
নিজস্ব প্রতিনিধি,গোপীবল্লভপুর:
গরীব এবং মধ্যবিত্ত মানুষের একমাত্র ভরসা ছিলো ডাক ঘরের সল্প সঞ্চয় প্রকল্প গুলি।কিন্তু এখন পোস্ট অফিসের নাম শুনলেই মানুষের মনে অনীহা দেখা দিচ্ছে।এইরকমই এক ঘটনা গোপীবল্লভপুরে। যদিও শেষ পর্যন্ত জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃক সমস্যা সমাধানের ফলে মাত্র ৪০ দিনেই টাকা পেলেন বৃদ্ধা।

ঘটনা ক্রমে জানা যায় ২০২১ সালে দুরারোগ্য ব্যাধিতে মৃত্যু হয়েছে ছেলে রবীন সিং এর।ছেলের নামে স্থানীয় তপসিয়া উপ ডাকঘরে কুড়ি হাজার টাকা মূল্যের একটি দুই বছরের স্থায়ী আমানত (টাইম ডিপোজিট) করা ছিলো।ছেলের মৃত্যুর পর ক্লেম করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি।পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বহুবার নানান কারনে ঘোরাতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া ব্লকের বেলডিহি গ্রামের সত্তরার্ধ বৃদ্ধা বনলতা সিং।বেলিয়াবেড়া ব্লকের “অধিকার মিত্র” রীতা দাস দত্ত বাড়ি বাড়ি আইনি সহায়তা এবং সচেতনতার কথা জানাতে গেলে বনলতা দেবী রীতা দাস কে বিষয়টি জানান।এরপর ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বনলতার সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করে তপসিয়া পোস্ট অফিসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে বনলতা দেবীর জমা করা সত্ত্বেও কোন সুরাহা না হওয়ায় “অধিকার মিত্র”রীতার দাসের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব তথা বিচারক সুক্তি সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানান বনলতা সিং।

বনলতা দেবীর সেই লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক একটি প্রী লিটিগেশান মামলা রুজু করেন।সেই নোটিস জারি করে তলব করা হয় উক্ত পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টারকে।এই মামলার প্রথম শুনানিতেই বিচারকের কাছে আরো কিছুটা সময় চেয়ে অনুরোধ জানান পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।দ্বিতীয় শুনানির আগেই পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার বনলতা দেবী কে তপসিয়া পোস্ট অফিসে ডেকে ক্লেমের সমস্ত টাকা বুঝিয়ে দেন।সেই ঘটনায় বনলতা সিং এর একাউন্টে জমা হয় ছেলের টিডি একাউন্টের ২৫৬৩০/- টাকা এবং সেভিংস একাউন্টের ৯৫৫৬/- টাকা। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দফ্তরে এসে সচিবকে ধন্যবাদ জানান এই বৃদ্ধা।বিচারক সুক্তি সরকার জানান সাধারণ মানুষকে আইনি সচেতন এবং আইনি সাহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা জেলা জুড়ে নানা ভাবেই কাজ করছি।আইনি যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সরাসরি কোন মাধ্যম ছাড়াই আমাদের অফিসে আসুন,আমরা আপনাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো।

ছেলের রেখে যাওয়া মোট ৩৫১৮৬/- টাকা পেয়ে খুশি বনলতা দেবী।বনলতা দেবী কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে,”জানান পোস্ট অফিস কতৃপক্ষ আমাকে নানান কারণে বহুদিন ধরেই ঘোরাতেই থাকেন।শেষে কোর্ট থেকে কাগজ আনতে বলেন।জীবনে আমি কোনদিনই কোর্ট দেখিনি।বাড়িতে অসুস্থ স্বামী এবং মেয়েকে নিয়ে থাকি।আমাদের পক্ষে কোর্টে গিয়ে ওইসব কাগজ আনা সম্ভব হয়ে উঠেনি।তাই ওই টাকা যে পাবো তা ভুলেই গিয়েছিলাম।হঠাৎ ই একদিন কোর্ট থেকে আমার বাড়িতে একটা মেয়ে এসেছিলো ওই মেয়ে আমাকে কোর্ট নিয়ে গিয়ে এবং সমস্ত কাগজ জোগাড় করে পোস্ট অফিসে জমা করা সত্ত্বেও পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ আমাকে আরো সময় লাগবে,সময় লাগবে বলেই যাচ্ছিলেন।

বাধ্য হয়ে বিচারকের কাছে এসেছিলাম , আমার চার বছরের সমস্যা বিচারকের কাছে আবেদন জানানোর চল্লিশ দিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে গেলো । ওই টাকা দিয়ে অসুস্থ স্বামীকে কিছুটা হলেও সুস্থ করতে পারবো।