Freedom Fighters Pujo:গান্ধীজীর বিদেশী দ্রব্য বর্জন,স্বদেশী গ্রহণ করে আদি কর্ণেল গোলার মা এখনও স্বদেশী অলংকারে ভূষিত হন!এ এক অন্য বিপ্লবীদের পূজার কাহিনী

Share

নিজস্ব প্রতিনিধি,কর্ণেলগোলা:

অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন বিপ্লবীদের পুজো নামে পরিচিত কর্নেল গোলা আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি।এবছর এই পুজো ৯১ তম বর্ষে পদার্পণ করল।আদি পুজোতে এবারের থিম কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতবর্ষের সুপ্রিম কোর্টের ২৫০ বছর পূর্তি স্মরণ।সেই সঙ্গে জঙ্গলমহলের অবিসংবাদিত নেত্রী কর্ণগড়ের রানী শিরোমনির গ্রেফতারির ২২৫ বছর পূর্তি স্মরণ এর সঙ্গে জঙ্গলমহলের দেশপ্রেমিক বিরসা মুন্ডার দেড়শ তম জন্মবর্ষ স্মরণ।

কর্ণেলগোলার আদি মা

এই পুজো নিয়ে বলতে গেলে বলা যায় ১৯৩১-৩২ ও ৩৩ সালে পরপর তিনজন অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যথাক্রমে পেডি ডগলাস এবং বার্জ মেদিনীপুর সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামী বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার বিপ্লবীদের দ্বারা নিধন হয়ে যাবার পর মেদিনীপুরে কোন কর্মরত আই সি এস(ICS)বিপ্লবীদের ভয়ে মেদিনীপুরের দায়িত্ব নিতে চাইনি।সেই সময় ব্রিটিশ সরকার এরকম বাধ্য হয়ে প্রশাসনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পি,জে গ্রিফিথ নামে এক অবসরপ্রাপ্ত আই সি এস কে মেদিনীপুর জেলায় পাঠিয়েছিলেন।যা ছিল এক বিরলতম ঘটনা।তার আমলে মেদিনীপুর শহরবাসীকে চরম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল।একদিকে মেদিনীপুরের শহরের সন্ধ্যার পর আপামর জনসাধারণ যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারে তার জন্য চালু হয়েছিল সান্ধ্য আইন।মেদিনীপুর শহরের ক্লাব,স্কাউট লাঠিখেলা,কুস্তি আখড়া সমস্ত কিছু কিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।যাকে এক কথায় শহরকে জেলখানায় রূপান্তরিত করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসন।

এরই পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকার মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবীদের দমন করতে ১৮০০ অতিরিক্ত পাঠান সেনা নিয়োগ করেছিল এবং সেই পাঠান সেনার দায়ভার বাবদ ৬৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত কর এই মেদিনীপুর বাসীর উপর চাপিয়ে দিয়েছিল।এরকম আপাত কল্পনাতিত জটিল পরিস্থিতিতে ব্যারিস্টার বীরেন্দ্রনাথ শাসমল এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামী দেবেন্দ্র লাল খান, ব্যারিস্টার ক্ষীরোদ বিহারী দত্ত,কিশোর পতি রায়,অক্ষয় দাসগুপ্ত প্রমুখ দিকপাল স্বদেশী নেতাও স্বাধীনতা সংগ্রামী পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রাহ্মসমাজ মন্দির কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বিমল দাশগুপ্তের মতো শহরে কিছু উৎসাহী বিপ্লবী যুবকের প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল এই বিপ্লবীদের প্রাণকেন্দ্র কর্নেল গোলায় ১৯৩৪ সালে সর্বজনীন দুর্গোৎসব।এর উপলক্ষ্য মাতৃ আরাধনা হল উদ্যোক্তাদের তৎকালীন সময় মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করা।তবে সে সময় গান্ধীজীর বিদেশি দ্রব্য বর্জন নীতির কঠোর বাস্তবায়নের ফল স্বরূপ সেই সময় থেকেই কোন কৃত্তিম অলংকার বস্ত্র মায়ের গায়ে চাপানো হয়নি এবং সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে এই পুজোয়।এরপর ব্রিটিশরা গিয়েছে দেশ ছেড়ে ভারত পেয়েছে স্বাধীনতা।তবে সেই পুজো আজ ও হয়ে আসছে যা আদি কর্নেলগোলা পুজো হিসেবেই পরিচিত।আজও এখানকার মা দুর্গা সেই স্বদেশী অলংকারী ভূষিত হন।এবারেও পঞ্চমী থেকে ষষ্ঠী,সপ্তমী,নবমী,দশমী পর্যন্ত নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রেখেছে এই পুজো কমিটি।এরই সঙ্গে বিদ্রোহীনি রানী শিরোমনি স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর সেনা বীরসা মুন্ডার স্মরণিকা এবং সুপ্রিম কোর্টের আড়াইশো বছর প্রতি স্মরণে সত্যমেব জয়তে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে পুজো কমিটির সদস্য ও তীর্থঙ্কর ভকত বলেন,”পুজো যেভাবে তৎকালীন সময়ে বিপ্লবীরা শুরু করেছিলেন ঠিক সেই ভাবেই আমাদের হয়ে আসছে। আমাদের মা স্বদেশী অলংকারে ভূষিত হন।মূলত তৎকালীন সময় বিপ্লবীদের একজোট হওয়ার জন্য যে পুজো আজও মানুষের মনে সাড়া ফেলে,জাঁকজমক ভাবে আমাদের পুজো হয়।


Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

dnews.in