নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা:
আর বরদাস্ত নয়,কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলেন তৃণমূল যুবরাজ।শনিবার তৃণমূলের প্রায় ৪,৫০০ নেতার সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই দলীয় নেতাদের শৃঙ্খলার পাঠ পড়িয়েছেন তিনি। ‘তোলাবাজি’ নিয়ে নির্দিষ্ট হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
২৬ এর ভোটের আগে এবার কড়া হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বৈঠক করে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন দলীয় কর্মী নেতৃত্বদের। তিনি হুঁশিয়ারিতে বলেন তাঁর দফতর বা পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের নাম করে কেউ ‘তোলাবাজি’ করলে বরদাস্ত করবেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।মূলত শনিবার তৃণমূলের প্রায় ৪,৫০০ নেতাকে নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।সেখানেই ভোটার তালিকা সংশোধন তথা ভুয়ো ভোটারমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় নেতাদের শৃঙ্খলার পাঠ পড়িয়েছেন তিনি।সারা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে শাসকদলের বিভিন্ন ছোট-বড়-মাঝারি নেতার নামে মাঝেমধ্যেই তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে। এই ‘ব্যাধি’ কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত সর্বত্রই ছড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এলাকার ‘মাতব্বর’ নেতারা ওই দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত থাকেন।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ওই মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।শনিবার সেই একই হুঁশিয়ারি দিলেন অভিষেকও।তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই ভার্চুয়াল সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অভিষেক জানিয়েছেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, ‘এবি’-র অফিস (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে দলের অন্দরে এই পরিচয়েই ডাকা হয়) এবং আই প্যাকের নাম করে অনেকে তোলাবাজি করছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ পেয়ে দলের তরফে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। অভিষেক সভায় জানান,আগামী দিনে যদি কারও বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ ভাবে টাকা তোলার অভিযোগ জমা পড়ে এবং তা প্রমাণিত হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে দল।
বস্তুত,এক ধাপ এগিয়ে অভিষেক ওই সভায় একটি হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর ঘোষণা করেন। ওই নম্বরটি জানিয়ে তিনি বলেন,কারও বিরুদ্ধে তোলাবাজি সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে যেন ওই নম্বরে সরাসরি হোয়াট্স অ্যাপ করে জানানো হয়। অভিযোগ জমা পড়লে প্রথমে তা খতিয়ে দেখা হবে দলের তরফে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট নেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। শাসক শিবিরের অন্দরের খবর, আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে অভিষেক ওই বিষয়ে আরও কঠোর হচ্ছেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের ময়দানে তৃণমূল নামবে ১৫ বছরের শাসনকালের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সঙ্গে নিয়ে। তার উপরে দলের কোনও স্তরের নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা দলের ভাবমূর্তির আরও ক্ষতি করবে।
তেমন কিছু যাতে না ঘটে, দলের নেতাদের তোলাবাজির অভিযোগ নিয়ে যাতে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে চান অভিষেক। তাই নতুন একটি হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর দিয়ে দলের সর্ব স্তরের নেতাদের প্রতি ‘সর্তকবার্তা’ পাঠিয়েছেন তিনি।প্রসঙ্গত, অভিষেকের দফতরকে সমস্যার কথা জানানোর জন্য আগে থেকেই একটি ‘হেল্পলাইন’ নম্বর চালু আছে। যেখানে রাজ্যের সর্ব স্তরের মানুষ তাঁদের অসুবিধা বা সমস্যার কথা জানাতে পারেন। অভিষেকের ওই হেল্পলাইন নম্বরটি পরিচিত ‘এক ডাকে অভিষেক’ নামে। কিন্তু দলীয় নেতাদের তোলাবাজি রুখতে অভিষেক পৃথক একটি ‘হেল্পলাইন’ নম্বর চালু করলেন। যা থেকে আরও স্পষ্ট যে, বিধানসভা ভোটের আগে ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষায় আরও কঠোর এবং যত্নবান হচ্ছেন অভিষেক।
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ‘অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি’ কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে অভিষেকের দফতরের নাম করে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। অভিষেকের দফতরের এক কর্মী ওই মর্মে শেক্সপিয়র সরণি থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। কারণ, ফিরহাদ-অভিষেক সম্পর্ক এমনিতেই ‘মধুর’। তবে মমতার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সেই বির্তক থামে। শনিবার দলের অভ্যন্তরীণ সভা থেকে দলের নেতাদের তোলাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ করে রাখলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।