lakshmi Puja:লক্ষ্মী নয়, আজ সরস্বতী পুজো! 163 বছর ধরে বংশ পরম্পরায় সাহা মন্ডল বাড়ির পুজোর স্পেশাল চাহিদা জিলেপি

Share

হাড়দা 6 ই অক্টোবর:

আজ সরস্বতী পুজো ! অবাক হচ্ছেন ? আজ যেখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা হবে,ঠিক সেই সময় সরস্বতীরও আরাধনা হবে।বেলপাহাড়ি ব্লকের হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়দা গ্রামে সাহা ও মন্ডল
পরিবারের একই সাথে লক্ষ্মী সরস্বতীর আরাধনা হয়ে আসছে ১৬৩ বছর ধরে।পূর্বপুরুষের হাত দিয়ে শুরু হওয়া পুজো আজও তার ঐতিহ্যের সঙ্গে অটুট রয়েছে ।

বেলপাহাড়ি ব্লকের হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়দা গ্রামে সাহা ও মণ্ডল পরিবারের উদ্যোগে এই পুজো হয়ে থাকে । কেবলমাত্র পুজো বললে ভুল বলা হবে । দূর্গা পূজার থেকেও বেশি আনন্দই মেতে উঠেন এই গ্রামের মানুষরা । ৫ দিন ধরে চলে পুজো আর পুজোকে কেন্দ্র করে ৭ দিন ধরে আয়োজন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের তার পাশাপাশি আরও বিশেষত্ব রয়েছে এখানকার জিলাপি । ২৫০ থেকে ৩০০ কুইন্টাল এরও বেশি জিলাপি বিক্রি হয় এই লক্ষ্মীপূজায় । হাড়দা শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কমিটির সম্পাদক তারাপদ সাহা বলেন,’ বিষ্ণু পুরাণ মতে নারায়ণের দুই স্ত্রী রয়েছে লক্ষ্মী ও সরস্বতী । তাই আমরা একজনকে ছেড়ে কিভাবে আরেকজনের পূজা করতে পারি । সে জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষের শুরু করা পুজো লক্ষ্মী সরস্বতীকে একসঙ্গে পুজো আজও আমরা করে চলেছি । এই বছর আমাদের পুজো ১৬৩ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে ।

এই পুজোকে কেন্দ্র করে আমরা আনন্দে মেতে উঠি । আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়-স্বজনরা আসেন পাঁচ দিন ধরে বাড়িতে থাকেন জমিয়ে খাওয়া দাওয়া এবং পুজোর আনন্দ উপভোগ করে আমরা সবাই মিলে । পুজোকে কেন্দ্র করে সাত দিন ধরে চলে নামিদামি শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রা’।এক চালাতেই পাশাপাশি থাকে লক্ষ্মী ও সরস্বতী। সরস্বতীর গায়ের রঙ সাদা ও লক্ষ্মী হালকা গোলাপী রঙের হয়। সঙ্গে থাকে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর দুই সখী লুক ও লুকানি । এবং তাঁদের দুই সেবক দাস ও দাসী । লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মাথার উপরে থাকে নারায়ণ । পুজোতে ফল মিষ্টান্নের পাশাপাশি ভোগে থাকে বেশনের তৈরি দরবেশ লাড্ডু।৬ ই অক্টোবর থেকে লক্ষ্মীপূজা শুরু হবে চলবে ১১ই অক্টোবর পর্যন্ত। এই পুজোর ঘট উত্তোলনের সময় বিশেষ আতশ বাজিরও প্রতিবছর ব্যবস্থা করে এই পুজো কমিটি। কিন্তু এই বছর টাতেও তারা পরিবর্তন এনেছে গ্রীন আতশবাজি ব্যবস্থা করেছে তাঁরা ।

লক্ষ্মী পূজার প্রাঙ্গণে কেবলমাত্র একটি জিলাপির দোকান থাকে । নিলামের মাধ্যমে সেই দোকান নিতে হয় ব্যবসায়ীকে । উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন এই বছর ২ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকায় নিলাম পেয়েছে হাড়দা গ্রামেরই বাসিন্দা সিন্টু সাহা । চাল গুড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় এই জিলাপি । জিলাপির স্বাদ সবার থেকে আলাদা । কড়া পাকের এই জিলাপি প্রায় একমাস টাটকা থাকে। প্রতিবছর ২৫০ থেকে ৩০০ কুইন্টাল জিলাপি বিক্রি হয় এখানে। আট থেকে দশ জন জিলাপি তৈরির কারিগর এক সঙ্গে জিলাপি তৈরি করেন। পুজো কমিটির সদস্য ভুবন মণ্ডল বলেন,’ দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের আত্মীয়দের এই জিলাপি পাঠানো হয়। সৌদি আরবেও কয়েকবার পাঠানো হয়েছিল এই জিলাপি।’হাড়দা লক্ষ্মীপুজো দেখার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার বহু মানুষের সমাগম হয় । উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন তাঁদের এবারের পুজোর বাজেট রয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা।

হাড়দা গ্রামের বসবাস করি ৫০০টি সাহা মণ্ডল পরিবারে এর থেকেই এই চাঁদা দেওয়া হয়। বাইরের কারো কাছ থেকে কোন প্রকার চাঁদা আদায় করা হয় না । জমির উপর, পেশার উপর চাঁদা ধার্য করা হয় নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে । পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিনপুর থানার পুলিশ।ঝাড়গ্রাম বেড়াতে পর্যটকরাও ভিড় জমায় হাড়দার লক্ষ্মীপুজো দেখার জন্য। বেলপাহাড়ি ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ বলেন,’ লক্ষ্মীপুজোর কয়েকটা দিন ঝাড়গ্রাম বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও কাছে হাড়দার লক্ষ্মীপুজো দর্শণীয় স্থান হয়ে ওঠে।

এই লক্ষ্মীপুজোর বিখ্যাত জিলাপি পর্যটকরা মন ভরে খাওয়ার পাশাপাশি বাড়িও নিয়ে যায়।


Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

dnews.in