
নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম :
পুলিশ পেট্রোলিং করার সময় জঙ্গলের রাস্তায় উদ্ধার হয়েছিল দুই নাবালিকা শবর কন্যা।নাবালিকা দুই শবর কন্যা নাম পরিচয় বলতে না পারায় তাদের ঠাঁই হয়েছিল হোমে।অবশেষে ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের প্যারালিগাল ভলেন্টিয়ার শ্যামল মিস্ত্রির হস্তক্ষেপে দুই নাবালিকা শবর কন্যা ফিরে পেল তার পরিবারকে।

ঘটনা চক্রে জানা যায় বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম মাজুগেড়িয়া।মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ভাটু শবর নিখোঁজ হয়ে যায় বহুদিন আগে।তার ৩ কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম হয়ে পড়েছিল মাজুগেড়িয়া গ্রামের সবর গৃহবধূ বুদলী শবর। বুদলি শবরের নিজস্ব ভিটাবাড়ি না থাকায় গ্রামের এক সহৃদয় ব্যক্তির বাড়িতে তারা থাকতো।তাই গ্রামের এক বাসিন্দা বুদলী শবর কে প্রস্তাব দিয়েছিল তার দুই কন্যা সন্তান শুকুরমনি ও সংক্রান্তি শবরকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিড়াকাটার এক আত্মীয়র বাড়িতে পাঠানোর জন্য।সেখানে তারা ভালো থাকবে ও পড়াশোনা করতে পারবে।সেইমত ২০১৮ সালে বুদলী শবর তার ২ নাবালিকা কন্যা সন্তানকে পিড়াকাটা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সেখানে তাদের মন না বসায় ভোর সকালে বাড়ি থেকে দু’বোন নিখোঁজ হয়ে যায়।

এরপর লালগড় থানার পুলিশ পিড়াকাটা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় পেট্রোলিং করছিলেন। পেট্রোলিং কালীন তারা দু’বোনকে দেখতে পায় এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।তারা তাদের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননি।তারপর পুলিশ তাদেরকে আদালতে পেশ করলে আদালতের নির্দেশে ২০১৮ সাল থেকেই মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হোমে ঠাঁই হয় তাদের।তারা সেখানেই পঠন পাঠানো শুরু করে। শুকুরমনি এখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ও সংক্রান্তি এখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।এর মধ্যেই ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিনপুর ২ নম্বর ব্লকের প্যারালিগাল ভলেন্টিয়ার শ্যামল মিস্ত্রি বাড়ি বাড়ি আইনি সচেতনতার সার্ভে করছিলেন।সার্ভে চলাকালীন তিনি জানতে পারেন মাজুগেড়িয়া গ্রামের অন্য এক নাবালিকার কাছ থেকে মাজুগেড়িয়া গ্রামের দু’জন নাবালিকা বিদ্যাসাগর হোমে রয়েছে।তারপরেই শ্যামল দুই নাবালিকার মা বুদলী শবরের সঙ্গে কথা বলে এবং বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন।শ্যামলের মাধ্যমে ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি মামলা ও রুজু করেন বুদলী শবর।তারপর প্রায় তিন মাসের মধ্যে সমস্ত আইনি জটিলতা কাটিয়ে বিদ্যাসাগর হোম থেকে নিয়ে আসেন ওই দুই শবর কন্যাকে।বুধবার ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব তথা বিচারক সুক্তি সরকার দুই শবর কন্যাকে তাদের দিদি বীরমূল শবরের হাতে তুলে দেন।

বীরমূল এদিন বলেন, “আমরা খুব গরীব মানুষ, আমাদের নিজের বাড়ি পর্যন্ত নেই। বোনেদেরকে মানুষ করার জন্য গ্রামের এক আত্মীয় তাদের আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন।তারপর আমরা তাদের আর খোঁজ নিতে পারিনি ।তারা এই অবস্থায় ছিল তাও ভাবতে পারিনি। আজ তাদের কাছে ফিরে পেয়ে খুব ভালো লাগছে “। এই বিষয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব সুক্তি সরকার বলেন,”বেলপাহাড়ির দুই শবর কন্যাকে সমস্ত আইনি জটিলতার সমাধান করে তাদের পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে”।