পড়ে।পরে হাতির দলটি বড় চাঁদাবিলা এলাকার ধান জমি থেকে বেরিয়ে ঝাড়গ্রাম-চন্দ্রী পিচ রাস্তা পেরিয়ে ঢেকিপুরার জঙ্গলের দিকে চলে যায়।এই ঘটনার পর থেকেই পরীক্ষিতের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।রবিবার সকালে পুকুরের মধ্যে পরীক্ষিতের গামছা ও টর্চ লাইট ভেসে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনকে জানানো হলে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বিপর্যয় মোকাবেলা দফতরের ডুবুরী নামিয়ে সকাল থেকে পুকুরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। আনুমানিক দুপুর দু’টোর সময় পুকুর থেকে মৃত অবস্থায় পরীক্ষিতের দেহ উদ্ধার হয়।পরীক্ষিতের দেহ পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসতে চাইলে এলাকার মানুষজন ও পরীক্ষিতের মা সহ পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয় এবং বনদপ্তরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।

বড় চাঁদাবিলা গ্রামের বাসিন্দা কল্পনা মাহাতো বলেন,”প্রতিনিয়ত এলাকায় হাতি ঢুকে পড়ছে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে।বনদপ্তর কে জানিও কোন লাভ হচ্ছে না।তারা এখান থেকে হাতি অন্যত্র সরানোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।আজ ধান জমি দেখতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।কাল আরো অনেকেই মারা যেতে পারে হাতি কাছে।তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত বনদপ্তরের লোক এসে ক্ষতিগ্রস্ত জমি দেখছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে দেহ নিয়ে যেতে দেব না”।কয়েক ঘণ্টার মাথায় বনদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসতে দেন গ্রামবাসীরা।

যদিও পরীক্ষিতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন বনদপ্তর।ঝাড়গ্রমের DFO পঙ্কজ সূর্যবংশী বলেন,”শরীরে তেমন কোন আঘাতের বড় চিহ্ন নেই।হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে কি না তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উপর নির্ভর করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে”।তিনি আরো বলেন,”ওই এলাকায় ফসলের যা ক্ষতি হয়েছে তা সরকারি নিয়ম মেনে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হাতির গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে”।