
নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মাতৃমার ঘটনায় ক্ষোভের আঁচ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের।রাজ্যের প্রশাসনের নিন্দা করার পাশাপাশি জেনারেল সেক্রেটারি সজল বিশ্বাস এক বিবৃতিতে বলেন, “ইলেকশনের সময় ইলেকশন বন্ডের মাধ্যমে জাল ওষুধকে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে,যার জন্যই এই অবস্থা রাজ্যের।আর যার জেরে মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও প্রসূতি মা দের।”
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার মাতৃমাতে পাঁচ প্রসূতির স্যালাইন দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।রোগীর পরিবারের অভিযোগ যে এই ৫ প্রসূতি কে যাদের বাচ্চা ডেলিভারি হয়ে গেছে তাদের এক্সপায়ার ই স্যালাইন সেই সঙ্গে চিকিৎসার অব্যবস্থার তারা অভিযোগ করেন।এই মর্মে তারা লিখিত অভিযোগ দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।যদিও এই ঘটনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই প্রসূতি মায়েরা।তাদেরকে দ্রুত আইসিইউ তে ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে।তড়িঘড়ি একটি টিম তৈরি করা হয় কিন্তু এই দিন সকালে মৃত্যু হয় এক প্রসূতির।যার ফলে ফের নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। যদিও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিরাট পুলিশ মোতায়েন করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ চত্বরে।

যদিও এই ঘটনায় রাজ্যের ১৩ জনের একটি টিম গঠন করা হয়েছে ইতিমধ্যে আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার তারা পরিদর্শন আসবেন মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।তবে মাতৃমার এই ঘটনায় এবার প্রতিবাদ জানালো সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম।এই ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারি সজল বিশ্বাস এক বিবৃতিতে বলেন,”মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে এক্সপায়ারি স্যালাইন দিতে যেয়ে রোগী অসুস্থ অসুস্থ আর ঘটনা এটা নতুন নয়।এর আগেও অন্যান্য জেলা-রাজ্যে ঘটেছে এই ধরনের ঘটনা,যা খুবই নিন্দনীয় এবং ভয়ংকর।পাশাপাশি তিনি এও বলেন এই ঘটনা আখছার ঘটেছে।কারণ এই ওষুধ এবং স্যালাইনের যে গুণগত পরিমাণ টেস্ট করার যে ল্যাবরেটরি তার সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল এই রাজ্যে। যার ফলে যেকোনো ওষুধ বা স্যালাইন সঠিক টেস্ট করে তার রেজাল্ট বেরোনোর আগে তা ব্যবহার করা হয়।

যার ফলেই এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চলছে।তিনি উদাহরণ টেনে কর্ণাটকের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন ওই কর্নাটকে এরকমই এক ঘটনার জেরে এই স্যালাইন কে ব্যান করেছে ওখানকার সরকার। কিন্তু এখানকার ড্রাগ কন্ট্রোল এবং সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। তিনি পাশাপাশি এই অভিযোগ করেন প্রশাসন এবং কিছু ড্রাগ ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেক্সাসের জন্য পুরোপুরি এই ধরনের ওষুধ এবং স্যালাইন ছেয়ে গেছে গোটা রাজ্যসহ দেশে।এরপর তিনি এই ওষুধ ব্যবসায়ীদের রমরমা প্রসঙ্গে বলেন ইলেকশনের সময় আমরা দেখেছি কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে কিভাবে ইলেকশন বন্ডের মাধ্যমে এই ভেজাল,জাল ওষুধগুলো পাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে।যে ওষুধগুলি বর্তমানে বাজারজাত হয়ে উঠেছে। সন্দীপ ঘোষ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন সন্দীপ ঘোষ ও এই এক্সপায়ারি মেডিসিন এবং জাল ওষুধের রমরমা করত যার জেরি মাশুল দিতে হচ্ছে এই সাধারণ প্রসূতি মা দের।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সীজারের পরপরই মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে পাঁচজন প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ।তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যুও ঘটেছে।বাকী চারজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।অভিযোগ উঠেছে মেয়াদ উত্তীর্ণ নিম্নমানের স্যালাইন ও ওষুধপত্র প্রয়োগ করার ফলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।বন্ধ হয়ে গিয়েছে রোগীদের প্রস্রাব নিঃসরন। চিকিৎসায় গাফিলতিরও অভিযোগ তুলেছেন রোগীর পরিজনেরা।এই ঘটনায় টনক নড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেরও।বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে আগামীকাল শনিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন বিভাগের ওএসডি ডাঃ আশিষ বিশ্বাস এবং ডিরেক্টর ডাঃ প্রসূন কুমার দাসের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসছেন।

এই প্রতিনিধিদলে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের একাধিক কর্তার পাশাপাশি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপকরাও থাকছেন।