
নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রায় ৩০ হাজারের মঙ্গলসূত্র মাত্র ২০ টাকায় এক বৃদ্ধ দম্পতিকে দিয়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের এক গয়নার দোকানের মালিক। গত দু’দিন ধরেই সমাজ মাধ্যমে এই ভিডিয়োটি ঘুরছে। যে ভিডিয়োয় একটি সুন্দর কাহিনি ধরা পড়েছে। যা নিয়ে চর্চাও হচ্ছে বেশ।কিন্তু কেন তিনি ওই মূল্যবান মঙ্গলসূত্রটি মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধ দম্পতির হাতে তুলে দিলেন, এই নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। সেই কৌতূহলের নিরসন করলেন খোদ ওই গয়নার দোকানের মালিকই।

বর্তমান সমাজে যেখানে বিয়ের থেকে ডিভোর্সের সংখ্যা বেশি যেখানে নারী-পুরুষ এক জায়গায় থাকতেই চাইছে না সেখানে এক বৃদ্ধ বৃদ্ধার কাহিনী মন জয় করেছে সোশ্যাল মাধ্যম।স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের শেষে বয়সে এসে একটি মঙ্গলসূত্র কিনতে গিয়ে ইতস্তত বোধ করেছিলেন এই বৃদ্ধ বৃদ্ধা। এ দোকান ও দোকান দোকান হচ্ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ।অবশেষে নজরে আসে মালিকের।তাই ৩০ হাজারের মঙ্গলসূত্র দিলেন মাত্র কুড়ি টাকায়।সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে দোকান মালিক নীলেশ খিবন সরা। তিনি বলেন,‘‘ওই বৃদ্ধ দম্পতি মঙ্গল সূত্রটি কিন্তু বিনামূল্যে নিতে চাননি।বরং যেটুকু তাঁদের কাছে গচ্ছিত টাকা ছিল তার বিনিময়েই একটি মঙ্গলসূত্র নিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মঙ্গলসূত্রের বিপুল দাম শুনে একটু ইতস্তত করছিলেন।তাঁদের কাছে সর্বসাকুল্যে ১১০০ টাকা ছিল।’’এই বয়সে দম্পতির পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা তাঁকে মুগ্ধ করেছে।

যেখানে এখন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা যায়, সংসার ভাঙতে দেখা যায়,এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই বৃদ্ধ দম্পতির পারস্পরিক সম্পর্ককে একটা দৃষ্টান্ত হিসাবেই দেখেছেন তিনি।আর সে কারণে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন নীলেশ।তিনি জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও,স্ত্রীকে মঙ্গলসূত্র কিনে দেওয়ার জন্য যে টাকা সঞ্চয় করে ছিলেন বৃদ্ধ,সেই দৃশ্য তাঁকে মুগ্ধ করেছে।আর তাই কোনও ইতস্তত না করেই ৩০ হাজার টাকার মঙ্গলসূত্র মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে তৃপ্তি বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন নীলেশ।নীলেশ জানিয়েছেন, তাঁর একটি দোকানে প্রথমে এসেছিলেন ওই দম্পতি। কিছু ক্ষণ গয়নাগুলি দেখার পর তার পর না কিনেই বেরিয়ে যান। ঘণ্টা দুয়েক ধরে পাশের দোকানগুলিতেও ঘোরাঘুরি করেন। তার পর নীলেশের আরও একটি দোকানে যান ওই দম্পতি।

সেখানে তাঁর দোকানের কর্মী দম্পতির পোশাক এবং চেহারা দেখে ভেবেছিলেন কোনও আর্থিক সাহায্যের জন্য এসেছেন।কিন্তু বৃদ্ধ ওই কর্মীকে জানান, স্ত্রীর জন্য মঙ্গলসূত্র কিনবেন।বৃদ্ধকে মঙ্গলসূত্র দেখানো হয়।একটি মঙ্গলসূত্র হাতে নেন বৃদ্ধ। দাম জিজ্ঞাসা করেন। দাম শুনে একটু ইতস্তত করেন। নীলেশ বলেন, ‘‘বৃদ্ধ ১১০০ টাকা এবং কিছু খুচরো পয়সা বার করেন। মহিলা ১০ এবং ২০ টাকার কয়েকটি নোট ব্যাগ হাতড়িয়ে বার করলেন। আমি তখন দোকানেই ছিলাম। গোটা বিষয়টি দেখছিলাম। তার পরই তাঁদের বললাম এই টাকা লাগবে না। আপনারা মঙ্গল সূত্রটি নিয়ে যান। কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতি বিনামূল্যে নিতে চাইছিলেন না। অনেক জোরাজুরির পর বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকার দু’টি নোট নিই।

তার বিনিময়ে মঙ্গলসূত্র নিতে রাজি হন দম্পতি।’’ জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম নিভৃতি শিন্দে এবং তাঁর স্ত্রী শান্তাবাই।এই দম্পতি জালনা জেলার বাসিন্দা।