Bishnupur Durgapuja: তোপ দেগে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজদের কূলদেবী মৃন্ময়ীর আগমন!বলিনারায়ণি’ পুঁথির নিয়ম নীতি মেনেই মল্লরাজ পরিবারের পুজো

Share

বিষ্ণুপুর 17 ই সেপ্টেম্বর:

নীলাভ আকাশ সাথে কাশফুলের দোলা।জানান দিচ্ছেন দেবী উমার আগমন আসন্ন।তবে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে এখনও সপ্তাহ দুয়েক বাকি ৷ এরই মধ্যে উৎসবের মেজাজ বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারে।প্রায় হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন রীতি মেনে মঙ্গলবার থেকে দেবী মৃন্ময়ীর পুজো শুরু হলো।মল্লরাজ দেবী মৃন্ময়ী হলেন মল্লরাজ পরিবারের কুলদেবী। সারা বছরই তিনি বিষ্ণুপুর শহরে রাজ পরিবারের যে মন্দির রয়েছে সেখানে অধিষ্ঠান করেন। কথিত রয়েছে পশ্চিমবাংলার সবচাইতে আদি দুর্গাপূজা হলো এই মরল রাজ পরিবারের কূল দেবী মৃন্ময়ীর পূজো।

মল্ল পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস সূত্রে জানা গিয়েছে, 997 খ্রিস্টাব্দের আগে মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায় । 997 সালের কোনও এক সময়ে ১৯তম মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকার করতে বেরিয়ে জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন।এরপর পথের খোঁজ করতে গিয়ে ক্লান্ত জগৎমল্ল একসময় বটগাছের তলায় বসে পড়েন । সেখানেই নানা অলৌকিক কাণ্ডকারখানার মুখোমুখি হতে হয় রাজা জগতমল্লকে।শেষে রাজা ওই বটগাছের নীচে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপন করার দৈববাণী পান । নির্দেশ মতো রাজা জগৎমল্ল বটগাছের নীচেই দেবীর সুবিশাল মন্দির তৈরি করেছিলেন।পাশাপাশি ঘন জঙ্গল কেটে জগৎমল্ল রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে । তারপর দীর্ঘ 1029 বছর ধরে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী রয়েছেন মল্লরাজদের কূল দেবী মৃন্ময়ী।পরবর্তীতে মল্ল রাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হলে শব্দকে ব্রহ্ম জ্ঞান করে তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয়।

সেই প্রথা আজও চলে আসছে। পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট আজও ঘোষিত হয় তোপধ্বনির মাধ্যমে।কিন্তু এখানে পুজোতে রয়েছে এক অন্য রীতি।সারা রাজ্যে দুর্গাপুজা কালিকাপুরাণ মতে হলেও শুরুর দিন থেকে বিষ্ণুপুরের রাজপরিবার দেবী মৃন্ময়ীয় পুজো করে একটি প্রাচীন বিশেষ পুঁথি অনুসারে। ‘বলিনারায়ণি’ নামে সেই পুঁথির নিয়ম নীতি মেনেই মল্লরাজ পরিবারের পুজো হয় এখনও। রাজার পুজো, তাই পুজোর নিয়ম কানুনও ভিন্ন ধরনের।এই পুজো শুরু হয়, জিতাষ্টমীর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ নবমী তিথি ধরে । এই বছরও তার অন্যথা হল না।আজ নবমাদি কল্পারম্ভে সাত সকালে দেবীর আগমন ঘটে প্রাচীন মন্দিরে । প্রাচীন রীতি অনুসারে আজ রাজ দরবার সংলগ্ন গোপালসায়রে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে।দেবীপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহালক্ষ্মী । সপ্তমীর দিন আনা হবে ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাসরস্বতীকে ।

এই তিন ঠাকুরানি আসলে স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা তিনটি বিশেষ পট । আরাধানা শুরু হয় নিয়ম মেনে।ইতিহাস কখনো পরিবর্তিত হয় না হয়না তার অভিযোজনও। যদিও বর্তমানে কালের নিয়মের সঙ্গে রাজার রাজপাট চলে গিয়েছে, মাটিতে মিশেছে মল্লদের রাজপ্রাসাদ । গড়ের আকারে থাকা প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুর আজ একটি আধুনিক শহর। তবুও মল্লরাজাদের ফেলে যাওয়া নির্দশন আর ইতিহাস আজও ফিসফিস কথা বলে।আজও দেবীর আগমনে মল্লভূম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পুজোর গন্ধ,মেতে উঠেন সারা মল্লগড় বিষ্ণুপুর নিবাসী।এক সময় যে তোপের শব্দ শুনে দূর দূরান্তের প্রজারা জানতে পারতেন দেবীর আগমন বার্তা, তার পরিসর ছোট হয়েছে ৷ তবে বন্ধ হয়নি তোপধ্বনির সেই রেওয়াজ । মা মৃন্ময়ী মন্দিরের পাশে গোপালসায়েরে পাড়ে কামান দাগা হয় আজও । আনন্দে মেতে ওঠে প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ।

রাজপরিবারের বর্তমান যারা উত্তরসূরী রয়েছেন তাদের সুতো ছিঁড়লেও পূজো কটাদিন যেন তারা এক। নেই রাজত্ব, নেই রাজাও। তবুও নিষ্ঠা ভরে পালিত হয়ে আসছে শতাব্দী প্রাচীন মল্লরাজের পরিবারের পুজোর রীতিনীতি।রুজির টানে রাজপরিবারের সদস্যরা এদিক ওদিক গেলেও ঠিক ছুটে এসে হাজির হন মল্লদের ঠাকুর দালানে।এদিন থেকেই মল্লগড় যেন শারদীয়ায় মতে উঠে৷ এখনকার আধুনিক শহর বিষ্ণুপুরের অলিগলিতে শোনা যায় কলরব,হই-হুল্লোড়।



Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

dnews.in