
মেদিনীপুর 26 সে অক্টোবর:
হুগলির জমিদার বাড়ি ছিল এই ঘোষ পরিবার তারই এক সদস্য দ্বারিকানাথ ঘোষ। ব্যবসা-বাণিজ্য সূত্রে মেদিনীপুরে এসেই শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন।এই পুজোর মূল বিশেষত্ব হলোই বলি প্রথা।একসময় মহিষ বলি হলেও কালক্রমে তা পাঁঠা ও কুমড়ো বলি হয়। ষষ্ঠ জেনারেশনের সদস্যরা পুজো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এ কদিন।

দুর্গা কালীর পর এবার জেলায় জেলায় মেতেছে জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুরানো ঐতিহ্যবাহী পুজো হলো এই ঘোষ বাড়ির জগধাত্রী পুজো।মূলত মেদিনীপুর শহরের কাঁথকালি এলাকায় রয়েছে এই ঘোষ বাড়ি দ্বারিকা নাথের ভূমি। পরিবার সূত্রে জানা যায় হুগলি থেকে এই ঘোষ পরিবার ঘোষ চলে আসেন মেদিনীপুরে ব্যবসা-বাণিজ্য সূত্রে। আর এখানে এসেই ঘোষ পরিবারের দ্বারিকানাথ ঘোষ তিনিই প্রথম দুর্গাপূজার আদলেই শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো।সেই থেকেই এলাকায় ঘোষ বাড়ির জগধাত্রী পুজো পরিচিতি হয়ে ওঠে।এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হলো যতক্ষণ না দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয় ততক্ষণ এর প্রতিমা শুরু তৈরি হওয়ার কাজ শুরু হয় না।নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পরেই তার মাটি নিয়ে এসেই শুরু হয় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা।এই পূজোর আরেকটি বিশেষত্ব হল এই পুজোতে যে ধুপ জ্বালানো হয় তা ষোলো রকম মসলা দিয়ে ধূপ তৈরি করেন বাড়ির মেয়েরা।

বাইরে থেকে কোনরকম ধুপ কেনা হয় না মাকে পুজো দেওয়ার জন্য।আগে কুমড়ো,লাউ এসব বলি হত এখন তারই পাশাপাশি দুম্বা, পাঁঠা প্রভৃতি বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে এই বাড়িতে।পূজোর সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমী দশমীতে চলে এ বলি প্রথা এবং তারই মাংসের প্রসাদ হিসাবে খেতে ভিড় জমান পরিবারসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষজন।এই পুজো প্রায় ৩০০ বছরের অধিক পুরানো বলে জানা যায় পরিবার সূত্রে।ষষ্ঠ জেনারেশনে পড়লো এই পুজো।ঘোষ পরিবারের বংশধরেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে যার সংখ্যা প্রায় দেড়শ জনের অধিক।এই পূজার আরেকটি বিশেষত্ব হলো এই পুজোতে প্রতিমা শুরু হওয়া থেকে বিসর্জন পর্যন্ত স্পর্শ করা অধিকার থাকে না বাড়ির পুরুষদের।দূর থেকে প্রণাম এবং পুজো দিতে পারবেন কিন্তু স্পর্শ করতে পারবেন না তারা।অবশেষে ঘট বিসর্জনের পরেই যখন প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় তখনই পুরুষেরা অধিকার পায় মায়ের সেবা করার। এভাবেই বংশপরম্পরায় হয়ে আসছে ঘোষ বাড়ি জগদ্ধাত্রী পুজো। যদি ওই ঘোষ বাড়ির পুজো নিয়ে সম্প্রতি গান রচনা করেছেন ঘোষ পরিবারে সদস্য সুশান্ত ঘোষ।

এই বিষয়ে দেব প্রসাদ ঘোষ বলেন,”বংশপরম্পরায় ঘোষ বাড়ির পুজো হয়ে আসছে বরং এখন আরো বেশি ব্যক্তি লাভ করেছে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায়।আমাদের পুজোর মূল বিশেষত্ব হলো পূজোর ধুপ আমাদের বাড়ির মেয়েরাই বানায়।আমাদের কোনটা কেনা হয় না। এছাড়াও আমাদের এই পুজোয় প্রচুর পরিমাণে পাঁঠা বলি হয় যা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও রীতিনীতি। প্রথম দ্বারিকানাথ ঘোষের হাত ধরেই এই পুজোর সূত্রপাত হয়েছিল।

অন্য দিকে পরিবারের আরেক সদস্য সুশান্ত ঘোষ ও অগ্নিজ ঘোষ বলেন,”আমরা জমিদার পরিবারের সদস্য। এক সময় এই পুজোতে মহিষ বলি হত এরপর কালক্রমে তা পরিবর্তন হতে হতে এখন পাঁঠা, ভেড়া বলি হয়। আমাদের এই পুজো রীতিনীতি একই রয়েছে।তবে এখন রিস্ক হয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাঁধে প্রতিমা বিসর্জন পর্ব করিনা বরং গাড়িতে করে বিসর্জন করি। আমাদের এই মায়ের পুজো দেখতে ও প্রসাদ খেতে দূর দূরান্তের বহু মানুষ ছুটে আসে।