
নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
বর্তমানে ভারতীয়দের মধ্যেও অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। গত ৫ থেকে ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন,অতিরিক্ত ধূমপান ও লাগামছাড়া মদ্যপান ক্যানসার হওয়ার অন্যতম বড় কারণ।

মূলত কোভিডের ঝুঁকি কমাতে কাজে এসেছিল এমআরএনএ (মেসেঞ্জার আরএনএ) টিকা। এ বার সেই এমআরএনএ প্রযুক্তিকেই কাজে লাগিয়ে ক্যানসারের টিকা তৈরির দাবি করলেন ভারতীয় চিকিৎসক বিনোদ পি বালচন্দ্রন। ‘অটোজিন সেভুমেরন’ নামে প্রতিষেধকটি অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার নির্মূল করতে পারবে বলে দাবি করেছেন তিনি। ‘নেচার’ জার্নালে এই গবেষণার বিষয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটেরিং ক্যানসার সেন্টারে ক্যানসার বিষয়ে গবেষণা করছেন বালচন্দ্রন। সেখানকার গবেষণাগারেই নতুন টিকা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তিনি।ক্যানসার রোগীর শরীরে টিকাটির ‘ট্রায়াল’ শুরু হয়েছে বলে খবর।

এই কাজে চিকিৎসককে সহযোগিতা করছে বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়োএনটেক ও বায়োটেকনোলজি কোম্পানি জেনেটেক। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬ জন ক্যানসার রোগীর শরীরে প্রতিষেধকটি প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। দেখা গিয়েছে, টিকার ডোজ়ে অগ্ন্যাশয়ে গজিয়ে ওঠা টিউমার কোষ ধীরে ধীরে নির্মূল হচ্ছে। গত ২০১৭ সাল থেকে ক্যানসারের টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন বালচন্দ্রন। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বে যত রকম ক্যানসার আছে, তার মধ্যে প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি বেশি অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে। একবার ধরা পড়ার পরে সেই রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। মাত্র ১৩ শতাংশ অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী পাঁচ বছর বেঁচে থাকেন। আর এমন ক্যানসার সারাতে যে কেমোথেরাপি,রেডিয়ো থেরাপি দেওয়া হয়,তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও সাংঘাতিক। তাই ক্যানসারের তীব্রতা কমানো যায়,এমন টিকা নিয়েই গবেষণা শুরু করেন তিনি।কাজে লাগান মেসেঞ্জার আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) প্রযুক্তিকে।


আসুন দেখে নিই কি ভাবে নির্মূল হবে এই ক্যান্সার?
নতুন টিকাটি কেবলমাত্র ক্যানসারের রোগীদের জন্যই। এটি আগে থেকে দেওয়ার জন্য নয়, এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক। ক্যানসার ধরা পড়ার পরেই টিকাটির ডোজ় দেওয়া শুরু করতে হবে। মেসেঞ্জার আরএনএ-র কাজ হল শরীরের কোন কোষে অস্বাভাবিক কী ঘটছে, তার খবর এনে দেওয়া। অগ্ন্যাশয়ে যদি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজন শুরু হয় এবং তা টিউমারের চেহারা নিতে শুরু করে, তা হলে এই টিকার ডোজ়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধী টি-কোষ (ইমিউন কোষ) সক্রিয় হয়ে উঠবে। টি-কোষকে বলা হয় ‘ঘাতক কোষ’, যা ক্যানসারের প্রোটিন দেখলেই তাকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়। এই টিকাটিও সে ভাবেই কাজ করবে বলে দাবি চিকিৎসকের।

তবে আরও অনেকের উপর পরীক্ষার পরেই টিকাটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দেওয়া যাবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।