
মেদিনীপুর 14 ই অক্টোবর:
প্রয়াত দীপক সরকার, মেদিনীপুরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ টানা ২৩ বছর সামলেছেন সিপিআইএম-এর জেলা সম্পাদকের পদ। গতকাল গভীর রাতে তার মৃত্যু হয় বার্ধক্য জনিত কারণে।এদিন তার মরদেহ জেলা পার্টি অফিসে নিয়ে এলে সেখানে শ্রদ্ধা জানান মহম্মদ সেলিম সূর্যকান্ত মিশ্র সহ তার গুণ মুগ্ধকর মানুষজন। যদিও দীপক সরকারের দেহ এবং তার অঙ্গ দান করা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সোমবার গভীর রাতে মারা গেলেন অখন্ড মেদিনীপুরের একসময়ের বামেদের দোদন্ড্ প্রতাপ নেতা তথা অধ্যাপক দীপক সরকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।সোমবার রাত্রি ১১ টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরে বিধাননগরে নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হয়েছেন বর্ষীয়ান এই কমিউনিস্ট নেতা।দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। এদিন তার মৃত্যুর পর তার মরদেহ মেদিনীপুরের বিভিন্ন কলেজ সংঘ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিয়ে আসা হয় জেলা পার্টি অফিসে। সেখানেই তাকে শ্রদ্ধা জানান তার বাম নেতা-নেত্রীত্ব সঙ্গী সাথী কর্মী-সমর্থক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃত্বরা। শ্রদ্ধা জানান মহাম্মদ সেলিম ও সূর্যকান্ত মিশ্র সহ সুশান্ত ঘোষেরা।মূলত ১৯৯২ সাল থেকে টানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই সিপিআইএম নেতা।

২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন অখন্ড মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক। এরপর জেলা ভাগে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।তাঁর প্রয়াণে মেদিনীপুর জেলার রাজনীতির একটা যুগের অবসান হলো বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।সূত্র অনুযায়ী জানা যায় এক সময় মেদিনীপুর নির্মল হৃদয় আশ্রমের শিক্ষক ছিলেন দীপকবাবু। ১৯৬৩ সালে মেদিনীপুর কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। মাঝখানে কিছু বছর অধ্যাপনা করেন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর কলেজে। পরে ফের মেদিনীপুর কলেজে ফিরে আসেন।তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন।প্রয়াত সুকুমার সেনগুপ্তের হাত ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন অধ্যাপক দীপক সরকার। ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান৷ ১৯৬৮-তে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে প্রথম প্রতিনিধি হয়েছিলেন৷

এরপর ১৯৭১ সাল থেকে তিনি অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য৷ দলের সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার জন্য ১৯৮৪-তে অধ্যাপনা ছাড়েন৷ ১৯৮৫ থেকেই তিনি রাজ্য কমিটির সদস্য৷ ১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি অখন্ড মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন দীপক সরকার। তার সময়ে অখন্ড মেদিনীপুরে বামেদের একছত্র রাজত্ব ছিল। একদিকে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ কর্মী সমর্থক অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে একনায়ক তন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়। শোনা যায় এমন যে তিনি যে কথাটা হ্যাঁ বলে দিতেন তার ওপরে কথা বলার সাহস সেই সময় কোন নেতার ছিল না। সে সময় একের পর এক বাম নেতাকর্মীর মৃত্যুতে হার্মাদ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল সিপিআইএম।যদিও তারও একটা অংশের দায়িত্বে ছিলেন তিনি বলে জানা যায়।

এমনও শোনা যায়, কোন বিষয়ে তার কাছে জানতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো খোদ সাংবাদিকদের। তার সময় তিনি খেলাধুলার প্রতি বিশেষ উদ্যোগী হয়ে তিনি স্পোর্টস কমপ্লেক্স চালু করেছিলেন। এরই সঙ্গে তিনি মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মানুষকে স্বাস্থ্য পরিসেবা দেওয়ার জন্য শুরু করেছিলেন প্যারা মেডিকেল।মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট অব হেলথ (প্যারামেডিক্যাল কলেজ), শহীদ ক্ষুদিরাম পরিকল্পনা ভবন, মেদিনীপুর স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমি গড়ে ওঠার নেপথ্য কারিগর ছিলেন দীপকবাবু।তার নামে যদিও একাধিক অভিযোগও রয়েছে বহু মানুষের কিন্তু তবু তিনি ছিলেন মেদিনীপুরের স্যার।

যদিও ক্ষমতা চলে যাবার পর তার পার্টি অফিসের পেছনে কঙ্কাল কান্ডে পাওয়া যাওয়ায় নাম জড়িয়েছিল এই দীপক সরকারের কিন্তু পরবর্তীকালে তার ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর কিছুটা এক ঘর হয়ে পড়েছিলেন এই বাম জেলা সম্পাদক।২০১৫ সালে, পার্টির নিয়ম মেনে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তবে তিনি প্রায় পার্টি অফিসে আসতেন খোঁজখবর নিতেন এবং পার্টির সক্রিয় কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।তবে, ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ছিলেন দীপকবাবু।

এদিন মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মহম্মদ সেলিম বলেন এ অপুরনীয় ক্ষতি ।তবে কালের নিয়মে সবাই কেই চলে যেতে হবে। শ্রদ্ধা রইল কমরেডের প্রতি। অন্যদিকে বাম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন একসময় অখণ্ড মেদিনীপুরের সাথী ছিলেন এই দীপক সরকার তার আমলে বামেরা সবচেয়ে বেশি দক্ষতা লাভ করেছিল জেলায়। তিনি রাজনীতিতে ছিলেন সুদক্ষ একজন রাজনীতিবিদ। সঙ্গীর প্রতি রইলো শ্রদ্ধা।