
সেতুয়া লেন 14 ই অক্টোবর:
একসময় মেদিনীপুরের কালীপুজোর এত প্রচলন ছিল না।তবে সেই সময় থেকে সেতুয়াদের পুজোয় ভিড় ছিল দুর দূরান্তের মানুষের। জাগ্রত কালী মায়ের পুজোতে বলি হয় না।তবে এখনও পরম্পরা মেনে নিরঞ্জন পর্ব হয় পরিবারের সদস্য দ্বারা।প্রায় 100 বছরের অধিক এই পুুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহ্যমন্ডিত এবং জাগ্রত কালী মায়ের পুজো,যার মধ্যে এক ও অন্যতম হল এই মেদিনীপুর শহরের সেতুয়া পরিবারের কালীপুজো। প্রায় শতাধিক বছরের উপরে এই পুজো হয়ে আসছে এই পরিবারে।পরিবার সূত্র অনুযায়ী জানা যায়,একসময় প্রপিতামহ সুরেন্দ্রনাথ সেতুয়ার হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো।মূলত স্বপ্ন দেশ থেকে এই পুজোর সূত্রপাত। এই সময় বেশ জাঁকজমক ভাবে ঢাক ঢোল বাদ্দি সহকারে ভোররাত পর্যন্ত পুজো হতো। তবে এই কালি মায়ের পুজোতে কোন বলি প্রথা ছিল না। মূলত গোস্বামী মতে এই পুজো করতেন এই পরিবারের সদস্যরা।এই পুজো দেখতে শুধু পাড়ার নয় আশেপাশের জেলার মানুষ হাজির হতেন এত জাগ্রত এই প্রতিমা।

সারা সন্ধ্যে থেকে পূজোর আয়োজন করা হয় নৈবিদ্য সহকারে। এরপর আতশবাজি প্রদর্শনী,পটকা ফাটানোর মধ্য দিয়ে মায়ের পূজো হয় ভোর পর্যন্ত। যদিও তার পরে অন্নকূট প্রসাদ গ্রহণ করেন বহু মানুষ।যদিও বর্তমানে বেশ কিছু নিয়ম রীতি পরিবর্তন করেছে পরিবার।কারণ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন ব্যান্ড পার্টি বা ডিজে বাজিয়ে বিসর্জন যায় না প্রতিমার। নিয়ম সংস্কৃতি মেনে প্রতিমা নিরঞ্জন করে পরিবার আগের মতন অত জাঁকজমক না হলেও এই সকল রীতিনীতি মেনে চলছে, এই পরিবারের সদস্যরা।ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি।একদিকে চলছে মন্ডপ তৈরির কাজ অন্যদিকে প্রতিমা গড়ার কাজ।

উল্লেখ্য,এই সুরেন্দ্রনাথ সেতুয়ার নাম ধরে এলাকায় নাম হয়েছে সেতুয়া লেন।যদিও তাদের বংশধরেরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তবে পুজোর দিনে সকলে হাজির হন একসাথে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,অনেকে বলে থাকেন মেদিনীপুরের প্রথিত যশা লচিপদ্দার প্রতিমার সঙ্গে এই প্রতিমার অনেক মিল রয়েছে।কেউ একে দুই বোনের সঙ্গেই তুলনা করেছেন বলে জানা যায়।

এই বিষয়ে পরিবারের সদস্য স্বপন কুমার সেতুয়া বলেন,”আমরা পুরানো সেই রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি।বেশ কিছু জাঁকজমক কমেছে অর্থনৈতিক এবং বিভিন্ন কারণে।তবে সেই ভোর পর্যন্ত পুজো হওয়া, তা আমরা এখনো পালন করে চলছি। তবে নতুন আধুনিকতার সঙ্গে বিসর্জনের ওই তাসা ব্যান্ড পার্টি আমাদের হয় না।নির্দিষ্ট অনুশাসন ও সাংস্কৃতি মেনেই নিরঞ্জন পর্ব হয় আমাদের প্রতিমার।