
নিজস্ব প্রতিনিধি,খড়গপুর:
কাল হলো ভিডিও লিক আউট হয়ে!শেষ পর্যন্ত মহিলা ঘটিত কারণে জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়ল এক সময়ের দোদণ্ড প্রতাপ,ডাকাবুকো নেতা সুশান্ত ঘোষ।পাশাপাশি জেলা সম্পাদক পদ খোয়ালেন তিনি,নতুন জেলা সম্পাদক হল বিজয় পাল। দুদিনের এই জেলা সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন সিপিআইএম রাজ্য
সম্পাদক মহম্মদ সেলিম,বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু,রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সহ বাম তাত্ত্বিক নেতারা।

অবশেষে জেলা কমিটি থেকে বাদ গেল একসময়ের দোদন্ড প্রতাপ নেতা তথা প্রাক্তন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ।কারণ যদিও সেই মহিলা ঘটিত ভিডিও ভাইরাল।এইদিন মোট৬৮ জনের কমিটি নিয়ে গঠিত জেলা কমিটিতে সুশান্তের ঠাঁই হলো না।পাশাপাশি জেলা সম্পাদক পদে তার জায়গায় হলেন দীর্ঘদিনের সিপিআইএম কর্মী নেতৃত্ব বিজয় পাল।যার জেরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বামেরা।মূলত গত ১২ ও ১৩ ই জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে আয়োজন করা হয়েছিল সিপিএমের ২৫ তম জেলা সম্মেলন। দুদিন ব্যাপী এই সম্মেলনের শেষ দিনে সর্বসম্মতিক্রমে ৬৮ জনের জেলা কমিটি গঠিত হয়।

এই সুশান্ত ঘোষ কে জেলা কমিটির সদস্য থেকে বাদ দেওয়া হয়।যদিও আরো দুজন এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।প্রথম দিনের সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন এই প্রাক্তন মন্ত্রী। সন্ধ্যে অব্দি তিনি ছিলেন সম্মেলনে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে তিনি ছিলেন গরহাজির।এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু,রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সহ বাম তাত্ত্বিক নেতারা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত বাম আমলে দীর্ঘদিন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী ছিলেন সিপিআইএমের ডাকা-বুকো নেতা সুশান্ত ঘোষ।এরপর রাজ্যে পালাবদলের পর তার বিরুদ্ধে কঙ্কাল কান্ডের অভিযোগ ওঠে। কঙ্কাল কান্ডের নায়ক হয়ে ওঠেন সুশান্ত ঘোষ।সেই ঘটনায় তিনি জেলও খাটেন। যদিও পার্টি তার সং ছাড়েনি।এরপর তাকে সুযোগ দিয়েছে ভোটে লড়ার জন্য।গত বিধানসভা ভোটে।তাকে প্রার্থী করা হয়েছিল সালবনি থেকে।তাতে তিনি হেরে যেতেও দল তাকে পুনরায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে। কিন্তু তারপর গত অগস্ট মাসে তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে সহবাসের অভিযোগ করেন এক মহিলা। একটি ভিডিও সে সময় বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।ওই ঘটনার কথা সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে লিখিত ভাবে জানান ওই মহিলা।ওই মহিলার অভিযোগ ছিল গত ২০০৬ সালে তৎকালীন মন্ত্রী সুশান্তের সঙ্গে পরিচয় হয়।

তিনি তাঁকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।সে জন্য এক দিন সুশান্ত ঘোষ তাঁকে বাড়িতে ডাকেন। বাড়িতে মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাঁর আরও অভিযোগ এর পর চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক বার তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন।এমনকি কাউকে সেই কথা না জানানোর জন্য তাঁকে হুমকি দেন বলে তার অভিযোগ।তাঁর বিয়ের পরেও প্রাক্তন মন্ত্রী তাঁকে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য করেন বলেও শোনা যায়।যদিও এই অভিযোগ পাওয়ার পর সুশান্ত ঘোষ কে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে আপতকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক করা হয় মেদিনীপুরের দীর্ঘদিনের কর্মী নেতৃত্ব বিজয় পাল কে।এরপর জেলা কমিটির সম্মেলনে পুরোপুরি দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় এই বিজয় পাল কে।যদিও সম্পাদক হিসেবে দাবীদার ছিলে মোট তিনজন।

এই সম্মেলনে পার্টির কয়েকজন গোপাল প্রামাণিক এবং কয়েক জন মেঘনাদ ভুইয়াঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ফলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে বামেরা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে হুগলির ডানকুনিতে রয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। এখন দেখার রাজ্য কমিটি থেকেও সুশান্ত বাদ পড়েন কি না?

যদি ওই বিষয়ে নব্য নির্বাচিত সিপিআইএম জেলা সম্পাদক বিজয় পাল বলেন,”এটা পুরোপুরি জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত।এখানে পার্টির সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।এখানে আমি কিছুই নেই।তবে জেলা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে তিনি বলেন শিল্প কলকারখানা বন্ধ সেগুলোকে চালু করা,ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান,স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রতিবাদ করা সেই সঙ্গে রুজি রোজগারের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান এই নব্য নির্বাচিত সম্পাদক।