নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম:
দিনের পর দিন সরকারি প্রাইমারি স্কুলে কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা।অভিভাবকদের চাহিদা অনুযায়ী বেরকারি স্কুলের দিকেই ঝুঁকছে তারা।কিন্তু সেই জায়গায় ফেলে দেওয়া নানা সামগ্রী দিয়ে চলমান ব্লু টুথ স্পিকার, টুলু পাম্প,টেবিল ফ্যান, ইলেকট্রিক ভেজিটেবিল কাটার বানিয়ে এক বিরল নজির গড়ল জঙ্গলমহলের একটি প্রাইমারি স্কুল।তাদের এই ভাবনা চিন্তা দেখে শিক্ষকদের মত আগামী দিনের বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তাদের মধ্যেই।
জঙ্গলমহলের ছোট্ট একটি জেলা ঝাড়গ্রাম।ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের পড়িহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের গুইয়াড়া গ্রামে রয়েছে গুইয়াড়া নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠন হয়।মূলত এখানে নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরাই এই বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন করেন।এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে 72 জন পড়ুয়া রয়েছে।প্রধান শিক্ষক শেখ শাহারুপ হোসেন সহ মোট তিনজন শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয়টি পড়ুয়াদের মনোপযোগী করে তোলার জন্য দেওয়াল জুড়ে রয়েছে পশু পাখি থেকে শুরু করে, মনীষী ও বিজ্ঞানের নানা চিত্র।তবে শিক্ষকদের উদ্যোগে সিলে বাসের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিবছর বিদ্যালয়ে আয়োজিত হয় সাইন্স প্রজেক্ট।চলতি মাসে সাইন্স প্রোজেক্ট আয়োজিত হয় বিদ্যালয়ে।সাইন্স প্রজেক্ট এর দিন বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তাদের আবিষ্কার নিয়ে হাজির হয় বিদ্যালয়ে।যা দেখে রীতিমত ‘থ’ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।এইটুকু বয়সে ফেলে দেওয়া নানা সামগ্রী দিয়ে কিভাবে তারা তৈরি করল বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার।পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া তাপস পাল,চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া অনিমেষ গড়াই,তারাপদ পাল ও শ্যামাপদ পাল এই চারজনে মিলে তৈরি করেছে চলমান MP3 ব্লু টুথ স্পিকার।
যেখানে তারা ফেলে দেওয়া জুতোর খাপ, মোবাইলের খাপ ও সাইকেলের ব্রেক সু এর খাপ দিয়ে তিনটি বক্স বানায়।তার মধ্যে একটি টুইটার স্পিকার সহ মোট চারটি পুরনো স্পিকার দিয়ে তৈরি করে বক্স।MP3 ব্লু টুথ সার্কিট অনলাইনে অর্ডার দেয় তারা।সবগুলিকে সংযুক্ত করে এবং তার সঙ্গে চার্জার যুক্ত ব্যাটারি সংযোগ করে এবং পুরো সিস্টেমটিকে একটি কাঠের পাটার নিচে চাকা লাগানো একটি টানা গাড়ি বানিয়ে তার উপরে বসিয়ে দেয়।এই ভাবেই তারা বানিয়ে ফেলে চলমান ব্লু টুথ স্পিকার।বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রথমে দেখে কিছুই বুঝতে পারেনি।তারপর নিজের মোবাইলের সঙ্গে ব্লু টুথ কানেকশন করে গান বাজাতেই উপস্থিত সকলের অবাক হয়ে যান।পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া সুজন পাল ও চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া মোহন পাল এই দুজনে মিলে তৈরি করে ইলেকট্রিক ভেজিটেবিল কাটার।
একটি খালি কৌটো নিয়ে তার ঢাকনার উল্টোদিকে ছোট্ট একটি ফুটো করে।ঢাকনার উপরে ছোট্ট একটি মোটর লাগিয়ে দেয় এবং ফুটো দিয়ে মোটরের ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়ি কাটার ব্লেডকে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয় তারা।সঙ্গে মোবাইলের চার্জার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।বিদ্যুৎ সংযোগ দিতেই মিক্সিং গ্রাইন্ডার এর মত শব্দ করে চলতে শুরু করে ইলেকট্রিক ভেজিটেবিল কাটারটি।আর তার মধ্যে সবজি দিতেই কেটে কুচু কুচু করে দেয়।ঠিক এইভাবে ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া তাপস পাল টুলু পাম্প, দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া সায়ন পাল টেবিল ফ্যান, পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া সায়ন পাল চলমান টেবিল ফ্যান তৈরি করে বিজ্ঞান প্রজেক্টে নজর কাড়ে সকলের।
শহরের নামিদামি বিদ্যালয়গুলির তুলনায় জঙ্গল মহলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল তাদের এই আবিষ্কার। কেবলমাত্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সদিচ্ছা থাকলেই পড়ুয়াদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে এমনটাই দাবি সকলের।