
পলাশ গা 18 ই সেপ্টেম্বর:
এক সময় ছিল হাতির ভয়, আর সেই ভয়েই পুজো থেকে বঞ্চিত ছিলেন মহিলারা। মুশকিল আসান হলো সেই মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প।সেই টাকায় হাতির ভয় কাটিয়ে এবার নিজেদের পাড়ার পুজোতে মেতে উঠতে চলেছে জঙ্গলমহল অধ্যুষিত ভাদুলিয়ার মহিলারা।প্রায় ৩০০ টি পরিবার এই পুজোর চতুর্থ থেকে দশমী পর্যন্ত নিজেদের হাতে অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ভেবে তাদের মধ্যে খুশির হাওয়া।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়ি পাল থানার অন্তর্গত রয়েছে ভাদুলিয়া গ্রাম।এই ভাদুলিয়া গ্রাম জঙ্গলমহল অধ্যুষিত।এই গ্রামেই এত ঘন জঙ্গল যে হাতির দৌরাত্ম তো রয়েছে, সেই সঙ্গে প্রায় সময় শেয়ালেরও উৎপাত দেখা দেয়।একসময় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছিল ঠিক এখানেই।এই গ্রামের লোধা সবার অধ্যুষিত কয়েক হাজার মানুষ বাংলা আর বাঙ্গালীর বিশেষ উৎসব দুর্গাপুজোর জন্য কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হতো পাশের গ্রামে।পুজোতে অংশগ্রহণ করে অঞ্জলি দিলেও ফেরার আতঙ্ক থাকতো তাদের মধ্যে। দিনের পর দিন এই অবস্থায় কাটানোর পর অবশেষে আতঙ্ক কাটাতে নিজেরাই উদ্যোগই হলেন দুর্গা পূজা আয়োজনে। তিনটি গ্রামের প্রায় শ তিনেক পরিবারের জীবিকা চাষবাস,মুরগি চাষ,শাল পাতা তৈরি করা। সম্প্রতি এই ভাদুলিয়া গ্রামকে আম্মা সোসাইটির কয়েকজন ইয়াং যুবক-যুবতী রঙিন করে তুলেছেন।

গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি গিয়ে তারা আঁকি-বুকি করে নামকরণ করেছে পলাশ গা। এই নামকরণের পর এবারে উদ্যোগ নেওয়া হলো দুর্গা পুজোর। মূলত এই দূর্গা পূজার উদ্যোক্তা গ্রামের মহিলারা। সারাদিন সংসার এবং বাকি কাজকর্ম সেরে তারা বেরিয়েছেন চাঁদা তুলতে।এই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেওয়ার লক্ষীর ভান্ডারে টাকায় তারা আয়োজন করছে যেন এই পুজোর। প্রথম বছর নিজের গ্রামে নিজের হাতে পুজোর আয়োজন করবেন,অঞ্জলি দেবেন সেই ভেবে আনন্দে শিহরিত এই কয়েকশো মহিলা। তাদের বক্তব্য আর হাতির আতঙ্ক নয় বরং আতঙ্ক থেকে দূরে থাকতেই এই পূজোর আয়োজন।যা আগামী প্রজন্মকে আর হাতির আতঙ্ক তাড়া করবে না।

এ বিষয়ে পূজা উদ্যোক্তা সুলেখা সিং,পূর্ণিমা ঘোষরা বলেন,”এত বছর ধরে আমাদের গ্রামে পুজো হয়নি আমরা তিন-চারটা গ্রাম পেরিয়ে পুজো অঞ্জলি দিতে যেতাম।একদিকে ছিল হাতির আতঙ্ক অন্যদিকে ছিল ঘন জঙ্গল।আমরা দীর্ঘদিন সেই আতঙ্কেই দিন কাটিয়েছি। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটেছে এলাকায়।আমরা এরপর মনে মনে ঠিক করেছিলাম আমরা দুর্গাপূজা করব। কিন্তু টাকা জোগাড়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।অবশেষে দিদির লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দেওয়ায় সে টাকা জমিয়ে আমরা পুজোর সূচনা করতে চলেছি।”অন্যদিকে উদ্যোক্তা সরস্বতী ঘোষ,পূর্ণিমা সিং রা বলেন,”কখনো নয়াগ্রামে কখনো বা মুড়াকাটা কখনো বা মেদিনীপুরে যেতে হতো পুজোর অঞ্জলী দিতে।একদিকে হাতির আতঙ্ক অন্যদিকে বৃষ্টি তারপর রাত্রে ফেরার একটা আতঙ্ক থেকেই থাকতো।অবশেষে আমরা সকলে উদ্যোগ নিয়ে করতে পেরেছি আমাদের পুজো। আমরা সবাই মিলে প্রচুর আনন্দ করবো এই পুজোয়।”

যদিও পাশাপাশি গ্রামবাসী শিশির রায়,বীথিকা রায় বলেন,”সারা বছর থাকতাম গ্রামে কিন্তু পুজোর সময় মনটা খারাপ হয়ে যেত। তাই আমরা শ্বশুর ঘরে চলে যেতাম পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে।কারণ আমাদের গ্রামে কখনো দুর্গাপুজো হয়নি।এই বছর হচ্ছে তাই মনের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ আর পুজোতে অন্য কোথাও যেতে হবে না আমাদের এই ভেবে। তাছাড়া জন্ম থেকে দেখেছি এ গ্রামে কখনো দুর্গাপুজো হয়নি।পাশাপাশি গ্রামের একটা নতুন নামও পাওয়া গিয়েছে ভাদুলিয়ার পরিবর্তে পলাশ গ্রাম। আমাদের এবারের পুজো স্মরণীয় হয়ে থাকবে।