নিজস্ব প্রতিনিধি,পাহাড়িপুর:
সাত পুরুষ ধরে চলে আসা রায় জমিদার বাড়ির বড় ছেলের মৃত্যুতে স্থান পরিবর্তন।পুজোর জৌলুস কমলেও রীতি রিচুয়াল বজায় রেখেছে বর্তমান সেবায়েতরা।তবে মহিষ বলি বিলুপ্ত হয়েছে তার জায়গায় ছাগল কুমড়ো বলি দিয়ে পুজো টিকিয়ে রেখেছেন বর্তমান রায় বাড়ির সদস্যরা। সাবেকি প্রতিমার সঙ্গে জমিদার বাড়ির পুজো এখনো নজর কাড়ছে এলাকার।
একসময় পশ্চিম মেদিনীপুরের জকপুরে রায় জমিদার বাড়ির পুজো ধুমধামে অনুষ্ঠিত হতো।বর্তমান প্রজন্মের মতে ঢাকঢোল পিটিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সেইসঙ্গে পালকিতে করে দুর্গা ঠাকুর কে আনা হতো।চতুর্থী থেকে দশমি পর্যন্ত চলত উৎসব।এই উৎসবে যোগ দিতে পরিবারের সদস্যসহ আশেপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষজন।এই পূজোয় যেমন নৈবেদ্য ফলমূল দেওয়া হতো তেমনি হতো কবি লড়াই,গান,সন্ধ্যা আরতি এবং বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হতো একসঙ্গে।এরই সঙ্গে সপ্তমী অষ্টমী নবমীতে বলি প্রথা ছিল।বিশেষ করে মহিষ বলি ও ছাগল বলি হতো এই পুজো উপলক্ষ্যে।কথিত আছে পঞ্চানন রায় এর হাত ধরে শুরু হওয়া এই পুজো আজও রায় বাড়ির দুর্গাপুজো নামে পরিচিত।তবে আগের মত জৌলুস আর আড়ম্বর আজ আর নেই কিন্তু পুজোর রীতি রিচুয়াল আজও রয়ে গেছে।তবে পূজোর স্থান পরিবর্তন করেছে বর্তমান প্রজন্ম।কারণ গত ১৩৪৯ সালে যখন বড় বিপর্যয় হয় সেই সময় সপ্তমীর দিনে এই রায় বাড়ির দুর্গা প্রতিমা চাপা পড়ে মারা যায় রায় বাড়ির বড় ছেলে বরেন্দ্রনাথ রায়।তার সঙ্গে মৃত্যু ঘটে বাড়ির কুলপুরোহিত এবং বেশ কিছু গরু ছাগল সহ পশুর।আর সেই আতঙ্কেই পুজোর স্থান পরিবর্তন করে এই রায় বাড়ি।
জকপুর থেকে তারা তড়িঘড়ি ছুটে আসে মেদিনীপুরের পাহাড়িপুর এলাকায়। এরই সঙ্গে বাদ দেওয়া হয় বরেন্দ্রনাথ রায়ের পরিবারদের সম্পর্ক।তাদেরকে বাদ দিয়েই পূজো চালু রাখে বাড়ির বর্তমান সদস্যরা।সেই পুজো প্রায় ৮১ বছর হয়ে আসছে এই পাহাড়ি পুরে।তবে সেই রীতি রিচুয়াল মেনে আজও বলি প্রথা হয়।প্রয়োজন মত ছাগল বলি এবং কুমড়ো সবজি বলি দেওয়া হয়।তবে বিলুপ্ত ঘটেছে মহিষ বলি।আজও মৃন্ময়ী মা চিন্ময়ী রূপে প্রকাশ ঘটে,সেই সঙ্গে সাবেকিয়ানার প্রতিমার সঙ্গে মন্ডপ সজ্জা হয় এবং আজও দশমীর দিন মায়ের বিসর্জন হয় নদীতে।তবে একসময় বাড়ির লোকের কাঁধে চেপে মায়ের বিসর্জন আজ বন্ধ হয়েছে পরিবারের লোকেদের বয়সের ভারে।তবে জৌলুষ কমলেও আড়ম্বর কমেনি এই রায় জমিদার বাড়ির পুজো।
এই বিষয়ে রায় বাড়ির বর্তমান সদস্য শিবনাথ রায় বলেন,”দাদুর আমল থেকে শুনেছি পঞ্চানন রায়ের হাত ধরে পুজোর সূত্রপাত হয়েছিল।তখন জমিদারি প্রথা ছিল এবং সেই ভাবেই পূজো হতো আমাদের এই রায় বাড়ির। কিন্তু ১৩৪৯ সালে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটে।সপ্তমীর দিন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমাদের প্রতিমা পড়ে গিয়ে বড় ছেলের মৃত্যু ঘটে।তারপর থেকে আমরা স্থান পরিবর্তন করেছি শুধু পুজোর জন্য।এখনো গতানুগতিক পুজো হয় তবে এখন আর প্রতিমাকে পরিবারের লোকেরা বয়সে ভারে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে পারেন না।লোকজন দিয়ে বিসর্জন হয় এবং বলিপ্রথা আজ ও রয়ে গেছে।