নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
ন্যায়পাল নিয়োগ করা সত্ত্বেও ডিফল্টার হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয় মেদিনীপুরের প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের।যা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল সেই সময়ে।এক্ষেত্রে কারণ খুঁজতে তৎপর হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।অবশেষে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পুনরায় সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করল ইউজিসি,তাতে নাম বাদ গেল বিদ্যাসাগরের। যা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বিস্তারিত তথ্য দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী।
বিপ্লবী শহর পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্যতম প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় হল এই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু জেলা রাজ্যে নয় গোটা দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্তু ইউজিসির খাম খেয়ালি পনায় নষ্ট হল সম্মান। ঘটনাচক্রে জানা যায় গত জুন মাসে মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দেশের ১০৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সহ মোট ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়-কে ‘ডিফল্টার’ বা ‘খেলাপি’ চিহ্নিত করে নিজেদের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করে UGC।শুধু তাই নয়, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়।গত ২২ জুন সেই চিঠি হাতে পেয়ে ‘চক্ষু চড়ক গাছ’ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।সেই চিঠি হাতে পৌঁছনোর সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশ হতেই লজ্জায় পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।কার্যত কোনও ‘দোষ’ না করেও ‘শাস্তি’ হয়ে যায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের।এই কারণ খুঁজতে তৎপর হয় তারা।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য University Grants Commission (UGC) র ২০২৩-র গাইডলাইন আনুযায়ী,পড়ুয়াদের যে কোনও ধরনের অভিযোগ বা সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়
‘ন্যায়পাল'(Ombudsperson)নিয়োগ করেছে।
সেই গাইডলাইন অনুযায়ী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রফেসর অনিলাভ কবিরাজ কে ‘ন্যায়পাল’ (Ombudsperson) হিসেবে নিয়োগ করে। তার নেতৃত্বেই গঠিত কমিটিই সমস্ত সমস্যার সমাধান করেন।এরপরও UGC-র নির্দেশ মত নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যও জমা করা হয়।এরপর নড়ে চড়ে বসে ইউজিসি।গত ২ জুলাই UGC পুনরায় ডিফল্টার লিস্ট প্রকাশ করে তাতে দেখা যায় ৪৬-টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সহ নাম রয়েছে মাত্র ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের।সেই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বিদ্যাসাগরের। এরই সঙ্গে বাদ গেছে দেশের ৯৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।
এ বিষয়ে এদিনের সাংবাদিক বৈঠক করে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী।তিনি বলেন এই ভুলে বিদ্যাসাগরের চরম অসম্মান হলো।যা কখনো শুধরানো যাবে না।তবে আমরা সমস্ত রকম চিঠি দিয়ে এর উত্তর দিয়েছিলাম।কি কারণে ইউজিসি এই ধরনের ভুল করল তা বলতে পারব না। পাশাপাশি তিনি এও বলেন গত ২৯ আগস্ট আমরা ন্যায়পাল বা Ombudsperson নিয়োগ করি।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ন্যায়পাল’ হিসেবে অধ্যাপক অনিলাভ কবিরাজ ইউজিসি-র একটি অনলাইন মিটিংয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অংশও নিয়ে ছিলেন।এছাড়াও গত ২৮ জুন গুয়াহাটির একটি মিটিংয়ে আমার সঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যানের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়।তাঁকে জানাই ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় তৎপরতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি কিছুটা ব্যথিত সুরে বলেন স্বাভাবিকভাবেই তাই ইউজিসি-র এই ‘ভুল’-র জন্য সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সারা দেশের শিক্ষামহল হয়তো আমাদেরই ‘ভুল’ বুঝেছে,এটাই আমাদের ব্যথিত করেছে।