
মেদিনীপুর 10 ই ডিসেম্বর:
এবার এমনি ড্রোনের নজরদারির পাশাপাশি হাতির নজরদারিতে চালু হলো থার্মাল ড্রোনের ব্যবহার।হাতি-মানুষ সংঘাত দূর করতে বদ্ধপরিকর বনদপ্তর। এবার তাই রাতের অন্ধকারেও হাতিদের গতিবিধি জানতে আনা হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। এর নাম দেওয়া হয়েছে, থার্মাল ড্রোন প্রযুক্তি। মেদিনীপুর, খড়্গপুর ডিভিশনে এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারেও হাতিদের গতিবিধি নজরে রাখা হবে। ড্রোন দিয়ে নজরদারির মাধ্যমেই লোকালয় থেকে হাতিদের ড্রাইভ করা হবে বা তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে গভীর জঙ্গলে।

সারা বছরের পাশাপাশি শীতকালে হাতির উৎপাত বেশি থাকে জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে। এই হাতিতে যেমন একদিকে মানুষের মৃত্যু ঘটে তেমনি আরেক দিকে হাতির ও মৃত্যু ঘটে।সেই সঙ্গে লোকালয়ে ঢুকে একাধিক ক্ষতি সাধন করে। ব্যাপক ক্ষতি করে চাষবাসে।এছাড়াও মাঝে মাঝে এই হাতি জেলা পেরিয়ে অন্য জেলায় চলে যায় এ ছাড়া অন্য জেলা থেকেও একা একা থেকে হাতি ঢুকে পড়ে এই জেলায়।এই পরিস্থিতিতে হুলা পার্টি বা বন দপ্তরের কর্মী দিয়ে নজরদারিতে খামতি রয়ে যাচ্ছে বনদপ্তরের।এই হাতি নজরদারিতে এর আগের ড্রোনের ব্যবহার করা হয়েছে।এবার রাতেও সেই নজরদারি চালাতে ব্যবহার করা শুরু হল থার্মাল ড্রোনের।গভীর অন্ধকার কিংবা ঘন কুয়াশার মধ্যে জঙ্গলে দৃশ্যমানতা কম থাকে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ থার্মাল ড্রোন টেকনোলজি ব্যবহার করে হাতির দলকে দ্রুত সনাক্ত করা যাবে।

এভাবেই গ্রামবাসীদের যেমন সতর্ক করা সম্ভব, ঠিক তেমনই বনদপ্তরও সঠিক সময়ে সঠিকভাবে হাতির দলকে জঙ্গলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই জঙ্গলের হাতি ঠাকুর পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দুয়ারে (বা, লোকালয়ে)। ফলে, ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ জঙ্গলমহলবাসীও। গত এক বছরে শুধুমাত্র মেদিনীপুর ডিভিশনেই কয়েকশো হেক্টর জমির ধান ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরে মেদিনীপুর বনবিভাগের অধীন বিভিন্ন এলাকায় হাতির হামলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও, হাতির হানায় জখম হয়েছেন ৪ জন। হাতি-মানুষের এই সংঘাত এড়াতে এর আগেও একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বনদপ্তর। তবে, সেগুলি ছিল দিনের আলোয়। অন্ধকার হলেই হাতিদের গতিবিধি আর বনদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকতনা, বেশিরভাগ সময়। ফলে হাতির দল হামলা চালাতো লোকালয়ে। এবার তাই রাতের অন্ধকারেও ‘থার্মাল ড্রোন প্রযুক্তি’-র মাধ্যমে হাতির গতিবিধি ট্র্যাক করা হবে।

এই বিষয়ে মেদিনীপুর বনবিভাগের DFO দীপক এম বলেন,”হাতি এবং মানুষের সংঘাত এই জঙ্গলমহল জুড়ে লেগে রয়েছে। তাছাড়া হাতের মৃত্যু ঘটেছে জঙ্গলমহলে এর আগে। কখনো কখনো অন্য জীবজন্তু ঢুকে পড়ে এই জেলায়। সেইসব ক্ষতিয়ে দেখতে আমাদের যেমন টিম রয়েছে তার পাশাপাশি আমরা ড্রোনের নজরদারি চালাই। কিন্তু তাতে সম্ভব হয়ে ওঠেনা।কারণ প্রচুর লোকের প্রয়োজন হয়। তাই এবার আমরা থার্মাল ড্রোনের ব্যবহার শুরু করেছি।এই ড্রোন দিয়ে রাতে আকাশপথে নজরদারি চালানো হবে।এর সুবিধে একদিকে যেমন হাতির গতিবিধি লক্ষ্য করা যাবে সেই সঙ্গে বাইরের জেলা থেকে হাতে ঢুকলে তাও জানা যাবে। পাশাপাশি কোনরকম ব্যবস্থা নিতে গেলে চটজলদি সুবিধেও হবে।

হাতির উপর নজরদারি তাই নয় জঙ্গলে চোরাচালান কারী হলেও সেটা দেখতে পাওয়া যাবে।এই ড্রোন টিতে ৩০-৪০ মিনিটের পাওয়ার ব্যাকআপ থাকছে যার ফলে দীর্ঘক্ষণ নজরদারি চালানো যাবে। তাছাড়াও অতিরিক্ত ব্যাটারি থাকছে। হাই রেজুলেশনের ছবি খুব উঁচু থেকেই নিতে সক্ষম এই ড্রোন ক্যামেরা।” আপাতত এক্সপার্ট দিয়ে ড্রোন চালানো হলেও বন দপ্তরের কর্মীদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।