
কুমোরপাড়া 12 ই অক্টোবর:
দীপাবলি আর দেওয়ালি পুতুল নিয়ে আর কয়েক দিন পরে মেতে উঠবে বাংলার বাঙালি।তবে টানা বৃষ্টি ও বারবার বন্যায় বিপর্যস্ত নানা জেলার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর।কোনক্রমে নস্টালজিয়া দেওয়ালি পুতুলের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে মেদিনীপুর শহরের কুমোর পাড়ার কুমোরারা।যদিও এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভাটি সালের পরিস্থিতি খারাপ। তার উপরে পুতুল তৈরি করতে গিয়ে বেজায় চটেছেন তারা। তবে এই নস্টালজিয়া পুতুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট হতাশাগ্রস্ত তারা।

বাংলার বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের আরেক পার্বণ হল দীপাবলি উৎসব।তবে এই দীপাবলীর অন্যতম আকর্ষণ হল পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ঝাড় গ্রামের দেওয়ালি পুতুল।মূলত এ দেওয়ালি পুতুল মাটির তৈরি করে তাকে পুড়িয়ে রং করে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির গড়ে তোলা হয়।আর সেই দেওয়ালি পুতুল তার নির্দিষ্ট নৈবেদ্য খই, মুড়িমুড়কি সহকারে দিয়ে পূজো করা হয় এ দীপাবলীর দু দিন।যদিও এই দেওয়ালি পুতুলের বিভিন্ন ভ্যারাইটি বিগত কাল ধরে হয়ে আসছে গোটা মেদিনীপুর জুড়ে।মেদিনীপুর শহরের কুমোর পাড়ার কুমোরেরা প্রতিবছর অপেক্ষা করে থাকেন এই দীপাবলিতে দেওয়ালি পুতুল গড়ার উদ্দেশ্যে।সারা বছরের তাদের যা ইনকাম হয় তার বেশিরভাগটাই এই দেওয়ালি পুতুলের উপরে নির্ভরশীল তারা।কিন্তু এবারে পরিস্থিতি আলাদা।

কারণ এবারে টানা বৃষ্টি এবং ৬ বারের এর বেশি বন্যায় বিপর্যস্ত অন্যান্য জেলার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর।বিশেষ করে এই পুতুল শুকানোর ভাটিশাল গুলো ভিজে রয়েছে। কুমোরদের অভিযোগ সামান্য ছিটেফোঁটা সরকারি সাহায্যে জোটেনি তাদের,জোটেনি একটি ত্রিপল পর্যন্ত। কিন্তু পেটের তাগিদে পুতুল তৈরি করতে হবে।কারণ বংশানুক্রমিক ধরে বা বংশ পরম্পরায় নস্টালজিয়া পুতুল আঁকড়ে রেখেছেন তারা।যদিও তারা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত।কারণ আগামী দিনে এইভাবে যদি টানা মাটি ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে এবং অপর্যাপ্ত হয় তাহলে এই নস্টালজিয়া পুতুল আদেও কি থাকবে বাংলা আর বাঙালির মধ্যে?এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে শিল্পী শিলা দাস,জ্যোৎস্না পাইনরা বলেন,”যেভাবে দিনের পর দিন মাটি বালি এবং রঙের দাম বাড়ছে সেই সঙ্গে এই টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে আমরা বিপর্যস্ত।না পেয়েছি সরকারি সাহায্য না পেয়েছি কোন ছিটে ফাটা ত্রিপল।কিন্তু রুজি রোজগারের টানে এই পুতুল আমরা গড়ে যাচ্ছি।জানি না এই পুতুলের ভবিষ্যৎ কি!তবে আমরা পুতুলের দাম বাড়ায়নি। বংশপরম্পরায় এই পুতুল আমরা করে চলছি। এবারের প্রতিকূল পরিস্থিতি যার জন্য পুতুল শুকোতেও দেরি হয়েছে।

একই মন্তব্য শিল্পী যোগেন্দ্র নাথ দাসের।তিনি বলেন আগে কারের মতন আর চাহিদা নেই।তবে নতুন প্রজন্ম আবার ফিরে আসছে সেই নস্টালজিয়া পুতুলে। যদি আমরা দাম বাড়াতে পারিনি।কারণ মানুষের কাছে দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করতে পারব না আমরা। জিনিসপত্রে যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে।এবছর টানা বৃষ্টিতে ভাটি সালে এখনো মাটি নরম এবং কর্দমাক্ত।কিছুতেই আগুন জ্বেলে গরম করা যাচ্ছে না। যার জেরে পুতুল তৈরিতে সমস্যা।