
নিজস্ব প্রতিনিধি,গোয়ালতোড়:
এই পঞ্চায়েত অফিসে এলে মনে হবে যেন কোন মহানগরী অথবা রাজধানী এলাকায় প্রবেশ করেছি।যেমন একদিকে বাচ্চাদের স্তন্যপান করানোর জন্য রয়েছে বেবি ফিডিং সেন্টার তেমনি অন্যদিকে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব।পাশাপাশি বৃষ্টি সংরক্ষণে রয়েছে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং। গোটা জেলার মধ্যে এই পঞ্চায়েত অফিস নজর কাড়ছে।

এক সময় পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে তাদের বাচ্চাকে স্তন্যপান করাতে সমস্যায় পড়তো গৃহবধুরা।একদিকে পাড়া গা অন্যদিকে চক্ষু লজ্জার ভয়।তবে সেই সমস্যার মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়ালো গোয়ালতোড় জিরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত।মূলত পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ২ নং ব্লকের গোয়ালতোড় থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ ভেতরে রয়েছে জিরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত।খুব ছোট্ট একটা বাউন্ডারির মধ্যে এই অফিস থাকলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের নেওয়া উদ্যোগ গুলি বেশ বড় বড়।এই গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশেই রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র।যেখানে প্রতিদিনই চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন এই কয়েকটি গ্রামের মা ও শিশু থেকে গ্রামবাসীরা।কোলে করে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে তারা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু খিদে পেলে শিশুদের স্তন্যপান করাতে গিয়ে পড়তেন দুর্ভোগে। এই সমস্যার কথা জানতে পেরে অবশেষে শিশুর খাবারের কথা ভেবে গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যেই একটি রুমে ব্যবস্থা করা হয়েছে।যার নাম দেওয়া হয়েছে বেবি ফিডিং কর্ণার।

যেখানে মায়েরা নিশ্চিন্তে বসে সুরক্ষিত ভাবে স্তন্যপান করাতে পারে তাদের শিশুদের। এই ব্যবস্থার ফলে অনেকখানি খুশি তারা।এছাড়াও এলাকায় নির্মাণ কাজের গুণগতমান সমস্যা সমাধানে তাদের গুণ গতমান পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয় তিলকা মুর্মু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব।যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হয় বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর গুণগতমান।তা সে রাস্তাঘাট হোক, কিংবা সরকারি বাড়ি কিংবা পানীয় জলের ব্যবস্থা।শুধু এই গ্রাম পঞ্চায়েতই নয় পাশাপাশি অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ কাজের গুণগতমান পরীক্ষাও করতে আসতে হয় এই গ্রাম পঞ্চায়েতে।পাশাপাশি এলাকায় জল কষ্ট যাতে না হয় তার জন্য জল সংরক্ষণের জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হয় পঞ্চায়েত থেকে।বৃষ্টির জল সংরক্ষনের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলে স্থাপন করা হয়েছে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং।

যার দ্বারা বৃষ্টির জল ট্যাঙ্ক এ সংরক্ষন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।একই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে এলাকার বিভিন্ন ICDS সেন্টার গুলিতে নির্মাণ করা হয়েছে চিলড্রেন পার্ক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের জন্য পাঠাগার। এখানে থেমে নেই তারা। আগামী দিনে যাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে এলাকায়তে অন্ধকারে ডুবে না যায় তার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ICDS সেন্টার গুলিতে সোলার বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রতিনিধিগন।

এই বিষয়ে খুশি গ্রামবাসীরা।স্থানীয় গ্রামবাসী মধুমিতা সরেন বলেন,”আমাদের এর আগে বাচ্চা নিয়ে এলে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে সমস্যা হতো কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত উদ্যোগে রুম দেওয়া হয়েছে এবং তাতে আমরা সুবিধা পেয়েছি।আমরা এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানাই।
স্থানীয় গ্রামবাসী পিনাকী ঘোষ বলেন,”এই গ্রামের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ আমাদের নজর কেড়েছে,ভালো লেগেছে,বিশেষ হিসেবে আমরা গর্বিত।বিশেষ করে এই ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার যেমন মায়েদের সমস্যার সমাধান করেছে সেই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব যা এলাকার গুণগতমান পরীক্ষার ক্ষেত্রে বেশ সুবিধা দিয়েছে। এছাড়াও কি জল সংরক্ষণে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং খুব উদ্যোগী পরিমাণ।

অন্যদিকে পঞ্চায়েত প্রধান শুকুমনি হাঁসদা জানান, “আগে গ্রামবাংলায় যারা এই পাড়ার মহিলারা আসতো বাচ্চাদের নিয়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তারা সমস্যায় পড়তো।বাচ্চাদের স্তন্যপান করাতে গিয়ে লোক লজ্জার ভয়ে তারা বলতে পারত না।তাই পরিকল্পনা মাফিক এটা করা হয়েছে যাতে তাদের সমস্যার সমাধান হয়।আমরা আরো বেশ কিছু কাজ করার উদ্যোগী হয়েছি।”
পাশাপাশি গড়বেতা দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির পঞ্চায়েত সভাপতি দীনবন্ধু দে বলেন,”আমরা ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব সহ বেশ কয়েকটি কাজে উদ্যোগী হয়েছে এবং করতে পেরেছি।আগামী দিনে সোলার প্যানেল সহ বেশ কিছু কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে যাতে এলাকার মানুষ সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা পায়। আমরা চাই সরকারের সমস্ত প্রকল্প সুবিধা পাবে এই গ্রামবাসীরা।