নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম:
ধান জমিতে কৃষি কাজ করতে গিয়ে চন্দ্রবোড়ার ছোবল খেয়ে ভরসা করেছিল ওঝার উপর।অবশেষে হাসপাতালে গিয়েও প্রাণ রক্ষা হয়নি বহু গ্রামবাসীর।তাই এবার চন্দ্রবোড়ার হাত থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচাতে শক্তির দেবীর আরাধনায় পুজোর থিম “গ্রাম বাংলার আতঙ্ক রাসেল ভাইপার”।ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর থানার অন্তর্গত রাজপাড়া গ্রামের রাজপাড়া সবুজপল্লী জনকল্যাণ সংঘের কালীপুজোর এই বছরের ১৮ তম বর্ষে এই থিমের ভাবনায় মন্ডপ তৈরি করা হয়েছে।
মূলত এই পূজা মন্ডপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি পাহাড়কে জড়িয়ে রয়েছে বিশাল আকৃতির চন্দ্রবোড়া। পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক চন্দ্রবোড়া সাপ।চন্দ্রবোড়া মুখ দিয়ে মন্ডপে প্রবেশ করে প্রতিমা দর্শনের পর দর্শনার্থীদের বেরিয়ে আসতে হবে চন্দ্রবোড়ার লেজ দিয়ে।আর চন্দ্রবোড়ার পেটের ভিতরেই নানা থিমের আদলে চন্দ্রবোড়ার ছোবল থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচানো যায় এবং চন্দ্রবোড়ার ছোবল খেলে কি করণীয় তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রথমেই চোখে পড়বে কৃষি জমিতে অধিকমাত্রায় চন্দ্রবোড়া পাওয়া যায়।ফলে জমিতে কৃষি কাজ করতে গেলে গামবুট পরা একান্ত জরুরী,রাত্রে চলাফেলা করার সময় টর্চ লাইট ব্যবহার করা জরুরী।
এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তারপরেও যদি কাউকে চন্দ্রবোড়ায় ছোবল মারে যত দ্রুত ১০০ মিনিটের মধ্যে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।একটু মণ্ডপে ঢুকলেই চোখে পড়বে কুসংস্কার জেরে গুনিনের ও ওঝার কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।তারপর একটু ভেতরে গেলেই দেখা যাবে চন্দ্রবোড়ার ছোবলের পর গুনিনের উপর ভরসা করে মৃত্যু হয়েছে একজনের।তারপর প্রতিমা দর্শনের পর বেরিয়ে আসার পথে চোখে পড়বে চন্দ্রবোড়া ছোবল মারলে কোনোভাবেই ওখানে শক্ত করে বাঁধা যাবে না।যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে হবে।সবার শেষে দেখা যাবে একজনকে চন্দ্রবোড়া কামড়েছে তিনি সোজা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছেন।এই থিমের মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তাদের একটাই উদ্দেশ্য গ্রামবাসীদের কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখার আরজি জানানো।
পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের মধ্যে রাজকুমার সেনাপতি ও মলয় প্রতিহার বলেন,”আমাদের এই জঙ্গলমহলের লাল মাটিতে প্রচুর চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া যায়।প্রায়ই জমিতে কাজ করতে গিয়ে সাপের ছোবল খান বহু মানুষ।আমরা দেখেছি অনেকেই আজও গুনিন ও ওঝার উপর ভরসা করে তাদের কাছে চলে যায়।অবশেষে সেই মানুষটির মৃত্যু হয়।কিন্তু তার যদি জানা থাকে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে গেলে তার প্রাণ বাঁচতে পারে।আমাদের গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের ছয়,সাত জনের বিভিন্ন সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে।তাই গ্রামবাসীদের এবং দর্শনার্থীদের সাপের ছোবল থেকে কিভাবে প্রাণ বাঁচানো যায় সেজন্যই আমরা পূজা মন্ডপের এবছরে থিম রেখেছি গ্রাম বাংলার আতঙ্ক রাসেল ভাইপার”।
একটি তথ্য ও অনুযায়ী গত বছর ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে সাপের ছোবলে ৩৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।যদিও কিছু মহলের তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটি ৫০০ এরও বেশি।