
নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম:
রেললাইন পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় কাটা পড়ল দুটি হস্তি শাবক সহ তিনটি হাতি।শুক্রবার ভোর রাতে ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা সরডিহা রেল স্টেশনের মাঝামাঝি বাঁশতলা স্টেশনের সামনে ডাউন বড়বিল হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে তিনটি হাতি।এই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রেলও বনদপ্তরের আধিকারিক এবং কর্মীরা। রাতেই শুরু হয় উদ্ধার কার্য।

বনদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মানিকপাড়া রেঞ্জের গোবিন্দপুর থেকে ২৫ টি হাতির একটি দল বাঁশতলা রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে রেললাইন পারাপার করে রামরমার জঙ্গলে চলে যেতে চেয়েছিল।বাঁশতলার দিক থেকে ২৫ টি হাতির মধ্যে বেশ কয়েকটি হাতি লাইনে উঠে পড়লে রামরমার জঙ্গলের দিকে যাওয়ার সময় রেল লাইনের পাশে রেলের লোহার রেলিং থাকায় হাতিগুলি আটকে পড়ে।লাইন বরাবর হাতিগুলি আগের দিকে এগিয়ে যায়।সেই সময় রেলের তথ্য অনুযায়ী রাত ১২ টা ৪০ মিনিট নাগাদ ডাউন বড়বিল হাওড়া জন শতাব্দি এক্সপ্রেসে সামনে পড়ে যায় হাতির দলটি।এই ঘটনায় একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতি সহ দুটি হস্তি শাবক কাটা পড়ে।পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতিটি ট্রেনের নিচে ঢুকে যাওয়ায় প্রায় ১০০ মিটারেরও বেশি দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।ডাউন রেল লাইনের দুই পাশেই ছিটকে পড়ে থাকে নিথর দুটি হস্তি শাবকের দেহ।

এই ঘটনার পরেই দাঁড়িয়ে পড়ে দূরপাল্লার ট্রেনটি।আতঙ্কিত হয়ে অন্যান্য হাতি গুলি লাইন পারাপার না করেই বাঁশতলার দিকে চলে যায়।রেলের আধিকারিক রা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে এক্সপ্রেসের পরীক্ষার নিরীক্ষা করার পর তাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।বনদপ্তর তিনটি হাতির দেহ উদ্ধার করে বাঁদরভুলা বিটে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।এরই মধ্যে ভোরের আলো ফুটতেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় চারটি হাতি।রেল লাইনে পড়ে থাকা মৃত হাতিগুলির দেহাবশেষের উপর শুঁড় বুলিয়ে চোখের জল ফেলে দুঃখ প্রকাশ করে।রেললাইনে হাতি উঠে পড়ায় আপ ও ডাউন দুই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন।ট্রেনের হর্ন বাজানো হলে কিছুক্ষণ পরে হাতিগুলি লাইন থেকে নেমে গেলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।যদিও এই ঘটনার পরেই শুরু হয়েছে দায় ঠেলাঠেলির কাজ।

জানা গিয়েছে, ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু ঠেকাতে বনদপ্তর ও রেলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছিল হাতির ড্রাইভ হলে বা রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় হাতি থাকলে সেই তথ্য বনদপ্তর রেলকে জানাবে।হাতি থাকার তথ্য বনদপ্তরে হাতে আসলেই রেল ওই রুটে ন্যূনতম ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাবে।ফলে হাতির মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।এদিনের এই ঘটনায় রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “রেলের সঙ্গে আলোচনায় জঙ্গল পথে নির্দিষ্ট একটি গতিতে ট্রেন চলাচলের জন্য ঠিক করা হয়েছিল।তারপরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটলো তা রেলের কাছে জবাব চাওয়া হবে।ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি আমরা”।

যদিও এই বসিয়ে দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশনের সিনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার নিশান কুমার সাংবাদিকদের বলেন,”ঘটনাটি কি হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে তারপরেই জানানো হবে।এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়”।