
নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
মেদিনীপুরে এক আশ্রমকে ঘিরে এলাকাবাসীর ক্ষোভ বিক্ষোভ পাশাপাশি এই আশ্রমে মেয়েকে রেখে মেয়ে কে সঙ্গে নিয়ে যেতে না পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মেয়ের মা। যা নিয়ে উত্তেজনা মেদিনীপুর শহরে।যদিও এই আশ্রমে দেহ ব্যবসা সহ বিভিন্ন অসামাজিক কুকর্মের অভিযোগ করলেন এলাকাবাসী।অন্যদিকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে না যেতে পেরে শেষে আবাসিকদের হাতে মার খেয়ে রাস্তায় পড়ে রইলেন মা।

এবার মেদিনীপুর শহরে একটি আশ্রমকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মেদিনীপুর।আশ্রমে নিজের মেয়েকে রেখে তার সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখা করতে না পেরে রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মা অন্যদিকে আশ্রম নিয়ে দেহ ব্যবসা সহ অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ এলাকাবাসীর।ঘটনা ক্রমে জানা যায় মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে “রামকৃষ্ণ আশ্রম ঠাকুরবাড়ি”নামে একটি আশ্রম রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।এই আশ্রমে স্বামী জয়ানন্দ নামে এক ব্যক্তি মহারাজ নাম দিয়ে আশ্রম খুলেছেন এবং সেখানে তিনি প্রায় ১৪ জনের মত আবাসিক রেখে রীতিমতো আশ্রম চালান। কিন্তু এই আশ্রম ঘিরে একাধিক অভিযোগ এলাকাবাসীর।কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন আর দশটা আশ্রমের মতন এ আশ্রম একটু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের তৈরি।পুরো আশ্রমটি তিন দিকে ঢাকা কোন জায়গায় সামান্যটুকু ফাঁকফোঁকর নেই।এছাড়াও পরিচিতি লোক ছাড়া এই আশ্রমের দরজা খোলা হয় না বলে অভিযোগ এলাকার মানুষের।

সেইসঙ্গে এলাকার মানুষের এও অভিযোগ রাতের অন্ধকারে নামী দামী গাড়ি এসে ঢোকে।তবে সকালে আলো ফোটার আগেই পুনরায় সেই গাড়ি ছেড়ে দিয়ে যায় আবাসিকদের বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।পরিচিতি লোক ছাড়া আর ঢুকতে দেওয়া হয় নাই আশ্রমে অন্য কাউকে।গোটা এলাকা জুড়েই রয়েছে সিসিটিভি।কিছু বলতে গেলেই বা অভিযোগ জানাতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় একাধিক মামলা মোকাদ্দামা সেইসঙ্গে পুলিশের ভয়। যা নিয়ে বারবার মাস পিটিশন দিয়েও ভয়ে সরিয়ে রেখেছেন এ এলাকাবাসীরা।যদিও এই দিন নিজের মেয়েকে দেখা করতে এসে দেখা না করতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন এক মেয়ের মা।মেয়ের মায়ের অভিযোগ তিনি তার মেয়েকে আশ্রমে দিয়েছিলেন ছোটবেলায়। এরপর মাঝখানে তিনি মেয়েকে নিয়ে যান এবং বাড়িতে ছিল।পরবর্তীকালে আবার কিছু কারণের জন্য আশ্রমে চলে আসে তার মেয়ে।

এরপর মাঝে কেটে গেছে বছর দুই তিনেক।কিন্তু এরপর যখনই তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন আশ্রমে কিছুতেই তাকে দেখা করতে দেওয়া হয় না।এমনকি মেয়ে দরজার ভেতর থেকে জানিয়ে দেয় তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান না। বাধ্য হয়ে এই মেয়ের মা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যান।এর আগে এক জন্মদিনে মেয়েকে আশীর্বাদ করতে এসেও খালি হাতে ফিরে যেতে হয় মাকে।তিনি এ নিয়ে বহু জায়গায় অভাব অভিযোগও জানিয়েছেন কিন্তু তাতেও সদুউত্তর মেলেনি।এই দিনও তিনি মেয়েকে দেখতে ছুটে আসেন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে।কিন্তু সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশত তাকে গেটের বাইরে অপেক্ষা করে রাখেন এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহারাজ।যদিও আশ্রমের ভেতর থেকেই মেয়ে জানিয়ে দেয় তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান না।তা নিয়ে ক্ষোভ ফেটে পড়েন এই মহিলা। তার অভিযোগ তার মেয়েকে ওষুধ খাইয়ে বশ করে রেখেছে এই মহারাজ। এছাড়া একাধিক কুকর্ম চলে এই দরজা বন্ধ আশ্রমে। যা নিয়ে এদিন ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।এই ঘটনায় ছুটে আসতে হয় পুলিশ প্রশাসন সেইসঙ্গে পৌর প্রশাসনের লোকজনদের।যদিও সকাল থেকে অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত রাতে আবাসিকদের হাতে মার খেয়েই রাস্তায় পড়ে রইলেন মা।

এ বিষয়ে মেয়ের মা মনিকা দাস বলেন,”আমি আমার মেয়েকে আশ্রমে পাঠাইনি। বরং এই মহারাজ তার সাঙ্গ পাঙ্গ কে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে জোর করে নিয়ে এসেছে। এবং এখানে রীতিমত ওষুধ খাইয়ে বস করে রাখা হয়। আমি যতবার দেখা করতে এসেছি আমার মেয়েকে কোনভাবেই দেখা না করে বরং ভেতর থেকেই যাব না বলেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।এখানে এই জয়ানন্দ মহারাজ দরজা-জানলা লাগিয়ে কুকর্ম করে বেড়ায়।এর সঙ্গে দেহ ব্যবসা ও সামাজিক কাজে লিপ্ত।আমি আমার মেয়েকে না নিয়ে কিছুতেই বাড়ি ফিরব না।

অন্যদিকে এলাকাবাসী তুলিকা ঘোষ বলেন রাতের অন্ধকারে বড় গাড়ি ঢুকে মেয়েগুলোকে নিয়ে যায় আবার দু তিন ঘন্টা পর ভোর রাতে ছেড়ে দিয়ে যায়। কি এমন সেবা দেওয়া হয় এই আবাসিকদের সেগুলোই আমরা জানতে চাই।এছাড়াও সমস্ত দিকের দরজা-জানলা এমনকি পাঁচিলের উপরের টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছে মহারাজ।আশ্রমের দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত না হয়ে বরং বন্ধ।আমাদের মনে হয় ভেতরে এমন কোন অসামাজিক কুকর্ম হয় যা ঢাকতেই এই ধরনের ঘেরাটোপ।এলাকাবাসী নবনীতা গাঙ্গুলি বলেন এটা কোন আশ্রম বলে মনে হয় না আমাদের। দীর্ঘদিন আমরা এখানকার এলাকার বাসিন্দা।আমরা মনে করি এটা কোন নিজস্ব ফার্ম হাউস।আমাদের কোনদিন ঢুকতে দেয় না।দীর্ঘক্ষণ বেল বাজিয়ে আজ পর্যন্ত ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাইনি।এটা কি ধরনের আশ্রম। এখানে অসামাজিক কাজকর্ম হয় বলেই আমরা মনে করি।

এলাকাবাসী সজল কুমার ঘোষ বলেন এটা ঠাকুর বাড়ির নাম দিয়ে আশ্রম চালাচ্ছে না এক ভন্ড মহারাজ।এখানে প্রায় ১৪-১৫;জন মেয়েকে তিনি রেখেছেন যাদের রোবটের মতন ব্যবহার করা হয়।ঠাকুরের আশ্রম অথচ সবার জন্য গেট উন্মত্ত নয়।পরিচিতি মানুষ ছাড়া কিছুতেও কাউকে ইনারা ঢুকতে দেন না।চারিদিকে ঘেরাটোপের মধ্যে রাতের অন্ধকারে নামিদামি বড় বড় গাড়ি ঢুকে আবার কিছুক্ষণ পর তা বেরিয়ে যায়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এখানে দেহ ব্যবসার সঙ্গে এমন কিছু অসামাজিক কাজকর্ম হয় যার জন্যই এত ঘেরাটোপ।এই নিয়ে বহু জায়গায় আমরা আবেদন জানিয়েছি জানতেও চেয়েছি তার পরিবর্তে জুটেছে পুলিশি হয়রানি এবং মহারাজ থেকে মামলা।
যদি এদিন এই সব যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। এক বাক্যে জানালেন এসব মিথ্যে ও ভুয়ো অভিযোগ।