
কাঁথকালী 15 ই অক্টোবর:
মেদিনীপুর শহরে জেলার আনাচে-কানাচে রয়েছে অনেক জাগ্রত কালী মায়ের কাহিনী। এরকমই এক কাহিনী হলেও শহরের বুকে কাঁথকালীর কাহিনী। কথিত আছে, 400 বছর ধরে দেওয়ালে অর্থাৎ কাঁথে অবস্থান করেন দেবী কালী। তাই এর নাম কাঁথকালী। ফল-মূল নৈবেদ্যের সঙ্গে ছাগ বলির আয়োজন হয় মায়ের পুজোয়।

বিপ্লবী ও ঐতিহাসিক শহর মেদিনীপুরের এক অন্যতম এলাকায় হিসেবে পরিচিত শহরের কেন্দ্রবিন্দু কাঁথকালী। সবাই এখানে কালী ঠাকুরের নাম হিসেবে এলাকার নাম দিয়েছেন তৎকালীন। কেনই নাম তা খুঁজতে গিয়ে জানা যায় প্রায় ৪০০ বছর আগে যখন মেদিনীপুর শহরে এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে বিস্তৃত।তখন ডাকাতরা এখানে বসবাস করত।সমস্ত চুরি ডাকাতি করা সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা হতো এখানে এবং তারা এই কালীপুজো করতেন। কথিত আছে কলকাতার কোন এক ব্যবসায়ী নানা রকম সমস্যা জর্জরিত হয়ে পড়েন।পরিবারের লোকের অসুস্থতায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।তখন তিনি স্বপ্নাদেশ পান এই মা কাঁথকালীর।স্বপ্নে তাকে জাগ্রত মা বলেন এখানে তিনি বসবাস করেছেন।এখানে এসে তাকে পুজো দিয়ে যেতে তবেই তার সমস্যা দূর হবে।

সেই কথা মত সেই ব্যবসায়ী খুঁজে খুঁজে এই জঙ্গলে আসেন এবং এখানে এসে তিনি একটি স্বস্তিক চিহ্ন এবং একটি খড়গ চিহ্ন খুঁজে পান।এরপর তিনি ভক্তি ভরে পূজো দেন এবং সমস্যার সমাধান পান।পরবর্তীকালে এলাকার লোকের সঙ্গে তিনি পরিচিত করান এবং এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আবার কেউ কেউ বলেন কোনও এক সময় এই মাটির দেওয়ালেই এক সাধু এই কাঁথকালী পুজো শুরু করেন।তৎকালীন সময় থেকেই এই মা কাঁথকালীরপুজো হয়ে আসছে সাড়ম্বরে। পুজোর বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে বলা যায় এই কাঁথকালী কাঁথে বা দেওয়ালে অবস্থান করেন।কখনো এই ঠাকুরের বিসর্জন হয় না।প্রতিবছরই মায়ের রং হয় পোশাক পরিচ্ছদ চেঞ্জ হয় এবং পুজো হয়।ফল-মূল নৈবেদ্যের সঙ্গে ছাগ বলির আয়োজন হয় মায়ের পুজোয়। বিভিন্ন মনস্কামনা নিয়ে দূর-দূরান্তের মানুষ ছুটে আসে এই কালী মায়ের কাছে এবং সফল হয়ে তারা মন্দির থেকে ফিরে যান।

একটি বৃহৎ গাছের আকঁড়ে থাকা দেওয়ালে এই কালীপুজোর সূচনা তার হাত ধরেই চলছিল। পরবর্তী কালে হাত পরিবর্তন হতে হতে এই কালীপুজো এখন পরিচালনা করেন এলাকার মানুষ কমিটির মাধ্যমে।এই কালীর বিসর্জনও হয় না। তবে কালী পুজোর পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে গোটা শহর পরিক্রমা করে। ঢাক-ঢোল বাদ্যি সহকারে সেই পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করেন শহরের মানুষ।মূলত তান্ত্রিক মতে পুজো হন মা নিজেই। প্রায় 2 কুইন্টালের উপর মায়ের ভোগ হয়। তার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ভোগ গৃহ।

এ বিষয়ে এখানকার কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুমঞ্জিৎ দে বলেন,”এক সময় জঙ্গল ছিল এলাকা,ডাকাতরা বসবাস করত তারা কালী মায়ের তন্ত্রসাধনা করতেন। পরবর্তী কালে এক সাধু এই পুজো সূচনা করেন আবার কেউ কেউ বলে থাকেন কলকাতার এক ব্যবসায়ী নিজের দুরবস্থায় পড়ে এসে এই পুজো শুরু করেছিলেন। তবে আজও স্বমহিমায় এই পুজো চলছে। প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ অন্নকূট গ্রহণ করে থাকেন এই পুজো উপলক্ষে।

অন্যদিকে যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তী,কমল কৃষ্ণ নাগ’রা বলেন,”মায়ের মাহাত্ম্য অনেক। আমাদের এই পুজো তান্ত্রিক মতে হয়। সেই সময় গোটা এলাকা জঙ্গল ছিল। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী স্বস্তিক চিহ্ন ও খড়গ চিহ্ন পেয়েছিল এখান থেকে।তারপর থেকেই শুরু হয়েছে পুজোর প্রচলন।

আমাদের কালী মায়ের কোন বিসর্জন হয় না। একটি বৃহৎ অশ্বত্থ গাছকে আঁকড়ে ধরে আজও মা ঝুলে রয়েছেন এই কাঁথে-ই। যদিও সেই থেকে এলাকার নাম হয়েছে কাঁথকালী এলাকা।