
বল্লভপুর 18 ই অক্টোবর:
এবার হল এর মালিকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন হলের কর্মচারীরা। মূলত গত শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়েছে মেদিনীপুরের একমাত্র স্মৃতি বিজড়িত এই সিনেমা হল। যদিও এই ঘটনায় মেদিনীপুর জুড়ে তার প্রতিবাদ হলেও কর্মহীন পড়েছেন এই হলের কর্মরত কয়েকজন কর্মচারী। তারা এদিন তাদের বেশ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন।এরই পাশাপাশি তারা মেদিনীপুর বাসিকে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

গত শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে গেল মেদিনীপুর শহরের
একমাত্র সিনেমা হল হরি সিনেমা। গত কয়েক বছর ধরে এটিই ছিল শহরের একমাত্র সিনেমা হল।কারণ, শহরের অন্য দু’টি সিনেমা হল অরোরা ও মহুয়া ২০০৮ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে গেছে।তারপর থেকে সিনেমাপ্রেমী শহরবাসীর হলে বসে সিনেমা দেখার একমাত্র ভরসা ছিল এই ‘হরি সিনেমা’।স্বাভাবিকভাবেই এই খবরে ভেঙে পড়েছেন মেদিনীপুর শহরবাসী।হতাশ হলের কর্মী থেকে শুরু করে আশেপাশের দোকানদাররাও।উল্লেখ্য,শহরের বল্লভপুর এলাকায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘হরি সিনেমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে এই হলটি লিজে নিয়ে চালাচ্ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা নাওল কিশোর থারাড। বর্তমানে এই হলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৮ জন কর্মী আছেন।এই ঘটনায় প্রত্যেকেই কর্মহীন হয়ে পড়লেন।এরপর তারা বারংবার মালিককে দেখা করতে বলেন কিন্তু মালিক দেখা না করায় অবশেষে কঠোর অবস্থানে বসলেন এই কর্মীরা।

তাদের অভিযোগ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এভাবে কোন হল বন্ধ করতে পারেন না মালিকপক্ষ।এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। এদিন এই হলের চারিদিকে পোস্টার দিয়ে তারা বিক্ষোভ অবস্থানে বসে পড়েন। তাদের অভিযোগে লেখা ছিল,”বিচার চাই…. কর্মচারীদের সঠিক প্রাপ্য না দিয়ে সিনেমা হলের মালিকপক্ষ অবৈধভাবে জোর করে সিনেমা হল টি বন্ধ করে দিয়েছে।আমাদের প্রত্যেকটি সিনেমা হলের দর্শক এবং মেদিনীপুর বাসীর কাছে করজোড়ে অনুরোধ দয়া করে আমাদের পাশে থাকুন ও আমাদের ন্যায্য প্রাপ্তির জন্য সহযোগিতা করুন…..ইতি হরি সিনেমা হলের কর্মচারীবৃন্দ।” যার ফলে পুজোর মুখে উত্তেজনা সংশ্লিষ্ট এলাকায়অন্যদিকে, হলের মালিক নাওল কিশোর থারাড সাংবাদিকদের বলেন “গত ৪-৫ বছর ধরে প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। টাকা উঠছেনা! কি করে চালাব! তাই বাধ্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।”

যদি ওই সিনেমা হলের বন্ধ হওয়ার ঘটনায় হৈচৈ গোটা মেদিনীপুর জুড়ে।মেদিনীপুর শহরের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তথা শর্ট ফিল্ম নির্মাতা ইন্দ্রনীল দে বলেন, “মনে পড়ে, মায়ের হাত ধরে প্রথম সিনেমা দেখতে এসেছিলাম এই হরি সিনেমা হলে। পরে অনেক বাংলা, হিন্দি সিনেমা দেখেছি। শুক্রবার থেকে মেদিনীপুর শহরে আর কোনও সিনেমা হল থাকবেনা, ভাবলেই কষ্ট হচ্ছে।” শহরের বল্লভপুরে হরি সিনেমা সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মেদিনীপুর টাউন স্কুল (বয়েজ)-এর প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী বলেন, “মেদিনীপুর শহর থেকে একটা ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব, যেভাবেই হোক এই শহরে একটা সিনেমা হল গড়ে তোলা হোক।”

এই বিষয়ে মেদিনীপুর শহরবাসীকে আশ্বস্ত করে অভিনেত্রী- সাংসদ জুন মালিয়া বলেন, “শুনে আমিও খুব হতাশ হলাম। আমি নানাভাবে চেষ্টা করছি, যাতে শহরে অন্তত একটি ভালো সিনেমা হল গড়ে তোলা যায়।এই বিষয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়েরও কথা হয়েছে।”